সিডিএতে ‌‘অভিযোগ’-এর দাম ৬শ’ টাকা, ভ্যাট নিয়েও নয়-ছয়!

শরীফুল রুকন : চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) বরাবর কেউ অভিযোগ করতে গেলেই অভিযোগকারীকে ৬০০ টাকা ব্যাংকে জমা দিতে বলা হচ্ছে। উক্ত টাকার মধ্যে ১৫ শতাংশ ভ্যাটও যুক্ত রয়েছে বলেও জানানো হয়; যা নিয়ে ব্যাপক নয়-ছয়ের ইঙ্গিত মিলেছে।

একুশে পত্রিকার একজন প্রতিবেদক গত ২৯ জুলাই বিকেল ৩টার দিকে সিডিএ’তে একটি অভিযোগ করতে যান।

তিনি বলেন, আমি যে ভবনে থাকি সেটার উপর পাশের একটি ভবন হেলে পড়েছে। বিষয়টি নিয়ে সিডিএতে লিখিত অভিযোগ দিতে গেলে জানানো হয়, পূবালী ব্যাংকের সিডিএ কর্পোরেট শাখায় সিডিএ’র ফর্মস সেলস্ হিসাবে ৫৮০ টাকা ও সিডিএ স্টাফ ওয়েলফেয়ার ফান্ডের হিসাবে ২০ টাকা জমা দিয়ে আসার জন্য।

টাকা জমা দিতে গেলে ব্যাংকের নির্ধারিত কর্মকর্তা (যার কাছে সিডিএ’র হিসাবে টাকা জমা দেয়ার রশিদ থাকে) একুশে প্রতিবেদককে জানান, ৬০০ টাকা নয়, ৫২০ টাকা জমা দিতে হবে। এরমধ্যে ৫০০ টাকা সিডিএ’র ফর্মস সেলস্ হিসাবে ও ২০ টাকা সিডিএ স্টাফ ওয়েলফেয়ার ফান্ডে জমা দিতে হবে। এটাই নিয়ম।

যথারীতি ব্যাংকের ক্যাশ কাউন্টারে ৫০০ ও ২০ টাকা আলাদা করে জমা দেয়ার পর সিডিএ’র ডেসপাস শাখায় ব্যাংকের রশিদসহ আবেদনটি জমা দিতে গেলে সংশ্লিষ্টরা তা গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানান। ৫০০ টাকার মধ্যে ১৫ শতাংশ ভ্যাট হিসেবে অতিরিক্ত যে ৭৫ টাকা আসে সেটা সিডিএ স্টাফ ওয়েলফেয়ার ফান্ডের হিসাবে জমা দিতে হবে বলেও তারা জানান।

তাদের দাবি অনুযায়ী, ৭৫ টাকা ভ্যাট দিলেও সবমিলিয়ে দাঁড়ায় ৫৯৫ টাকা, ৬০০ টাকা নয়। তাছাড়া ভ্যাটের টাকা কেন সিডিএ স্টাফ ওয়েলফেয়ার ফান্ডের হিসাবে জমা হবে- সে বিষয়েও সদুত্তর পাওয়া যাচ্ছিল না তখন।

এদিকে অভিযোগ করতে টাকা তো নেয়া হচ্ছেই, তার উপর ভ্যাট আদায়ে বিস্মিত প্রতিবেদক একজন সহকর্মীকে নিয়ে তাৎক্ষণিক সিডিএ’র অথরাইজড অফিসার-১ মনজুর হাসানের কার্যালয়ে যান, সিডিএ’র এই কর্মকর্তা অভিযোগ বাবদ ৫২০ টাকা নেয়া হয় জানিয়ে সেটা গ্রহণ করার উদ্যোগ নেন। অধীনস্ত একজন কর্মীকে অভিযোগটি ‘রিসিভ’ করিয়ে আনার দায়িত্বও দেন তিনি। তবে যথারীতি ডেসপাস শাখার দায়িত্বপ্রাপ্তরা অভিযোগটি গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানান।

এ সময় ডেসপাস শাখার সামনে দিয়ে নিজের কক্ষে যাওয়ার পথে সিডিএ চেয়ারম্যানের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা (পিও) নুরুল কবিরকে উদ্ভুত সমস্যার কথাটি জানান ডেসপাস শাখার কর্মীরা। তিনিও হাঁটতে হাঁটতে তখন জানান, অভিযোগ করার ক্ষেত্রে ৫২০ টাকার বাইরে ১৫ শতাংশ ভ্যাট দিতে হবে।

একদিকে ভ্যাট ছাড়া অভিযোগ জমা নেবে না সিডিএ, অন্যদিকে নিয়মের বাইরে গিয়ে ব্যাংক ভ্যাট নেবে না- এই অবস্থার করণীয় জানতে সিডিএ চেয়ারম্যানের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা (পিও) নুরুল কবিরের কক্ষে যান প্রতিবেদক। তিনি করণীয় কী সেটা চিন্তা করার জন্য সময় চেয়ে নিয়ে প্রতিবেদককে অপেক্ষা করতে বলেন। তিনি সিদ্ধান্ত দিতে না পারায় প্রায় ২০ মিনিট পর আরেকজন সহকর্মীসহ চেয়ারম্যানের কক্ষে যান প্রতিবেদক।

সমস্যাটি সিডিএ চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষের সামনে উপস্থাপন করা হলে তিনি উপস্থিত প্রধান প্রকৌশলীসহ অন্যান্য কর্মকর্তাদের সামনে বলেন, ‘ভ্যাট তো ৫০০ টাকার ভেতর থেকে আমাদেরকে দিতে হবে। (অভিযোগ) দিয়ে দিন, নেবে।’ এরপর প্রতিবেদক জানান, এই কথাটি বলার পরও ডেসপাস থেকে অভিযোগটি গ্রহণ করা হচ্ছে না। তখন উপস্থিত কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী সমস্বরে বলে উঠেন, ‘এখন নেবে।’ পরে ৫২০ টাকার ব্যাংক রশিদসহ লিখিত অভিযোগটি গ্রহণ করা হয় ডেসপাস শাখায়।

জানতে চাইলে কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট চট্টগ্রামের কমিশনার মোহাম্মদ এনামুল হক একুশে পত্রিকাকে বলেন, অভিযোগ নেয়ার বিপরীতে অভিযোগকারীর কাছ থেকে ৫০০ টাকা নেবে কেন সেটা তো বুঝলাম না। তবে আইনের বিধান অনুযায়ী সিডিএ চার্জ বা ফি হিসেবে যত আয় দেখাবে সেখান থেকে ১৫ শতাংশ ভ্যাট দিতে হবে। অর্থ্যাৎ আয়ের মধ্যেই ভ্যাটটা ধরতে হবে।

তিনি বলেন, সিডিএ যদি ৫০০ টাকা আয় করে। তবে  সেখান থেকেই ১৫ শতাংশ হারে ৭৫ টাকা ভ্যাট তাদেরকেই দিতে হবে। এখন অভিযোগকারীর কাছ থেকে ৪২৫ টাকা না নিয়ে ৫০০ টাকা নিচ্ছে অথবা ৫০০ টাকা না নিয়ে ৬০০ টাকা নেওয়ার যে অভিযোগটা উঠছে- এই দিকটা আমার জানা নেই।