ঢাকা : বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশন (বিজেএমসি) পরিচালিত রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলোর আধুনিকায়ন এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এসব পাটকলকে আরও সক্ষম করে গড়ে তুলতে উৎপাদন বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১ জুলাই থেকেই পাটকলগুলো বন্ধ হয়েছে।
তবে পাটকল শ্রমিকদের যেন দুর্ভোগ পোহাতে না হয়, সে জন্য প্রায় ২৫ হাজার শ্রমিকের প্রত্যেকের যাবতীয় পাওনা এককালীন পরিশোধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গোল্ডেন হ্যান্ডশেকের আওতায় রয়েছেন ২৪ হাজার ৮৮৬ জন শ্রমিক। অন্যদিকে ২০১৩ সাল থেকে এ পর্যন্ত অবসরে যাওয়া শ্রমিকদের (৮ হাজার ৯৫৬ জন) ও বদলি শ্রমিকদের পাওনাও একইসঙ্গে পরিশোধ করা হবে।এসব শ্রমিকের অবসরকালীন সুবিধাসহ পাওনা পরিশোধ বাবদ সরকারের খরচ হবে ৫ হাজার কোটি টাকা।
সরকারের বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী বীরপ্রতীক আজ নিশ্চয়তা দিয়েছেন, রাষ্ট্রায়াত্ব পাটকলের শ্রমিকদের গোল্ডেন হ্যান্ডসেকে পাঠানোর জন্য প্রত্যেককে তাদের ন্যায্য পাওনা পরিশোধ করা হবে বলে। পাট মন্ত্রী বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী নিজেই শ্রমিকদের দায়িত্ব নিয়েছেন।
আজ শুক্রবার (৩ জুলাই) এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে পাটমন্ত্রী শ্রমিকদের আশ্বস্ত করে বলেন, “এটা সরকারি টাকা। মাঝখানে কেউ নেই। এখানে কোনো দালাল নেই। টাকা শ্রমিকদের অ্যাকাউন্টে সরাসরি চলে যাবে। শ্রমিকরা কী পাচ্ছে আর পাচ্ছে না, সেটা আপনারা নিজেরাই জানতে পারবেন।“
রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল বন্ধ করে দেওয়ার প্রসঙ্গে বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী বলেন, পুরনো টেকনোলজি দিয়ে মাসের পর মাস আমাদের কারখানা টিকতে পারবে না। গতকাল (বৃহস্পতিবার) প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে যখন কথা হলো, তখন তিনি বললেন, এই শ্রমিক ভাইয়েরা বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আন্দোলন করেছে। ১ লাখ শ্রমিক যুদ্ধ করে বাংলাদেশ স্বাধীন করেছে। শ্রমিকদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর মায়া আছে। শ্রমিক ভাইয়েরা সবসময় আমাদের সঙ্গে ছিলেন। তাদের আত্মত্যাগের কথা আমরা ভুলিনি।
মন্ত্রী আরও বলেন, আজ এই শ্রমিকদের দায়িত্ব প্রধানমন্ত্রী নিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী নিজে যেখানে এই শ্রমিকদের দায়িত্ব নিয়েছেন, সেখানে ভাবনার কিছু নেই। প্রধানমন্ত্রী যখন দায়িত্ব নিয়েছেন, শ্রমিকরা ভালো থাকবেন, শান্তিতে থাকবেন-এটা আমার বিশ্বাস। শ্রমিকদের পাওনা নিয়ে অনেকেই দ্বিধা-দ্বন্দ্বে ছিলেন। তবে এখন আর কোনো দ্বিধা নেই।
শ্রমিকদের পাওনা বুঝিয়ে দেওয়া প্রসঙ্গে গোলাম দস্তগীর গাজী বলেন, শ্রমিকদের যা পাওনা রয়েছে, আমরা সেটা অর্ধেক নগদ টাকা ও অর্ধেক সঞ্চয়পত্র আকারে পরিশোধ করব। এতে করে তাদের সঞ্চয়ও হবে। সঞ্চয়পত্র থেকে তিন মাস পর পর মুনাফা পাবেন তারা।অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধের জন্য ব্যাংক হিসাব নম্বর অবিলম্বে বিজেএমসিকে জানাতেও অনুরোধ জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তের সূত্র ধরে বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী জানান, মজুরি কমিশন-২০১৫ অনুযায়ী পাটকল শ্রমিকদের এ বছরের জুন মাসের মজুরি আগামী সপ্তাহে তাদের ব্যাংক হিসাবে পরিশোধ করা হবে। নোটিশ মেয়াদ, অর্থাৎ জুলাই-আগস্টের ৬০ দিনের মজুরিও দুই মাসে যথারীতি পরিশোধ করা হবে। পিএফ, গ্র্যাচুইটি ও গোল্ডেন হ্যান্ডশেক সুবিধাসহ অবশিষ্ট সব পাওনার ৫০ শতাংশ শ্রমিকদের নিজ নিজ ব্যাংক অ্যাকাউন্টে এবং বাকি ৫০ শতাংশ নিজ নিজ নামে সঞ্চয়পত্র আকারে সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে পরিশোধ করা হবে। সব ক্ষেত্রেই মজুরি কমিশন-২০১৫-এর ভিত্তিতেই পাওনা হিসাব করা হবে।
পাটমন্ত্রী আরও জানান,সরকারী-বেসরকারী যৌথ উদ্যোগে (পিপিপ) পাটকলগুলো আবার চালু হলে সেখানে পুরনো শ্রমিকদেরই অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।