একজন ডাক্তারের জন্য কাঁদছে চট্টগ্রাম


পাপন বড়ুয়া : দেশে বেশিরভাগ ডাক্তারদের সাথে রোগী এবং রোগীর স্বজনদের সম্পর্ক তেমন একটা ভালো না।ডাক্তারদের আচার-ব্যবহার নিয়ে রোগীদের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। ডাক্তাররা রোগীদের অনেকটা ক্লায়েন্ট হিসেবে দেখেন।এতোসব অভিযোগের বিপরীতে এখনো অনেক ডাক্তারের নাম শুনলে রোগী, রোগীর স্বজনরা শ্রদ্ধা-ভালোবাসায় উদ্বেল হয়ে উঠেন। এরকম একজন ডাক্তার হলেন চট্টগ্রামের জনপ্রিয় অর্থোপেডিক সার্জন ডা. সমিরুল ইসলাম বাবু।

করোনায় আক্রান্ত হয়ে অনেকটা সুস্থ হয়ে উঠেছিলেন তিনি। কিন্তু আজ বুধবার বিকেলে দুঃসংবাদটা শুনেই একেবারে থমকে গেলাম। চট্টগ্রামের একটি বেসরকারি হাসপাতালে তিনি শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন।

কোন অনাত্মীয়ের মৃত্যুতে আমার আগে কখনো এতো খারাপ লেগেছে কিনা এই মূহুর্তে মনে পড়ছে না। ডা. সমিরুল ইসলামের মৃত্যুতে সোশ্যাল মিডিয়া জুড়ে চলছে শোকের মাতম। চিকিৎসা পাড়ায় নেমে এসেছে শোকের ছায়া।

এ শোক কি শুধুই একজন দক্ষ চিকিৎসকের জন্য? উত্তরে এক কথায় বলবো-না। উনাকে যারা খুব কাছ থেকে দেখেছেন তারা সবাই জানেন উনি কতটা মানবিক ছিলেন। দরিদ্র রোগীদের কতটা আপন তিনি ছিলেন। উনার নিষ্পাপ চেহারাটা দেখলে রোগীদের মন অনেকটা হালকা হয়ে যেত। চট্টগ্রামে অনেক বড় বড় ডাক্তার আছেন কিন্তু ডা. সমিরুল ছিলেন একজনই।

মাস ছয়েক আগে একদিন লক্ষ্য করলাম, আমার দেড় বছর বয়সী মেয়ে হাঁটার সময় এক পা বাঁকা করে হাঁটছে। ব্যাপারটা আমার ছোট বোনের স্বামী ডা. সুমন বড়ুয়া এবং আমার বন্ধু চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের ডা. অরুণাভ চৌধুরী শিমুলের (বর্তমানে ফ্রন্টলাইনের করোনা যোদ্ধা) সাথে শেয়ার করলাম। দু’জনের এককথা একজন অর্থোপেডিক বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।

পরে ডা. সুমনের পরামর্শে অনেকটা চিন্তামগ্ন হয়ে ডা. সমিরুল ইসলামের শরণাপন্ন হলাম। তিনি খুব ভালো করে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে জানালেন, চিন্তার কিছু নেই। আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যাবে। তারপরও সন্দেহমুক্ত থাকার জন্য এক্সরে দিলেন। এক্সরে রিপোর্ট দেখে হেসে উঠলেন তিনি, যেন তাঁর একজন স্বজন বিপদমুক্ত হলেন। আমি ডাক্তারের মৃদু হাসিতে মুগ্ধতায় ডুবে গেলাম। ক’জন ডাক্তারই রোগী, রোগীর স্বজনকে এরকম মুগ্ধতায় হারিয়ে ফেলতে পারেন?

আজ বিধাতার উপর খুব রাগ হচ্ছে। কেন তিনি এমন করলেন? কেন তিনি অসময়ে নিয়ে গেলেন সবার প্রিয় ডাক্তারকে?সমিরুল ইসলাম হাসিমাখা মুখে আর রোগীদের অভয় দিবেন না; ভাবতেই বুকের ভিতর মোচড় দিয়ে উঠছে। ডা. সমিরুল ইসলাম সবাইকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলেন- ডাক্তারদের জন্য এখনো চোখের নোনা জলের অভাব হয় না। পরপারে শান্তিতে থাকুন প্রিয় ডাক্তার।