মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

চামড়াশিল্পের দুর্দিনে আশা দেখাচ্ছে ‘রিফ লেদার’

প্রকাশিতঃ ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯ | ৯:২৯ অপরাহ্ন


সুমন চৌধুরী : নানা ধরনের পণ্য উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন প্রতি মাসে আমদানি করছে প্রায় ৫০ লাখ বর্গফুট চামড়া। অথচ প্রতি বছর দেশে উৎপাদিত ২২ কোটি ঘনফুট চামড়ার প্রায় অর্ধেকই ব্যবহৃত হচ্ছে না রফতানিযোগ্য পণ্য উৎপাদনে।

চামড়ার আন্তর্জাতিক ক্রেতাজোট লেদার ওয়ার্কিং গ্রুপ এলডব্লিউজি’র ছাড়পত্র না থাকাই এর মূল কারণ। এমন অবস্থায় এলডব্লিউজি সনদ প্রাপ্তির আশা দেখছে দেশের একমাত্র চামড়া রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান ‘রিফ লেদার লিমিটেড’।

এ বিষয়ে রিফ লেদারের পরিচালক মো. মোখলেছুর রহমান একুশে পত্রিকাকে বলেন, আমাদের প্রতিষ্ঠানের তরল বর্জ্য পরিশোধনাগার (ইনফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট বা ইটিপি) সনদ আছে। এবার এলডব্লিউজি (যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংস্থা লেদার ওয়ার্কিং গ্রুপ) সনদ পাওয়ার জন্য আবেদন করেছি।

এলডব্লিউজি সনদ প্রাপ্তির সম্ভাবনার ব্যাপারে মোখলেছুর রহমান বলেন, এই সনদ পাওয়ার জন্য আমরা আমাদের কারখানায় পরিবর্তন এনেছি। চামড়া প্রক্রিয়াজাত মেশিনের সামনে প্রটেক্ট রেলিং, পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা, কর্মচারীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও সচেতনতা বৃদ্ধি, কারখানায় কতটুকু গ্যাস আছে তার পরিমাপের জন্য বিদেশি সতর্কীকরণ মেশিন, পরিবেশের ভারসাম্য ঠিক আছে কিনা তা যাচাইয়ের মেশিনসহ নানা সামগ্রী সংগ্রহ করা হয়েছে।

বিশ্ববাজারে চামড়ার চাহিদা সম্পর্কে জানতে চাইলে রিফ লেদারের পরিচালক বলেন, বিশ্ববাজারে চামড়ার জুতার পরিবর্তে সিনথেটিক বা কাপড় জাতীয় জুতার আগ্রহ বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশ, ভারত আর পাকিস্তান ছাড়া অন্য দেশগুলোতে চামড়া দিয়ে উৎপাদিত পণ্যের ব্যবহার অনেকাংশে কমেছে। এছাড়া, চামড়া শিল্পকে পরিবেশবান্ধব করে গড়ে না তোলা, ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী কারখানার পরিবেশ উন্নত না করা, চাহিদার তুলনায় ব্যাংক ঋণ না পাওয়া, পুঁজি সংকট, দক্ষ শ্রমিকের সংকট, চামড়া প্রক্রিয়াজাত করতে না পারা, সংগৃহ করা কাঁচা চামড়ার গুণগত মান কমে যাওয়া, নতুন চামড়া সংরক্ষণে স্থান সংকট এবং আমলাতান্ত্রিক জটিলতাসহ নানা কারণে বারবার হোঁচট খাচ্ছে চামড়া শিল্প।

চামড়া শিল্পকে অগ্রসর করতে করণীয় সম্পর্কে মোখলেছুর রহমান বলেন, যারা চামড়া শিল্প ব্যবসায় জড়িত সবাইকে মন-মানসিকতার পরিবর্তন আনতে হবে। তবে সবার আগে ইপিটি অবশ্যই থাকতে হবে। ইপিটি সনদধারী যে কোনো প্রতিষ্ঠান এলডব্লিউজি সনদ পাওয়ার জন্য আবেদন করতে পারবে। এ দুটি সনদ থাকলে আন্তর্জাতিক বাজারে ক্রেতারা আমাদের চামড়া কিনতে আগ্রহী হবেন এবং চামড়া রপ্তানির ক্ষেত্রে নতুন সম্ভাবনার সূচনা হবে। কারণ চামড়া রপ্তানীর ক্ষেত্রে ক্রেতারা এই দুটি বিষয় আগে দেখেন।

তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশে প্রক্রিয়াজাত করা চামড়া আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন না হওয়ায় ব্র্যান্ডের চামড়াজাত পণ্য তৈরিতে বিদেশ থেকে চামড়া আমদানি করা হচ্ছে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বাংলাদেশ ৯৪৫ কোটি টাকার চামড়া আমদানি করেছে। বাংলাদেশের ক্রাস্ট ও ফিনিশড চামড়া রপ্তানি অনেকটাই চীনা বাজারের ওপর নির্ভরশীল। যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যকার বাণিজ্য অচলাবস্থার কারণে বাংলাদেশি চামড়ার দাম কমে গেছে।

প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালে চামড়াপণ্যকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয়ভাবে বর্ষপণ্য বা প্রোডাক্ট অব দ্য ইয়ার ঘোষণার পর ২০২১ সালে এ খাত থেকে ৫০০ কোটি ডলার রপ্তানি আয়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করে সরকার। তারপর থেকে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি বাড়া অনেক দূরের কথা, উল্টো কমছে। এ খাত থেকে গত অর্থবছরের রপ্তানি আয় ছয় বছর আগের আয়ের তুলনায়ও কমে গেছে। এ অবস্থায় আগামী দুই বছরের মধ্যে রপ্তানি চারগুণ বাড়িয়ে ৪ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করার লক্ষ্য পূরণ প্রায় অসম্ভব বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

স্বাধীনতার পর ১৯৭২-৭৩ অর্থবছর চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি থেকে আয় হয় ১ কোটি ৬২ লাখ ডলার। তারপর থেকে বাড়তে থাকা রপ্তানি আয় ২০০৫-০৬ অর্থবছরে ৩২ কোটি ৫২ লাখ ডলারে পৌঁছে। ২০১৪-১৫ অর্থবছর তা আরও বেড়ে দাঁড়ায় ১১৩ কোটি ডলারে। দুই বছর পর ২০১৬-১৭ অর্থবছরে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি থেকে আয় হয় ১২৩ কোটি ডলার।

চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি উল্টো দিকে ঘুরে যায় পরের অর্থবছর থেকেই। ২০১৭-১৮ অর্থবছর ১২ শতাংশ কমে এ খাতের রপ্তানি আয় নেমে আসে ১০৮ কোটি ডলারে। আর গত অর্থবছর ৬ শতাংশেরও বেশি কমে নামে ১০২ কোটি ডলারে। এ অবস্থায় ২০২১ সালের মধ্যে এ খাত থেকে ৫০০ কোটি ডলার রপ্তানি আয় করা কঠিন হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

একুশে/এসসি