বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

সরকারি খরচে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীর হেলিকপ্টার বিলাস

প্রকাশিতঃ ৭ মে ২০১৮ | ৩:২২ অপরাহ্ন

চট্টগ্রাম : পৌনে তিন ঘণ্টার সরকারি সফরে রাষ্ট্রায়াত্ত ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেডের একটি অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দিতে ঢাকা থেকে হেলিকপ্টারে চড়ে চট্টগ্রামে আসলেন বিদ্যুৎ, জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু এমপি।

সোমবার বেলা পৌনে ১ টার দিকে মন্ত্রীকে বহনকারী হেলিকপ্টারটি চট্টগ্রামের এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে অবতরণ করে। এসময় প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন তাঁর ব্যক্তিগত সহকারি ও ফটোগ্রাফার। প্রতিমন্ত্রীকে স্বাগত জানাতে উপস্থিত ছিলেন ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেডের কর্মকর্তাবৃন্দ।

উল্লেখ্য, গত ৬ মে রোববার রাতে ‘হেলিকপ্টারে চট্টগ্রামে আসছেন বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হলে আজ বিভিন্ন গণমাধ্যমের ফটো সাংবাদিকরা এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে মন্ত্রীর অবতরণের দৃশ্য ধারণের জন্য ভিড় করেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্টেডিয়ামে যাওয়া এক কর্মকর্তা জানান, এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে হেলিকপ্টার অবতরণের পর সাংবাদিকদের দেখে বিষয়টি ভালো ভাবে নেননি প্রতিমন্ত্রী। এসময় তিনি ফটো সাংবাদিকদের পাশ কাটাতে তারা যে পাশে অবস্থান নিয়েছিলো তার উল্টো পাশ দিয়ে হেলিকপ্টার থেকে নামেন। এমন কি উপস্থিত সাংবাদিকদের কেন এসেছেন তা জানতে চান।
জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু একজন ফটো সাংবাদিককে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘এই তুমি কে? এরা কারা? এখানে কেন এসেছ?’ এসময় ওই ফটো সাংবাদিক নিজেদের সাংবাদিক পরিচয় দেন মন্ত্রীকে।

এদিকে, মাত্র পৌনে তিন ঘণ্টার সফরে রাষ্ট্রের এত বিপুল টাকা খরচ করে হেলিকপ্টারে চড়ে চট্টগ্রাম আসাকে ভালোভাবে নেননি চট্টগ্রামের সচেতন মানুষ।

স্টেডিয়ামের বাইরে মন্ত্রীকে দেখতে আসা এক ব্যক্তি বলেন, ‘ঢাকা থেকে সড়ক পথে চট্টগ্রামে আসা এখন অনেক সহজ, এ ছাড়া বিমানে আসলেও সময় তেমন লাগে না। কিন্তু এত অল্প সময়ের জন্য মন্ত্রীকে হেলিকপ্টারে চড়ে চট্টগ্রাম আসতে হবে কেন? রাষ্ট্রের কি টাকা খরচ করার আর কোনো জায়গা নেই?’

জামাল হোসেন নামে অপরজন বলেন,’ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম আসা-যাওয়ায় প্লেন ভাড়া হিসেবে খরচ হয় সাত থেকে আট হাজার টাকা। কিন্তু যে কোনো বেসরকারি সংস্থার হেলিকপ্টারে চড়ে শুধু আসা-যাওয়া করতে গেলে অন্তত দুই লাখ টাকার প্রয়োজন।’

শাহ আমানত বিমানবন্দর সূত্র জানায়, বর্তমানে প্রতি ঘণ্টার জন্য হেলিকপ্টার ভাড়া লাগে প্রায় ৬০ হাজার টাকা। সে হিসেবে মন্ত্রীর হেলিকপ্টারে চড়ে চট্টগ্রাম আসা-যাওয়া এবং অবস্থান বাবত খরচ পড়ছে প্রায় ৩ লাখ টাকা।’

এর আগে গতকাল প্রতিমন্ত্রীর একান্ত সচিব স্বাক্ষরিত এক সরকারি অফিস আদেশে বলা হয়, সকাল ১১টায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের অভ্যন্তরীণ টার্মিনালে আসবেন সড়ক পথে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী। এরপর সেখান থেকে ১২টার দিকে চট্টগ্রামের এম এ আজিজ স্টেডিয়ামের উদ্দেশ্যে মন্ত্রীকে বহনকারী হেলিকপ্টারটি উড়াল দেবে।

দুপুর পৌনে ১২টার দিকে এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে উপস্থিত হওয়ার পর ১টা ১৫ মিনিটে কাজীর দেউড়িস্থ ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারে ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেডের একটি অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেবেন তিনি। এরপর বিকাল ৩টা ৩০ মিনিটে এম এ আজিজ স্টেডিয়াম থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে হেলিকপ্টার যোগে রওনা দেবেন বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী। ৪টা ১৫ মিনিটে ঢাকা বিমান বন্দরে উপস্থিত হওয়ার পর সাড়ে ৪টার দিকে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দেওয়ার কথা রয়েছে সরকারি এই সফরসূচীতে।

প্রসঙ্গত, নসরুল হামিদ বিপু বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দুই বারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য। তিনি ঢাকা ৩ (কেরানীগঞ্জ) থেকে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয় লাভ করেন। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ সরকার এর বিদ্যুৎ, জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রনালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
একুশে/এএ/এডি/এটি