শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

প্রতিবন্ধীদের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছে সীতাকুণ্ডের অটিস্টিক স্কুল

প্রকাশিতঃ ২১ মে ২০১৮ | ৩:৫৬ অপরাহ্ন

মোঃ ইমরান হোসেন, সীতাকুণ্ড : প্রতিবন্ধী শিশুদের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছে চট্টগ্রাম জেলার সীতাকুণ্ডের অটিস্টিক বিদ্যালয়গুলো। ‘শিক্ষা সবার জন্য’ এই স্লোগান নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে বিদ্যালয়গুলো। বিদ্যালয়গুলোতে দেখা গেছে প্রতিবন্ধী শিশুদের সরব উপস্থিতি।

সরেজমিনে সীতাকুণ্ড পৌরসভার শিবপুর রান ডেভেলপমেন্ট সোসাইটি জালাল আহম্মদ (ক্যাশিয়ার) অটিস্টিক প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিবন্ধী শিশুদের শিক্ষাদানে নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন ওই স্কুলের ১১ জন শিক্ষক। প্রতিবন্ধী শিশুরা সাধারণ শিশুদের মত সহজে কিছু বুঝে উঠতে সক্ষম না, তাই প্রতিটি শিক্ষক অনেকক্ষণ সময় নিয়ে তাদের পড়াশুনা চালিয়ে যাচ্ছেন। পড়ালেখার প্রতি প্রতিবন্ধী শিশুদের আগ্রহও রয়েছে প্রচুর। তা তাদের দেখেই বুঝা গেছে। অভিভাবকরাও তাদের সন্তানদের পড়াশুনায় উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছে। প্রতিটি প্রতিবন্ধী শিশুর সাথে একজন করে অভিভাবক প্রতিদিন উপস্থিত থাকেন। যাতে করে তাদের সন্তানরা কোন রকম দুষ্টামি বা ভিন্ন দিকে মন না দেয়।

সরেজমিনে বেশ কিছু সময় উপস্থিত থেকেও বোঝা যায়নি যে তারা আসলে প্রতিবন্ধী। কারণ যেভাবে শিক্ষকরা ছাত্রদের সাথে বন্ধুত্বসুলভ আচরণ করে শিক্ষাদান করছে ঠিক ছাত্ররাও একই রকম আচরণ করছে শিক্ষকদের সঙ্গে।

বিদ্যালয়সূত্রে জানা যায়, বিদ্যালয়টিতে সীতাকুণ্ড পৌরসভা ছাড়াও পার্শবর্তী মুরাদপুর, সৈয়দপুর ইউনিয়ন থেকে ছাত্রছাত্রীরা ভর্তি হয়েছে।

কথা হয় সিরাজউদ্দৌলা নামে এক অভিভাবকের সঙ্গে। তিনি বলেন, আমাদের সন্তানরা প্রতিবন্ধী হয়েও যেন শিক্ষা থেকে বঞ্চিত না হয়। সেজন্য আমাদের সন্তানদের এখানে ভর্তি করিয়েছি। এখানে পরিবেশ খুব ভাল, শিক্ষার মানও খুব ভালো। যেভাবে কয়েকজন শিক্ষক নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছে তাতে আমরা মুগ্ধ। আমি বলব এলাকা এবং এলাকার বাইরে থাকা প্রতিবন্ধী শিশুরা যেন তাদের সন্তানকে অটিস্টিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করিয়ে তাদেরও যেন শিক্ষা নিশ্চিত করে।

নাছির নামে আরেক অভিভাবক বলেন, আমাদের সন্তানরা এতদিন শিক্ষা থেকে বঞ্চিত ছিল। এখন আমাদের সন্তানরাও শিক্ষা নিয়ে বড় হবে। এজন্য ধন্যবাদ জানাই বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা কাউন্সিলর জুলফিকার মাসুদ শামীমকে।

জানা যায়, অটিজম নিয়ে জাতিসংঘের সর্বশেষ গবেষণা জরিপে বলা হয় প্রতি ৬৮ জনের ১ জন অটিজম সম্পর্কিত রোগে আক্রান্ত। বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ১% অটিজম নিয়ে বড় হচ্ছে। এর সিংহভাগ শিশু।

তবে আশার বাণী হচ্ছে দেশে অটিজম এখন আর অভিশাপ নয়। কারণ অটিজম নিয়ে কাজ করছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুল।

শিবপুর রান ডেভেলপমেন্ট সোসাইটি জালাল আহম্মদ (ক্যাশিয়ার) অটিস্টিক প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তপন জানান, আমরা আমাদের সর্বোচ্ছটা দিয়ে শিক্ষাদান কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। বিদ্যালয়ের মোট ছাত্র/ছাত্রীর সংখ্যা ১৩৪জন। তারমধ্যে প্রতিদিন ক্লাস করছে ৫০ জন। শিক্ষক রয়েছে ১১ জন। অবশ্যই ছাত্র/ছাত্রীর সংখ্যা বাড়লে শিক্ষকও আরো বাড়বে। শিক্ষাকার্যক্রম রোজা উপলক্ষে ক্লাশ শুরু হয় ১১টা থেকে চলে ৩টা পর্যন্ত। রোজা ছাড়া ক্লাশের সময় ১০টা থেকে ২টা পর্যন্ত। তিনি আরো বলেন, এই বিদ্যালয়ে ভর্তি হতে কোনো সময় নির্ধারণ নেই। কেউ চাইলে যে কোনো সময় ভর্তি হতে পারবে।

বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা ও সীতাকুণ্ড পৌরসভার সাবেক প্যানেল মেয়র, বর্তমান ৯ নং ওয়ার্ড শিবপুরের কাউন্সিলর জুলফিকার আলী মাসুদ শামীম জানান, প্রতিষ্ঠানটি শুরু থেকে চেষ্টা করছি প্রতিবন্ধীরা যেন অন্য সবার মত শিক্ষিত হয়। বিদ্যালয়ের ছাত্র/ছাত্রীদের যাতায়াতের জন্য ২টি অটোরিক্সা (সিএনজি), দুপুরের টিপিন, পড়ালেখার শুরু করতে ভর্তিসহ যাবতীয় সব খরচ আমি বহন করছি। প্রতিবন্ধী ছাত্রছাত্রীদের এই বিদ্যালয়ে পড়ালেখা করতে কোনরকম টাকা খরচ হয় না, সম্পূর্ণ ফ্রি। বিদ্যালয়ের যাবতীয় সব রকম খরচ আমি ব্যক্তিগতভাবে বহন করছি।

একুশে/ইএইচ/এটি