শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

আনোয়ারায় বেড়িবাঁধ নির্মাণ-প্রকল্পে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ

প্রকাশিতঃ ১২ নভেম্বর ২০১৯ | ১১:১৮ অপরাহ্ন

আনোয়ারা প্রতিনিধি : আনোয়ারা উপজেলার রায়পুর ইউনিয়নের পরুয়াপাড়া বাতিঘরে ১৫০ মিটার, পিচের মাথায় ৪০০ মিটার বেড়িবাঁধ নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়ন কাজে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। কাজ সম্পন্ন হওয়ার পর পরই বেড়িবাঁধের একাংশ ধসে যাওয়ায় নদীর তীরবর্তী বসবাসকারীরা আতংকিত হয়ে পড়েছেন। যে কোনো মুহূর্তে বাঁধটি সম্পূর্ণ ধসে গিয়ে প্লাবিত হওয়ার আশংকা করছেন এলাকাবাসী। 

চট্টগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)-১-এর অধীনে বঙ্গোপসাগর ও শঙ্খনদীর ভাঙন প্রতিরোধে গত ২০১৭ সালের নভেম্বরে উপজেলার হাইলধর থেকে পরুয়াপাড়া বাতিঘর পর্যন্ত এলাকার ঝুঁকিপূর্ণ অংশে ব্লক,  ব্লক ম্যাসিং, ডাম্পিং এবং জিও ব্যাগ ডাম্পিং-এর কাজ শুরু করা হয়। এরমধ্যে হাইলধর ইউনিয়নের ফকিরহাটে ১৩৪৫ মিটার ও তৈলারদ্বীপে ৫০০ মিটার, জুঁইদন্ডী ইউনিয়নের খুরুসকুল গোদারপাড়ে ৫১০ মিটার ও লামার বাজার এলাকায় ১ কিলোমিটার।

গত ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ২৮০ কোটি টাকার এ প্রকল্পের কাজ খুড়িয়ে খুড়িয়ে ২০১৯ সালের জুন মাসে শেষ হয়। ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে সেন্ট সিমেন্ট (বালু সিমেন্ট মিশ্রিত) জিও ফিল্টার তৈরি করে বলে অভিযোগ করেছেন এলাকাবাসী।

স্থানীয়রা জানান, উপকূল রক্ষার দাবি আনোয়ারাবাসীর দীর্ঘদিনের। সরকারের মহতী উদ্যোগের কারণে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে সে স্বপ্ন পূরণ হচ্ছে। কিন্তু নজরদারির অভাবে সাব ঠিকাদাররা ব্লক তৈরিতে নানা অনিয়ম করছেন। ফলে দীর্ঘমেয়াদি সুফল থেকে বঞ্চিত হয়েছেন এই অঞ্চলের মানুষের।

জুঁইদন্ডী গ্রামের সাদ্দাম হোসেন জানান, লামার বাজার এক কিলোমিটার অংশে শঙ্খের কালো বালু ব্যবহার করা হয়েছে। এ নিয়ে স্থানীয়রা কয়েক দফা প্রতিবাদ করেও অনিয়ম বন্ধ করতে পারেনি।

বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, প্যাকেজ ভিত্তিক বিশাল এই কর্মযজ্ঞের কাজ পায় কুমিল্লার মেসার্স মশিউর রহমান, ঢাকার এসএ-এসআই এন্ড ইসরাত এন্টারপ্রাইজ, এমজেআর এন্ড এএস, চট্টগ্রামের মোহাম্মদ ইউনুস এন্ড ব্রাদার্স, তাহের ব্রাদার্স ও নুর সিন্ডিকেট, ফেনীর এস-এএএসসহ বেশ কয়েকটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। নিজ নিজ নামে কাজ পেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো স্থানীয় বিভিন্ন সাব ঠিকাদার দিয়ে ব্লক তৈরির কাজ করছে। স্থানীয় সাব ঠিকাদাররা ব্লক তৈরিতে সরকারের বেঁধে দেয়া নিয়মের তোয়াক্কা না করে স্থানীয় বালু, নিম্নমানের পাথর ব্যবহার করছেন। এতে প্রকল্পের গুণগত মান নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

সরেজমিন দেখা যায়, ব্লক তৈরিতে ব্যবহার হয়েছে নিম্নমানের সামগ্রী। ব্লক তৈরিতে যেখানে ব্যবহার করার কথা উন্নতমানের কালো পাথর, সাদা বালু, সিলিকন বালু ও সিমেন্ট, সেখানে ব্যবহার করা হয়েছে শঙ্খের বালু। আর কালো পাথরের সাথে মেশানো হয়েছে লাল পাথর (মরা পাথর)। উপকরণ মিশ্রণে সিমেন্টের পরিমাণ ছিল অনেক কম। যার কারণে বছর না পেরোতেই রায়পুর ইউনিয়নের পরুয়াপাড়া বাতিঘরে ১৫০ মিটার বেড়িবাঁধ ভাঙনের কবলে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আনোয়ারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ জুবায়ের আহমদ একুশে পত্রিকাকে জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ড-এর অধীনে বিভিন্ন ঠিকাদারী কোম্পানি প্রকল্পের কাজটি করেছে। সম্ভবত এখনো এই প্রকল্পের কাজ বুঝিয়ে দেয়নি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানগুলো । এ ব্যাপারে তিনি পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলার পরামর্শ দেন।

এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ড-১ এর প্রকৌশলী বিদ্যুত কুমার সাহা জানান, প্রকল্পটির কাজ ডিসেম্বর ২০১৮ এ শেষ করার কথা থাকলে বৈরি মৌসুমের কারণে কাজটি একটু পিছিয়ে গেছে। তাছাড়া এই প্রকল্পের ঠিকাদারি গ্রুপও কী করবে, বেড়িবাঁধ হলে তা ভাঙবে, তারপরও আমরা এখনো পেমেন্ট করিনি।

কাজের মান নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কাজের মান ঠিক আছে, আমরা তদারকি করেছি। কাজের মান ভাল থাকলে এক বছরের মাথায় ভাঙন কেন- প্রশ্নটি তিনি কৌশলে এড়িয়ে যান এবং তাঁর অধীনস্থ অফিসারের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন।

একুশে/জেএ/এএ