ফটিকছড়িতে সিগারেট ফোঁকায় ষষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্রীদের টিসি, অতপর বাল্যবিয়ে!

নাজিরহাট গার্লস স্কুলের শিক্ষার্থী-ফাইল ছবি

চট্টগ্রাম : পম্পি, আঁখি, সোনিয়া। তিনজনই ফটিকছড়ি উপজেলার নাজিরহাট গার্লস স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্রী।

অভিযোগ- তারা ক্লাশে সিগারেট ফুঁকেছে। আর বিষয়টি শিক্ষকদের কানে যাবার সঙ্গে সঙ্গে তিন শিক্ষার্থীকে তলব। সঙ্গে অভিভাবকদেরও। জানানো হলো স্কুল পরিচালনা কমিটিকে। পরিচালনা কমিটি-শিক্ষক মিলে সিদ্ধান্ত দিলেন, এটা গুরুতর অপরাধ। এর শাস্তি হিসেবে তিন ছাত্রীর ভাগ্যে জুটলো তিনটি টিসি।

ঘটনাটি গত সেপ্টেম্বরের শেষের দিকের হলেও ছেপে গেছে স্কুলকর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্ট সবাই। জানা গেছে, ভিকটিমদের পরিবারকে বিষয়টি গোপন রাখার জন্য কড়াভাবে বলে দেয়া হয়েছে। ফলে কেউ এ ব্যাপারে আর মুখ খুলতে সাহস পাননি।

কয়েকদিন আগে বিষয়টি নজরে আসার পর একুশে পত্রিকার পক্ষ থেকে স্থানীয়ভাবে যোগাযোগ করা হয়। গণমাধ্যমকর্মী থেকে স্কুলশিক্ষক সবার এক কথা-এধরনের কোনো ঘটনা ঘটেনি। আবার কেউ বললেন, এধরনের একটি ঘটনা ঘটেছে বলে শুনেছি, কিন্তু আমাদের কাছে কোনো তথ্য নেই।

অনেক চেষ্টার করে বুধবার (৩১ অক্টোবর) দুপুরে এ বিষয়ে মোবাইল ফোনে কথা হয় নাজিরহাট গার্লস স্কুলের প্রধান শিক্ষক অসীম কুমার দে-র সঙ্গে। তবে তার দাবি- তিন ছাত্রীকে টিসি দেয়া হয়নি। অভিভাবকরাই তাদের নিয়ে গেছে।

স্কুলে সিগারেট ফোঁকার বিষয়ে প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘না না, তারা স্কুলে সিগারেট খায়নি। বাড়িতে খেয়েছে বলে শুনেছি।

বাড়িতে সিগারেট খেলে স্কুলের সমস্যা কী, আর স্কুলে সিগারেট ফুঁকলেই বা কেন টিসি দিতে হবে। অভিভাবকরা কেন সন্তানদের নিয়ে যাবেন- এসব প্রশ্নে প্রধান শিক্ষক বলেন, শুধু সিগারেট ফোঁকার বিষয় না, আরও অনেকগুলো বিষয় ছিল। একজনের কানের দুল আরেকজন বন্ধক দিয়েছে। তাদের নিয়ে স্কুলে সমস্যা হচ্ছে, তাই তাদের অভিভাবকদের স্কুলে ডেকে এনেছি। সবকিছু শোনার পর তারাই বললেন, আমরা গরিব মানুষ, এত রিস্ক নিতে পারবো না। তাদের নিয়ে যাবো। আঁখির বাল্যবিয়ের বিষয়ে প্রধান শিক্ষকের জানা নেই বলে জানান।

স্কুলসংশ্লিষ্ট একটি সূত্রমতে, কুড়িয়ে পাওয়া একটি সিগারেট সেদিন ক্লাশের বিরতিতে ওই তিন ছাত্রী কৌতূহলবশত স্কুলক্যাম্পাসে ফুঁকছিল, যা অন্য সহপাঠীরা দেখে শিক্ষকদের অবহিত করে। এরপরই তাদের উপর নেমে আসে টিসির খড়গ। অভিযোগ রয়েছে, এক্ষেত্রে ভিকটিম এবং তাদের অভিভাবকদের কাউকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেয়া হয়নি।

এদিকে স্কুল থেকে ঝরে পড়ার পর হতাশাগ্রস্ত আঁখির অভিভাবকরা সম্প্রতি তাকে বাল্যবিয়ে দিয়ে একপ্রকার দায়মুক্ত হওয়ার চেষ্টা করে। বাল্যবিয়ের শিকার আঁখিকে কোথায় পাত্রস্থ করা হয়েছে জানা যায়নি।

জানা যায়, তিনজনের একজনের বাড়ি স্থানীয় পাঁচপুকুরিয়া এলাকায় এবং অপর দুইজন বাইরের। বাবার কর্মসূত্রে নাজিরহাট এলাকায় বাসা ভাড়া করে থাকে।

এ ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মো. ইলিয়াস হোসেন একুশে পত্রিকাকে বলেন, শিক্ষার্থীদের টিসি না দিয়ে তাদের কাউন্সিলিং করা যেতো। বাচ্চারা না বুঝে হয়তো সিগারেট ফুঁকেছে, তাতেই এত বড় শাস্তি দেয়া উচিত হয়নি। সেই স্কুলটিতে ইউএনওকে পাঠাবো। এডিসি শিক্ষাকেও বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখতে বলছি। বিষয়টি তদন্ত করে অবশ্যই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

একুশে/এটি