জামালপুরের ডিসির ভাইরাল ভিডিও এবং হিজাব সমালোচনা

হাসিনা আকতার নিগার : সামাজিক মাধ্যম বেশ সরব জামালপুরের জেলা প্রশাসকের যৌন ব্যভিচারের ভিডিও নিয়ে। সে সাথে তার সংগীনির পোশাক বিশেষ করে হিজাব পরিহিত আচরণ  নিয়ে চলছে নানা সমালোচনা। যা  ইসলাম ধর্মের প্রতি কটাক্ষ করা হচ্ছে।

ভিডিওর অন্তরালের ঘটনা যাই হোক না কেন; দুজনের একটা অবৈধ প্রণয়ের যে সম্পর্ক রয়েছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। সুতরাং নারী-পুরুষের এ ধরনের অবৈধ সম্পর্কের বিচারের দায়ভার আইন ও প্রশাসনের।

কিন্তু একজন হিজাবধারী নারী যখন অসামাজিক  রংগলীলাতে মত্ত হয়ে পর্দাশীল হবার ভান ধরে তা দৃষ্টিকটু সাধারণভাবে। তবে সে ক্ষেত্রে ধর্মীয়ভাবে হিজাবের দিকে আংগুল তোলার আগে জানা প্রয়োজন হিজাব সম্পর্কে।

মানুষ হিসাবে নারী-পুরুষ সবারই নফসের নিয়ন্ত্রণ করাটা হলো মূল কাজ। মনের পর্দা না থাকলে মানুষের শারীরিক পর্দা অর্থহীন। যার প্রমাণ ডিসি এবং সংগী নারীর আচরণ।

হাস্যকর হলেও সত্যি আজকাল হিজাব পরিধান করাটা এক ধরনের ফ্যাশন।  হিজাবের আড়ালে কেউ মনের কুটিলতাকে আড়াল করে।আবার কেউ ধর্মীয় আব্রুতে অন্যভাবে সৌন্দর্য প্রকাশ করে। এখন প্রশ্ন হলো হিজাব কতটা ধর্মীয় আর কতটা প্রথাগত বিধান?

বিশ্বে শুধু মুসলিমরা হিজাব করে তা কিন্তু নয়। ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, হিজাব বা পর্দার ব্যবহার হতো সভ্যতার শুরুর দিকে। রোমান বা গ্রীক সভ্যতার সূচনালগ্নে এর ব্যবহারের  প্রমাণ পাওয়া যায় প্রত্মতাত্ত্বিক আবিষ্কার, কবিতা, চিত্রকর্মও সামাজিক অনুষ্ঠানে। গ্রীক ও রোমান সাংস্কৃতিতে মহিলা ও পুরুষ উভয়ই ধর্মীয়ভাবে মাথা আবৃত রাখে। তাই  মহিলা ও পুরুষদের মাথা আবৃত রাখা ইহুদীদের কাছ থেকে ধার করা প্রথা। যা লিখেছেন টালমুদ। যা পরে খ্রিস্টানরাও মেনে নেয়।

এ সম্পর্কে এক নামকরা রাব্বী একদল ইহুদী যুবতীকে বিশ্লেষণ করে বলেন যে,’ আমরা মাথা আবৃত রাখা সর্ম্পকে কোনোরকম আদেশ পাইনি, কিন্তু আমরা জানি এটা হয়ে আসছে বছরের পর বছর ধরে।’

আবার যে কোনো ইহুদী ধর্মীয় পুস্তক থেকে জানা যায় , তাদের ধর্মীয় নেতারা মাথা আবৃত রাখতে বলেছেন। এখনও ইহুদী মহিলারা তাদের ধর্মীয় অনুষ্ঠানে মাথা আবৃত রাখে। এবং খ্রিস্টানরাও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে মাথা আবৃত রাখে। সুতরাং  হিজাবকে ব্যবহার করা হয় আরবী, ইহুদী, খ্রিস্টান ও অন্যান্য ধর্মীয় ব্যক্তিরা ব্যবহার করত এই হিসাবে। কোনো ধর্মীয় বিধান হিসাবে নয়।

সৌদি আরবে পুরুষ নারী সবাই মাথা আবৃত রাখে। কারণ এটা তাদের পোশাক। কোনো ইসলামিক দৃষ্টিভঙ্গিতে নয়। আবার উত্তর আমেরিকায় অনেক উপজাতি মুসলিম পুরুষরা হিজাব ব্যবহার করে মহিলাদের পরিবর্তে। তবে  হিজাবকে  আর্দশ পোশাক হিসাবে পরিণত করার প্রথম কৃতিত্ব মাদার তেরেসার। তিনি তার কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে একে দিয়েছেন ভিন্নমাত্রা।

কোরান ও আল্লাহর নির্দেশমত  মুসলমান মহিলারা  হিজাব (মাথা ও শরীর আবৃত রাখা) করে প্রকৃতপক্ষে এটা  সঠিক নয়। কারণ কোরানে বিশ্বাসীগণের পোশাকের ব্যাপারে সম্পূর্ণ পরিস্কার নির্দেশনা দিয়েছে। বরং সময়ের পরিক্রমায় এক নতুন উদ্ভাবিত বস্তু হিসেবে হিজাব এসেছে ইসলামে। এটি একটি গতানুগতিক পুরোনো আমলের পোশাক, যা ধর্মীয় নয়। এর পক্ষে-বিপক্ষে কোরান কিছু বলে না। হিজাবের ব্যবহার যে ইসলামিক দৃষ্টিকোণ থেকে হয়নি তার সাক্ষ্য ইতিহাসই বহন করে।

সুতরাং আল্লাহ কোরানের মাধ্যমে  মুসলিম নারীদের পোশাকের ব্যবহার যে বিধান দিয়েছেন তা বোঝা ও দেখা প্রয়োজন। তবেই  হিজাবের বিষয়টি সহজ হবে।

মহিলাদের পোশাক সম্পর্কে কোরানে মূলত তিনটি বিধান রয়েছে। যা দিয়ে কোনোভাবেই শুধু হিজাবকে নির্দিষ্ট করা হয় নাই বরং সকল মুমিনদের নিজেদের উপস্থাপনের বিষয়ে বলা হযেছে ।

এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, আরবী শব্দ হিজাবের অর্থ পর্দা বা অবগুন্ঠন। আরো অন্যান্য অর্থ  হলো পর্দা, আবরণ, ভাগ, বিভক্ত ইত্যাদি। যা কোরানে ব্যবহৃত হযেছে ৭ বার। এর মধ্যে ৫ বার হিজাব হিসাবে এবং হিজাবান হিসাবে ২ বার।

এমনকি হযরত মোহাম্মদ (দঃ) এর ওফাতের পর হিজাব কথাটি পোশাকের প্রতীক হিসাবে ব্যবহৃত হলেও; তিনি  কিন্তু হিজাবকে নির্দিষ্ট পোশাক করে যাননি।

তাহলে এখন এটা স্পষ্ট যে, মুসলমানদের পোশাকের বিধান কোরানে রয়েছে এবং এটা খুবই সহজ ও নম্র। কিন্তু সুনির্দিষ্টভাবে হিজাব সম্পর্কে বলা হয়নি।

হিজাব একটি প্রথাগত পোশাক পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের। যার সঙ্গে মুসলমান বা ইসলামের নির্দিষ্ট কোনো সর্ম্পক নেই। আর সে হিজাব পরে কোনো নারী অপকর্ম করলে তার জন্য ইসলাম ধর্মের দিকে গালি ছুঁড়ে দেয়া অন্যায় ও অবান্তর।

হাসিনা আকতার নিগার : কলামলেখক