শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

যে কেউ ডাকলেই ঘরে, অফিসে যাবো -মেয়র নাছির

প্রকাশিতঃ ২৫ জুলাই ২০১৬ | ৬:৪৩ অপরাহ্ন

nasirচট্টগ্রাম: নগরবাসীর স্বার্থে যে কোন নাগরিকের সকল ধরণের পরামর্শ-সহযোগিতা ও আলোচনা-সমালোচনা নির্দ্বিধায় শোনার মানসিকতা পোষণ করেন বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন।

সোমবার চট্টগ্রাম ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে মেয়রের এক বছর মেয়াদ পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত সুধী সমাবেশে তিনি এ কথা জানান।

মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, যে কোন নাগরিক পরামর্শ, নির্দেশনা ও যে কোন আলোচনা-সমালোচনা করার অধিকার রাখে। আমার মোবাইল নম্বর অনেকের কাছেই আছে, না থাকলে আমি দিয়ে দেব। আমাকে ফোন করে, এসএমএস পাঠিয়ে আপনাদের পরামর্শ জানিয়ে দেবেন। কেউ যদি সরাসরি দেখা করে আলোচনা কিংবা পরামর্শ দিতে চান তাহলে আমি আপনাদের ঘরে যাবো, অফিসে যাবো। এক্ষেত্রে ব্যক্তির রাজনৈতিক, সামাজিক ও আর্থিক পরিচয় আমার কাছে বিবেচ্য বিষয় হবে না। আমি আপনাদের পরামর্শ সর্বোচ্চ গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করবো, ধৈর্য্যধারণ করে শুনবো।

মেয়র বলেন, প্রায় ৩৮০ কোটি টাকার দায় কাঁধে নিয়ে এক বছর আগে দায়িত্ব নিয়েছিলাম। বিগত সময়ে অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতির বোঝা কাঁধে নিয়ে যাত্রা শুরু করে নগরবাসীর প্রত্যাশা পূরণে চেষ্টা করেছি। সিটি কর্পোরেশনে যোগ্য কর্মকর্তার অভাব, সক্ষমতার ঘাটতিসহ নানান ধরনের ঝুঁকি নিয়েই প্রতিশ্রুতি পূরণের লক্ষে কাজ শুরু করেছি। বিগত এক বছরের অভিজ্ঞতার আলোকে আগামী ৩ বছরের কর্মপরিকল্পনা গ্রহন করা হয়েছে। তিন অর্থ বছরের মধ্যে দেয়া অঙ্গিকার একে একে বাস্তবায়ন করা হবে।

মেয়র বলেন, দায়িত্ব গ্রহনের পর থেকে বেতন-ভাতা, গাড়ী, ড্রাইভার, সম্মানী সহ কোন সুযোগ সুবিধা আমি গ্রহন করিনি। এ সময়ে দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, আত্মীয়করণ ও দলীয়করণ করার কোন নজির কেউ দেখাতে পারবে না। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহীতায় বিশ্বাসী এবং প্রতিষ্ঠানকে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহীতার আওতায় আনতে সচেষ্ট আছি। বিগত এক বছরে কঠোর সমালোচকও এ বিষয়টি স্বীকার করবেন বলে আমি আশাবাদী।

কর ব্যবস্থার বিষয়ে মেয়র বলেন, সরকারের আইন দ্বারা হোল্ডিং ট্যাক্স নির্ধারিত আছে। হোল্ডিং ট্যাক্স এক টাকাও বৃদ্ধি করার ক্ষমতা বা এখতিয়ার মেয়রের নেই। এ বিষয়ে যারা ট্যাক্স না দিতে নগরবাসীকে আহবান করেছিল, তাদের আহবানে নগরবাসী সাড়া দেয়নি। ২০১৪-২০১৫ অর্থ বছরের চেয়ে বিগত ২০১৫-২০১৬ অর্থ বছরে ৪৯ কোটি টাকা অতিরিক্ত হোল্ডিং ট্যাক্স আদায় হয়েছে।

জলাবদ্ধতা প্রসঙ্গে মেয়র বলেন, প্রাকৃতিক জলাবদ্ধতা নিরসন ব্যয়বহুল। এ ব্যয়বহুল কাজটি করার জন্য পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ডিপিপি তৈরী হয়েছে। মদুনাঘাট থেকে পতেঙ্গা নেভাল এভিনিউ পর্যন্ত এলাকায় বেড়িবাঁধ, বন্যা প্রতিরোধ দেয়াল, রাস্তা নির্মাণ, ২৬ টি খাল ড্রেজিং, খালের মুখে পাম্প হাউস সহ স্লুইচ গেইট নির্মাণ করার পরিকল্পনা সরকারের অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে।

আবর্জনা ব্যবস্থাপনা প্রসঙ্গে মেয়র বলেন, ডোর টু ডোর আবর্জনা সংগ্রহ ও অপসারন কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়েছে। আগষ্ট থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে ৪১ টি ওয়ার্ডে এ পদ্ধতি চালু হবে। ডোর টু ডোর আবর্জনা সংগ্রহ ও অপসারনের ফলে চসিককে বছরে অতিরিক্ত সাড়ে ২৮ কোটি টাকা ব্যয় করতে হবে।

জাতিসংঘ পার্ক প্রসঙ্গে মেয়র বলেন, এ পার্কটি উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া। আমার দায়িত্ব গ্রহণের পূর্বে প্রায় সাড়ে ৪ কোটি টাকা ব্যয়ে সেখানে ২টি সুইমিংপুল ও জিমনিসিয়াম নির্মাণ করা হয়েছিল। সেগুলো জনকল্যাণে না আসায় জাতিসংঘ পার্কটির উন্নয়ন ও দৃষ্টিনন্দন পার্কে পরিণত করার উদ্যোগ নেয়া হয়। কিন্তু পার্কের উন্নয়ন প্রসঙ্গে নানামুখি জটিলতা সৃষ্টি করে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে। সত্যকে সত্য এবং মিথ্যাকে মিথ্যা বলার সৎ সাহস থাকা উচিত।

মেয়রের মর্যাদা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মর্যাদার বিষয়টি বিবেচনায় এনে আমি মেয়র পদে প্রার্থী হইনি। মেয়রের দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে মর্যাদার বিষয়ে কোথাও কোন জটিল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় নাই। এ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা বা সমালোচনার দরকার নেই।

সুধি সমাবেশে বক্তব্য রাখেন- ইউএসটিসি’র উপাচার্য প্রফেসর ডা. প্রভাত চন্দ্র বড়–য়া, চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সভাপতি কলিম সরওয়ার, চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি রিয়াজ হায়দার চৌধুরী, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সাধারন সম্পাদক মহসিন চৌধুরী, দৈনিক সুপ্রভাত বাংলাদেশের সহযোগী সম্পাদক এম নাসিরুল হক, দৈনিক বীর চট্টগ্রাম মঞ্চের সম্পাদক সৈয়দ ওমর ফারুক, সিভিল সার্জন ডা. আজিজুর রহমান সিদ্দিকী, বিজিএমই এর প্রথম সহ সভাপতি মঈন উদ্দিন আহমেদ মিন্টু, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ চট্টগ্রাম মহানগর ইউনিট কমান্ডার মোজাফফর আহমদ, চট্টগ্রাম চেম্বার পরিচালক অহিদ সিরাজ চৌধুরী, মহিলা চেম্বার পরিচালক রেখা আলম চৌধুরী, উপজেলা চেয়ারম্যান এহসানুল হায়দার চৌধুরী বাবুল, বি এম এ চট্টগ্রামের সভাপতি ডা. মো.মজিবুল হক প্রমুখ।