বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে মুজিবের জমিদখল থেমে নেই

 

 

প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে চলছে স্থাপনা নির্মাণের কাজ। ছবিটি সোমবার বিকেলে তোলা।

কক্সবাজার : বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম করে পাহাড় কেটে জমিদখল, শিক্ষার্থীদের সাথে নানা প্রতারণাসহ বিভিন্ন অভিযোগ উঠেছে কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ারম্যান লায়ন মুজিবুর রহমান-এর বিরুদ্ধে।

সম্প্রতি কক্সবাজার জেলার কলাতলীতে মাইক্রোওয়েভ স্টেশন সংলগ্ন টাওয়ারের পাশে পাহাড় কেটে স্থাপনা নির্মাণ করার অভিযোগে ইতোমধ্যে মুজিবকে জরিমানাও করা হয়।

জানা যায়, নির্বিচারে পাহাড় কাটার কারণে টেলিযোগাযোগ কেন্দ্রের ৮৩ ফুট দীর্ঘ সম্প্রচার টাওয়ার চরম ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। যে কোনো মুহূর্তে এ টাওয়ার ধসে পড়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।

তথ্যমতে, সম্প্রচার টাওয়ারের নিচে পাহাড় কেটে স্থাপনা তৈরি করছিলেন লায়ন মুজিবুর রহমান। এক মাস ধরে তার শতাধিক শ্রমিক কাজ করে আসছিল। সম্প্রতি সেখানে অভিযান চালান কক্সবাজার সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) শাহরিয়ার মোক্তারের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালত। এরপর সেখানে স্থাপনা নির্মাণকাজ বন্ধ করে দেয়া হয়। এ সময় তিন শ্রমিককে আটক করা হয়। পাহাড় কাটার কিছু সরঞ্জামও জব্দ করা হয়। অভিযুক্ত মুজিবুর রহমানকে এক লাখ টাকা জরিমানাও করা হয়।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, জরিমানা ও অভিযান পরিচালনা করার পরও থেমে নেই লায়ন মুজিবের স্থাপনা নির্মাণ। কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম করে জাল দলিল তৈরি করে নিজের নামেই স্থাপনাটি নির্মাণ করছেন তিনি। সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়টির স্থায়ী ক্যাম্পাস করার কথা থাকলেও জেলা প্রশাসনের অভিযানের ফলে বর্তমানে বন্ধ আছে সেই প্রক্রিয়া।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী একুশে পত্রিকাকে জানান, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আমাদের সেই অবৈধ দখলকৃত জায়গায় স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণে জেলা প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে মানববন্ধন করার জন্য চাপ দিতে থাকে। তবে সাফ জানিয়ে দিই আমরা টাকা দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে এসেছি, কারও ব্যক্তিগত জমি দখলে সহযোগিতা করার জন্য নয়। এছাড়া কর্তৃপক্ষ আমাদের স্থায়ী ক্যাম্পাসে নিয়ে যাবে বলে জুন, জুলাই ও আগস্ট এই তিন মাস শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ রাখে। পরে যখন জেলা প্রশাসনের অভিযানের মুখে মাইক্রোওয়েভ স্টেশন সংলগ্ন অবৈধ জায়গায় স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণ বন্ধ করে দেয়া হয় তখন আমাদের আন্দোলনের প্রেক্ষিতে অস্থায়ী ক্যাম্পাসে পুনরায় ক্লাস চালু করে। এই অস্থায়ী ক্যাম্পাসেও রয়েছে নানা দুর্ভোগ। বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠদানের যে একটা পরিবেশ তা এখানে নেই। ভর্তির সময় প্রসপেক্টাসে লেখা ছিলো ২৪ ঘণ্টা বিদ্যুৎ, জেনারেটর, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ক্লাসরুম এসব সুবিধা থাকবে। কিন্তু বিদ্যুৎ গেলে নেই বিকল্প জেনারেটর ব্যবস্থা। এসি নষ্ট হলে আর ঠিক করা হয় না। লাইব্রেরি থাকলেও সেখানে বই চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। বিভিন্ন জাতীয় দিবস বা কোনো অনুষ্ঠান বা ইন্ডাস্ট্রিয়াল ট্যুর হলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কোনো টাকা দেয় না। শিক্ষার্থীদের থেকে চাঁদা তুলে বা স্পন্সর নিয়ে এসব আয়োজন করা হয়। অথচ ভর্তির সময় প্রতিটি শিক্ষার্থীর কাছ থেকেই জাতীয় দিবস ও বিভিন্ন অনুষ্ঠানের নামে টাকা আদায় করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসের অনুষ্ঠানও করা হয়নি। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের নেই কোনো ইনডোর গেমস জোন, কনফারেন্স রুম ও অডিটোরিয়াম রুম। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসি থেকেও নেই। নিয়মিত ক্যাম্পাসে পাওয়া যায় না তাঁকে। আর প্রক্টর নেই ৬ মাস। চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান তাঁর স্ত্রী, ভাই, শ্যালকসহ আত্মীয় পরিজন নিয়ে গড়ে তুলেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ড। নামে ট্রাস্টি বোর্ড হলেও পরিবারতন্ত্রের নিয়মেই চলে এই অস্থায়ী ক্যাম্পাস। আমরা শিক্ষার্থীরা স্থায়ী ক্যাম্পাসসহ এসব অনিয়মের ব্যাপারে ইতোমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে ২০ দফা দাবি দিয়েছি। তারা যদি এসব মেনে না নেয় আমরা আগামী মাস থেকে আন্দোলনে যাবো।

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন একুশে পত্রিকাকে বলেন, কক্সবাজার ইন্টারন্যাশানাল বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণের জন্য মুজিবুর রহমান যে জায়গাটি দখল করছিলো সেটি পাহাড় কেটে করা হচ্ছিলো। খবর পেয়ে আমরা তৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিয়ে স্থাপনা নির্মাণ বন্ধ করে দিই ও জরিমানা করি। এর প্রেক্ষিতে উনি একটি রিট করে। রিট করলেও ওখানে কাজ করার অনুমতি তো দেইনি। আর ঐ বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসের যে অনুষ্ঠান হয়নি তা কেউ আমার কাছে অভিযোগ করেনি। কেউ যদি লিখিত আকারে অভিযোগ করে তাহলে আমি ব্যবস্থা নেবো।

এ বিষয়ে কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ারম্যান লায়ন মুজিবুর রহমান একুশে পত্রিকাকে জানান, দেখুন একটা ভালো কাজ করতে গেলেই বাধা আসবেই। কক্সবাজারে কেউ বিশ্ববিদ্যালয় করার উদ্যোগ নেয়নি। আমি সাহস করে বিশ্ববিদ্যালয় করার উদ্যোগ নিই। আর যখন ধীরে ধীরে তা প্রতিষ্ঠিত করতে যাচ্ছি তখনই স্থানীয় কিছু স্বার্থান্বেষী লোক আমার বিরুদ্ধে লেগেছে। যে জায়গাটা স্থায়ী ক্যাম্পাসের নামে দখল করেছি বলা হচ্ছে সেটা নিয়ে ইতিমধ্যে জেলা প্রশাসকের সাথে সমাধানের চেষ্টা চলছে। আর বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নিয়মিত যায় না বা প্রক্টর ৬ মাস ধরে নেই এসব কথার কোনো সত্যতা নেই। আর ১৫ আগস্ট শোক দিবসের প্রোগ্রাম আমরা করেছি। কোরবানির বন্ধ থাকায় উপস্থিতি কম ছিলো।