বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

পুরোনো ক্যাসেট বাজালেন সিডিএ’র প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ

প্রকাশিতঃ ১৭ নভেম্বর ২০১৯ | ৩:০১ অপরাহ্ন

মহসীন কাজী : যে কোনো দুর্ঘটনা ঘটার পর ত্রুটি খুঁজতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে সেবাসংস্থাগুলো। এ ব্যাপারে ইমারত নির্মাণ তদারক প্রতিষ্ঠান সিডিএ’র ভূমিকা হাস্যকর। ভবন নির্মাণের সময় আইন মেনে হচ্ছে কিনা তা না দেখে দুর্ঘটনার পর সংস্থাটি নির্লজ্জ্বের মতো বলে দেয় ‘ভবনটি নির্মাণে ইমারত বিধি অনুসরণ করা হয়নি’। পাথরঘাটার দুর্ঘটনার পরও সেই পুরোনো ক্যাসেট বাজিয়ে এসেছেন সিডিএ’র প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ শাহিনুল ইসলাম খান।

সিডিএ’র কাজ শুধু ভবনের নকশা অনুমোদন নয়। নকশা অনুমোদনের পর ভবন নির্মাণ তদারকির দায়িত্বও সংস্থাটির। তাদের দেখতে হয় প্রদর্শিত নকশা অনুযায়ী কাজটি হচ্ছে কিনা।

আমার জানা মতে, এ যাবতকালে সিডিএ কখনোই তদারকির কাজটি করেনি। করার ইচ্ছেও তাদের ছিল না।

আমি চট্টগ্রামের একটি হাউজিং সমিতির পরিচালক। আমাদের আবাসিক এলাকাটি আমরা ব্যতিক্রম এলাকা হিসেবে গড়ার পরিকল্পনা নিই। এখানে ইমারত বিধি মেনেই সকল ভবন হবে। ইতিমধ্যে এলাকায় হাতেগোনা ভবন উঠে, যারা আইন মানেনি।

আমরা সমিতির পক্ষ থেকে নির্মিতব্য ভবনের বিস্তারিত উল্লেখ করে সিডিএতে একটি অভিযোগ দিই। অভিযোগের পর অনেকদিন নিরব অথরাইজ শাখা। একদিন সরাসরি চেয়ারম্যানকে মৌখিকভাবে জানানোর পর টনক নড়ে অথরাইজ শাখার। কয়েকদিন দৌড়ঝাঁপ করে ইন্সপেক্টর।

ওদিকে কয়েকগুণ বাড়তি গতিতে কাজও চালায় আইন অমান্যকারীরা। ইন্সপেক্টর একটি নোটিস দিয়েই যেন ঘুমে। সবচেয়ে যে ভবনটিতে আইন অমান্য হচ্ছিল তার মালিক দাত খেলিয়ে আমাদের সমিতির গার্ডকে বলে, ‘তোমাদের সমিতি অনেক চেয়েছে, আমাদের কিছু করতে পেরেছে?’ গার্ডের কাছে কথাটি শুনে অপমান লাগল।

আরেকদিন গেলাম সিডিএতে। সরাসরি জানালাম অথরাইজ অফিসার মঞ্জুর হাসানকে। অভিযোগ দেওয়ার পরও অ্যাকশন না হওয়ার কারণ জানতে চাইলাম তাঁর কাছে। তিনি বললেন, উল্টো কথা। জানালেন, ‘এতো অভিযোগ দিয়ে লাভ কী। শহরে তো এভাবেই ভবন নির্মাণ চলছে। আপনারা চাইলেই কি পারবেন নিয়মে আনতে। কথা শুনে আমি তাজ্জব। বললাম, সারা শহরে অনিয়ম হোক, আমাদের আবাসিকে কেউ ইমারত নির্মাণবিধি লঙ্ঘন করতে পারবে না। আমরা এটাকে মডেল আবাসিক করতে চাই। আমার কথায় কোনো সদুত্তর নেই তার কাছে, বুঝে গেলাম আমি। ফিরলাম অনেকটা নিরাশ হয়ে।

বছর খানেকের মধ্যেই আমাদের আবাসিকে দাঁড়িয়ে গেছে অভিযুক্ত অট্টালিকা। তিনটি ভবন এক ইঞ্চি ওপেন স্পেস তো রাখেইনি; বরং সামনের অংশ রাস্তার উপর ঝুলিয়ে দিয়েছে। সেদিনও নাকি ওই একই মালিক গার্ডকে বললো, ‘দেখো তোমাদের স্যারদের আপত্তি সত্ত্বেও উঠে গেছে আমার বিল্ডিং’।

সিডিএ’র সবচেয়ে লোভনীয় পোস্টিং নাকি অথরাইজ অফিসারের পদ। এ চেয়ারে কেউ একবার বসলে আর উঠতে চান না। এখন যারা আছেন তারাও নাকি বহুবছর ধরে। একজন তো পদোন্নতিই চান না, ধরে রাখতে চান অথরাইজের চেয়ার।

চট্টগ্রাম নগরীতে এ পর্যন্ত যত ভবন ধস কিংবা হেলে পড়েছে সবগুলোর পরিদর্শন রিপোর্টে উঠে আসে একই কথা ‘ইমারত নির্মাণবিধি মানা হয়নি।’ তাহলে কোথায় মানা হয় এই বিধি। এই প্রশ্ন এখন সবার। ইমারত নির্মাণ বিধি মানতে বাধ্য করবেই বা কে?

মহসীন কাজী : যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন ও বোর্ড সদস্য, চট্টগ্রাম ওয়াসা