চবি উপাচার্য প্রার্থীদের যোগ্যতা, অযোগ্যতা!

চট্টগ্রাম : চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য প্রার্থীদের দৌড়ঝাঁপ এখন তুঙ্গে। তাদের পক্ষে যেমন রয়েছে নানা আলোচনা, তেমনি তাদের বিরুদ্ধে রয়েছে সমালোচনাও। একেকজন বিশ্ববিদ্যালয়ে নানাভাবে খাটিয়েছেন প্রভাব। প্রত্যেকেই আত্মীয়-স্বজনকে দিয়েছেন নিয়োগ। তাদের কারো কারো একাডেমিক ফলাফল নিয়ে রয়েছে সমালোচনা।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আগামি ১৫ জুন শেষ হতে যাচ্ছে বর্তমান উপাচার্য ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরীর মেয়াদ। এরই মধ্যে শুরু হয়েছে উপাচার্য প্রার্থীদের দৌড়ঝাঁপ। এদের মধ্যে আছেন বর্তমান উপ উপাচার্য প্রফেসর ড. শিরীণ আখতার, ব্যাংকিং বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. সুলতান আহমদ, কলা ও মানববিদ্যা অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. সেকান্দর চৌধুরী। এছাড়া বর্তমান উপাচার্যও দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্বপালনে আগ্রহী বলে গুঞ্জন রয়েছে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আগামি উপাচার্য কে হচ্ছেন- এটিই এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। প্রার্থীদের পক্ষে-বিপক্ষে চলছে নানা কথা-আলোচনা। এ আলোচনায় স্থান পাচ্ছে কার কী যোগ্যতা, কার বিরুদ্ধে কী অভিযোগ ইত্যকার বিষয়গুলো।

উপ উপাচার্যের যোগ্যতা, অভিযোগ!

বর্তমান উপ উপাচার্য প্রফেসর ড. শিরীণ আখতারের বাড়ি কক্সবাজার জেলায়। মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান শিরীণ এসএসসি পাশ করেছেন কক্সবাজার বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে। এইচএসসি পাশ চট্টগ্রাম সরকারি মহিলা কলেজ থেকে। তিনি স্নাতক পাঠ নিয়েছেন চট্টগ্রাম সরকারি কলেজ থেকে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাঠ নিয়েছেন এমএ। ভারতের যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্জন করেছেন পিএইচডি ডিগ্রী। তবে শিক্ষাজীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই তিনি দ্বিতীয় শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হয়েছেন। বর্তমানে তিনি উপাচার্য হওয়ার দৌড়ে রয়েছেন। এ জন্য তিনি আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের কাছে করছেন দৌড়ঝাপ।

বিশ্ববিদ্যালয়ে উপ উপাচার্য পদে দায়িত্বপালনকালে তাঁর বিরুদ্ধে ক্যাম্পাস সংশ্লিষ্টদের মুখে শোনা যাচ্ছে কিছু অভিযোগও। তার মধ্যে রয়েছে যথারীতি শিক্ষক ও কর্মচারী নিয়োগে প্রভাব খাটানোর বিষয়টি। তিনি নিজেও একুশে পত্রিকাকে দেওয়া বক্তব্যে তা স্বীকার করেছেন। প্রফেসর ড. শিরীণ আখতার তাঁর পিএইডি ছাত্র কাইছার উদ্দিন নামে এক শিবির নেতাকে বাংলা বিভাগে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার বিষয়ে সুপারিশ করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন কক্সবাজার আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। এছাড়া তিনি তাঁর আত্মীয় দিলশাত জাহান, তাঁর পিএস মোহাম্মদ ইউনুচের স্ত্রী এবং বাংলা বিভাগের পিয়ন আলীর মেয়েকে নিয়োগ দিয়েছেন।

এ বিষয়ে প্রফেসর ড. শিরীণ আখতার একুশে পত্রিকাকে বলেন, কায়সার শিবির নেতা নয়। এগুলো সব মিথ্যা কথা। তাকে আমি নিয়োগ দিইনি। নিয়োগ দিয়েছেন মুহিবুল আজিজ। সে কি রাজনীতি করে আমি জানি না। মুহিবুল আজিজকে কোন মন্ত্রণালয় থেকে বলেছে।

এ বিষয়ে কক্সবাজার জেলা পেকুয়া উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও বর্তমান জেলা ছাত্রলীগের সদস্য সালাউদ্দিন মাহমুদ একুশে পত্রিকাকে বলেন, কায়সারকে শিবিরনেতা হিসেবে আমরা জানি। তার বাবা-চাচাসহ পুরো পরিবার বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। এই সময়ে হঠাৎ করে কীভাবে কায়সার এমন অবস্থানে চলে আসলো, এটা তো প্রশ্নবিদ্ধ।

এদিকে অন্যান্য নিয়োগের বিষয়ে উপ উপাচার্য বলেন, আমার কথায় মাস্টাররোলে আলীর মেয়েকে চাকরি দিয়েছেন ভিসি স্যার। দিলশাত আমার গ্রামের। প্রত্যন্ত অঞ্চলের মেয়ে। তিন বছরে আমার রেফারেন্সে শুধু দুইজনের চাকরি হয়েছে। ওরাতো পয়সা দিতে পারবে না। গরীব মানুষ বলে আমি চাকরি দিয়েছি। তিনি বলেন, সোহাগ নামে কক্সবাজারের একটা ছেলেকে সহকারী প্রক্টর (সাবেক) আনোয়ার নিয়োগ দিয়েছে। এটাও আমার নিয়োগ বলে চালানো হচ্ছে।

এ বিষয়ে সাবেক সহকারী প্রক্টর আনোয়ার হোসেন চৌধুরী বলেন, সোহাগ বিশ্ববিদ্যালয়ে দলের দুঃসময়ে ছাত্রলীগ করতেন। তাই আমি তাঁর চাকরির জন্য সুপারিশ করেছিলাম। এখানে কাউকে কেউ চাকরি দিয়েছেন- সে কথা বলার সুযোগ নেই। সোহাগ নিজ যোগ্যতায় যথাযথ প্রক্রিয়ায় চাকরি পেয়েছেন।

এদিকে উপ উপাচার্যের বিরুদ্ধে আলোচনা হচ্ছে, উপ উপাচার্য হওয়ার আগে তিনি কোনো প্রশাসনিক পদে দায়িত্ব পালন করেননি। ফলে প্রশাসনিক নানা বিষয়ে তাঁর অভিজ্ঞতার ঘাটতি রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্প্রতিক কিছু ঘটনায় তাঁর অনভিজ্ঞতা জটিলতা সৃষ্টি করেছে বলেও অভিযোগ।

প্রফেসর সুলতানের আলোচনা-সমালোচনাই দুটিই বেশি

প্রফেসর ড. সুলতান আহমেদ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রাজনীতিতে আলোচিত-সমালোচিত একটি নাম। বেশ কয়েক দফায় তিনি উপাচার্য হতে প্রতিযোগিতায় নেমেছিলেন। এবারও আছেন সেই দৌড়ে। দীর্ঘ ১২ বছর তিনি দায়িত্ব পালন করেছেন শাহ জালাল হলের প্রভোস্ট হিসেবে। প্রথম দফায় প্রফেসর আব্দুল মান্নানের উপাচার্য থাকাকালীন সময়ে, দ্বিতীয় দফায় প্রফেসর আনোয়ারুল আজিম আরিফ ও প্রফেসর ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরীর সময়ে। তিনি বর্তমানে ব্যাংকিং বিভাগের সভাপতির দায়িত্বও পালন করছেন। এছাড়া প্রভোস্ট ক্যাটাগরিতে ছিলেন সিন্ডিকেট সদস্যও।

তাঁর বাড়ি চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলায়। রাউজান আর আর এ সি আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে তিনি প্রথম বিভাগে এসএসসি পাশ করেন। দ্বিতীয় বিভাগ নিয়ে এইচএসসি পাশ করেন ফটিকছড়ি মহাবিদ্যালয় থেকে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রথম শ্রেণী নিয়ে বিকম ও এমকম পাশ করেন তিনি। পিএইচডি করেছেন ভারতের কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।

প্রফেসর সুলতান বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল উপাচার্যের সময়েই প্রভাব বিস্তারকারী হিসেবে পরিচিত। তাঁর কথায় শিক্ষক, কর্মচারী নিয়োগ দিতে হয় উপাচার্যদের। শুধুমাত্র তাঁর নিয়ন্ত্রণাধীন শাহ জালাল হলেই বিগত উপাচার্য প্রফেসর আরিফ ও বর্তমান উপাচার্য ড. ইফতেখার উদ্দিনের সময়ে তাঁর সুপারিশে নিয়োগ হয়েছে অন্তত ১২ জন কর্মচারী। তাদের সকলেই তার নিকটাত্মীয়। কেউ আপন ভাই। কেউ বা গ্রামের স্বজন। তাঁর সুপারিশ ছাড়া বিবিএ অনুষদের শিক্ষক নিয়োগ হয় না বলেও প্রচার রয়েছে।

তার হাতে নিয়োগ হওয়াদের মধ্যে রয়েছে, তার আপন ভাই কামরুল, তার শশুরবাড়ির আত্মীয় সেলিম, চার চাচাতো ভাই নাছির, জসিম, মাহবুব, এয়ার মোহাম্মদ, তার গ্রামের আত্মীয় মোহাম্মদ রাশেদ, ওসমান গণি, নাঈমুদ্দিন। সম্প্রতি নিয়োগ দিয়েছেন ব্যাংকিং বিভাগের উচ্চমান সহকারী আরাফাতুল করিমকে। তিনি তার ভাতিজা হিসেবেই পরিচিত। এদের সকলের বাড়িই ড. সুলতানের গ্রাম রাউজানের হিংগলায়।

সম্প্রতি ছাত্রলীগ প্রভোস্টের পদ থেকে তাকে অপসারণের দাবি তুলে। এসময় তারা তাঁর বিরুদ্ধে নিয়োগ-বাণিজ্য, প্রভোস্ট হিসেবে তাঁর ব্যর্থতার নানান দিক তুলে ধরে। ছাত্রলীগের চাপের মুখে একপর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য তাকে প্রভোস্টের পদ থেকে বরখাস্ত করেন।

ভিসি প্রার্থী কি-না জানতে চাইলে ড. সুলতান একুশে পত্রিকাকে বলেন, সরকার যাকে ভাল মনে করে তাকেই ভিসি পদে নিয়োগ দিবে। আমি এ পদের যোগ্য কিনা তা সরকারই ভাল জানবে। তবে আমি বিশ্ববিদ্যালয় প্রভোস্ট ক্যাটাগরি থেকে, সিন্ডিকেট মেম্বার ছিলাম। এখন ব্যাংকিং বিভাগের সভাপতির পদে আছি। যদি সরকার দায়িত্ব দেয়, তাহলে আমি কেন পারব না? অবশ্যই পারবো। আমার বাড়ির কাছের বিশ্ববিদ্যালয় এটি।

রাউজানের লোক বেশি নিয়োগ দেওয়া নিয়ে ছাত্রলীগের অভিযোগের ব্যাপারে ড. সুলতান বলেন, আমি যখন একাউন্টিং বিভাগের চেয়ারম্যান তখন একটা নিয়োগ দিলাম চাঁদপুরের, অন্যজন দিলাম মুন্সিগঞ্জের। ১২ বছর দায়িত্ব পালন করে পাঁচ জনের চাকরি দিলে তা কি পার্শিয়ালিটি হবে? তিনি বলেন, আমার ভাই মাস্টার্স ডিগ্রি পাশ করা। বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি পেয়েছে। তাকে ক্লাস থ্রি পোস্টের একটা চাকরি দেওয়া হয়েছে। এতে তার উপরতো অবিচার করা হয়েছে। তাকে বড় আরো পদেই মানায়।

প্রিয়মুখ প্রফেসর সেকান্দর

প্রফেসর ড. সেকান্দর চৌধুরী। ক্যাম্পাসের সজ্জন ব্যক্তিত্ব। মিষ্টভাষী। বলিষ্ঠ বক্তা হিসেবেও সুখ্যাতি রয়েছে তাঁর। রেগে গিয়ে কখনো কারো সঙ্গে কথা বলেছেন- এমন ঘটনা পাওয়া যাবে না একটিও। রাঙ্গুনিয়ার সন্তান সেকান্দর চৌধুরী এসএসসি পাশ করেছেন বেতাগী ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয় থেকে। কানুনগোপাড়া স্যার আশুতোষ মহাবিদ্যালয় থেকে করেছেন এইচএসসি পাশ। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ থেকে করেছেন বিএ.সম্মান। তবে তাঁর এ তিনটি পর্যায়ে ফলাফল দ্বিতীয় শ্রেণী। একই বিভাগের ১৯৮১-১৯৮২ শিক্ষাবর্ষে মাস্টার্স করেছেন। অর্জন করেছেন প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হওয়ার গৌরব। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নিয়েছেন পিএইচডি ডিগ্রী।

বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি ইসলামের ইতিহাস বিভাগের সাবেক এ চেয়ারম্যান দুই দফা হয়েছেন কলা ও মানববিদ্যা অনুষদের ডিন। বর্তমানে বাংলাদেশ স্টাডিজ বিভাগের সভাপতি তিনি। দুই দফা ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য প্রফেসর আনোয়ারুল আজিম আরিফ ও সাবেক উপাচার্য ড. আবু ইউসুফ আলমের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত প্রফেসর সেকান্দর বর্তমান উপাচার্যেরও কাছের মানুষ। তবে গত চার বছর তার বিরুদ্ধে তেমন কোনো অভিযোগ উত্থাপিত হয়নি। বিভিন্ন প্রগতিশীল আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের বিভিন্ন সভা, সেমিনারে তিনি সরব শুরু থেকেই। নগরের সাংস্কৃতিক আন্দোলনের সঙ্গেও তিনি সম্পৃক্ত। বঙ্গবন্ধু ও বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মুক্তিযুদ্ধ, বিজয় দিবস, স্বাধীনতা দিবস, একুশে ফেব্রুয়ারিসহ বিভিন্ন বিষয়ে নিয়ে প্রায় ৬০টি প্রবন্ধ-নিবন্ধ লিখেছেন। বর্তমানে তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য পদে নিয়োগ পেতে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের নজরে আসার চেষ্টা করছেন।

নির্বিচারে ছাত্রলীগ নিয়োগের অভিযোগ উপাচার্যের বিরুদ্ধে

চট্টগ্রাম নগরীর উত্তর কাট্টলী এলাকায় বেড়ে ওঠা প্রফেসর ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী। ১৯৭০ সালে কুমিল্লা বোর্ডের অধীনে প্রথম বিভাগে এসএসসি পাশ করা ইফতেখার প্রথম বিভাগে এইচএসসি পাশ করেছেন একই বোর্ড থেকে। রাঙ্গুনিয়া কলেজ থেকে নিয়েছেন দ্বিতীয় বিভাগে বিএ ডিগ্রি। ১৯৮২ সালে চবি সমাজতত্ত্ব বিভাগ থেকে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হয়েছে মাস্টার্স কোর্সে। ১৯৮৩ সালে জাপানের ওসাকা ইউনিভার্সিটি থেকে নিয়েছেন উচ্চতর ডিগ্রি। এর পরপরই পিএইচডি করেছেন তিনি জাপানের সুকুবা ইউনিভার্সিটি থেকে। আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়া ইউনিভার্সিটি (বার্কেল) থেকে করেছে দ্বিতীয় পিএইচডি (পোস্ট ডক্টরেট)। এরপর ১৯৮৯ সালে তিনি প্রভাষক পদে যোগদান করেন।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য প্রফেসর ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরীর বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় অভিযোগ তিনি নির্বিচারে নিয়োগ দিয়েছেন। এদের মধ্যে ছাত্রলীগের নিয়োগ নিয়েই হয়েছে বেশি বিতর্ক। নির্ধারিত যোগ্যতার নূন্যতম পূরণ করে আবেদন করেই তাঁর আমলে শিক্ষক হয়ে গেছেন ছাত্রলীগের অন্তত ডজনখানেক নেতা। অর্ধশতাধিক চবি ছাত্রলীগ নেতাকে এডহক ও সার্কুলারের মাধ্যমে তিনি চাকরি দিয়েছেন। যা নিয়ে চলছে সমালোচনা। এসব ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে রয়েছে অসংখ্য মামলা। তারা বিভিন্ন সময়ে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে হয়েছে বহিষ্কার।

চাকরি পাওয়া ছাত্রলীগ নেতাদের মধ্যে রয়েছেন, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতা দিয়াজ ইরফান চৌধুরীর অনুসারী সাবেক সহ সভাপতি মোহাম্মদ মামুনের ভাই মোহাম্মদ মাসুম, চবি ছাত্রলীগের সাবেক সহ সভাপতি ওসমান, সহ সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান সিতাপ, সহ সভাপতি এসএম আলাউদ্দিন আলম, সহ সভাপতি মো: হাবিবুল বাশার শান্ত, সহ সভাপতি মোহাম্মদ রাকিব উদ্দিন, সহ সভাপতি মোহাম্মদ সাখাওয়াত হোসেন, সহ সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান, সহ সভাপতি আরমান হেলালী, যুগ্ম সম্পাদক তানজীম, যুগ্ম সম্পাদক সুমন মামুন, সাংগঠনিক সম্পাদক ইমরান হোসেন, বিজ্ঞান ও তথ্য প্রযুক্তি সম্পাদক মনসুর আলী, ছাত্রলীগ কর্মী মানিক চন্দ্র দাশ, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক শরীফুল ইসলামের ভাই, সহ সম্পাদক সুকান্ত রুদ্র, ছাত্রলীগ নেতা তৌহিদুল ইসলাম জিমেল, হাটহাজারী আওয়ামী লীগ কর্মী রাশেদ হোসাইন, সাবেক চবি ছাত্রলীগ সভাপতি আব্দুল কদরের ছেলে শাওন ইমতিয়াজ, ছাত্রলীগ কর্মী মোহাম্মদ শফিউল আলম চৌধুরী, ছাত্রলীগ কর্মী তৌহিদ ওসমান, শিক্ষা ও পাঠচক্র সম্পাদক এমরান হোসেন, ছাত্রলীগ নেতা আসতারুল হক, সহ সম্পাদক মোঃ ইব্রাহিম খলিল, হাটহাজারী ছাত্রলীগ নেতা মোহাম্মদ মনজুর মিয়া, হাটহাজারী আওয়ামী লীগ নেতা মো: রাশেদ চৌধুরীসহ প্রায় ৫০ জন ছাত্রলীগ নেতাকর্মীকে বর্তমান উপাচার্য চাকরি দিয়েছেন। যাদের বেশির ভাগের বিরুদ্ধে রয়েছে মামলা, ছাত্রজীবনে বহিষ্কার হওয়াসহ নানা অভিযোগ।

শিক্ষক নিয়োগেও তিনি ছাত্রলীগকে দিয়েছেন বিশেষ সুবিধা। আবেদনকারী প্রার্থীদের মধ্যে অপেক্ষাকৃত কম পয়েন্টধারী হয়েও ছাত্রলীগের পদধারীদের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন তিনি। ইতিহাস বিভাগে নিয়োগ দিয়েছেন চবি ছাত্রলীগের সহ সভাপতি রন্টু দাশকে। ম্যানেজমেন্ট বিভাগের শিক্ষক হয়েছেন ছাত্রলীগে সহ সম্পাদক জিমি সারোয়ার। বিবিএ অনুষদ ছাত্রলীগ সভাপতি রিফাতকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে হিউম্যান রিসার্চ ম্যানেজমেন্ট বিভাগে। একাউন্টিং বিভাগে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে ছাত্রলীগ নেতা তৌহিদুল ইসলাম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ নেতা অলি আহমেদ পলাশকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে মনোবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক। নাট্যকলা বিভাগে নিয়োগ দেওয়া ছাত্রলীগের ভারত শাখার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চারুকলা ইনস্টিটিউট ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কবির রিক্তকে। দর্শন বিভাগে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ নেতা আসাদুজ্জামানকে। কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগ নেতা মোহাম্মদ আলীকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বাংলা বিভাগের প্রভাষক পদে।

এছাড়া আওয়ামীপন্থী প্রভাবশালী শিক্ষকদেরও সুপারিশে বিভিন্ন পদে কর্মচারী নিয়োগ দিয়ে বিতর্কে জড়িয়েছেন বর্তমান উপাচার্য। তার আমলে বিশ্ববিদ্যালয়ে সবচেয়ে বেশি নিয়োগ পেয়েছেন সাবেক রেজিস্ট্রার প্রফেসর ড. কামরুল হুদার সুপারিশপ্রাপ্তরা। উপাচার্যের কাছ থেকে নিয়োগ আদায়ের ক্ষেত্রে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছেন প্রফেসর ড. সুলতান আহমেদ। এছাড়াও কলা অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. সেকান্দর চৌধুরী, প্রক্টর আলী আজগর চৌধুরী, সহকারী প্রক্টর লিটন মিত্র, হেলাল উদ্দিন আহমেদ, সাবেক সহকারী প্রক্টর আনোয়ার হোসেন চৌধুরীসহ হলুদ দলের প্রভাবশালী শিক্ষকদের সুপারিশে নিয়োগ পেয়েছেন বেশ কয়েকজন কর্মচারী। এছাড়া বিভিন্ন মন্ত্রী-এমপিদের তদবিরেও নিয়োগ পেয়েছে অনেক কর্মচারী।

এসব নিয়োগ নিয়ে সম্প্রতি বিভিন্ন গণমাধ্যমে উপাচার্যের বিরুদ্ধে উঠেছে বিতর্কের ঝড়। এ বিষয়ে জানতে চাইলে চবি উপাচার্য প্রফেসর ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী বলেন, কে কোন দল করে তা মুখ্য নয়। যোগ্যতাই মুখ্য বিষয়। তবে ছাত্রলীগের কেউ যদি যোগ্য হয়, আওয়ামী লীগ পরিবারের কেউ যদি যোগ্যতা বহন করে তাহলে তাকে নিয়োগ দেওয়া কি অপরাধ? বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগবিধি মেনেই সকল শিক্ষক, কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

একুশে/এসআর/এটি

### রাঙ্গুনিয়া কলেজের বিএ পাস ছাত্র চবি’র ভিসি