আজাদীর কাশেম শাহ পরিচয় দিচ্ছেন রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী (অডিও)

চট্টগ্রাম : সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে বাংলাদেশ টেলিভিশন চট্টগ্রাম কেন্দ্রের (সিটিভি) হিসাব শাখায় তথ্য জানতে চাওয়ার অভিযোগ উঠেছে এক সংগীত পরিচালকের বিরুদ্ধে। এই সংক্রান্ত একটি অডিও একুশে পত্রিকার হাতে এসেছে।

১ মিনিট ৪৭ সেকেন্ডের অডিওতে শোনা যায়, আজাদীর সাংবাদিক কাশেম শাহ পরিচয়ে বাংলাদেশ টেলিভিশন চট্টগ্রাম কেন্দ্রের (সিটিভি) হিসাব শাখার নির্বাহী পরিচালক মঞ্জুরুল করিমকে ফোন দেন (নাম্বার-০১৬৭৪২২১১৩৩) রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী সহিদুর রহমান।

বলেন, করিম সাহেব বলছেন? জ্বি। আপনি চট্টগ্রাম টেলিভিশন কেন্দ্রে এখন নেই বোধহয়। জ্বি আছি, এখনো আছি। অ্যাকাউন্টস সেকশন দেখছেন না! হ্যাঁ দেখছি।

এরপর ওপ্রান্ত থেকে সহিদুর রহমান বলেন, আমি আজাদীর কাশেম শাহ বলছি। কয়েকদিন আগে চট্টগ্রাম টেলিভিশনের দুর্নীতি নিয়ে একটি রিপোর্ট করেছিলাম। দেখেছেন তো! মন্জুরুল করিম জবাব দেন, হ্যাঁ, দেখেছি।

এরপর তিনি শিল্পী সম্মানীখাতে বার্ষিক বাজেটের তথ্য জানতে চান। উত্তরে মঞ্জুরুল করিম মহাব্যবস্থাপকের অনুমতি ছাড়া তথ্য প্রদানে অস্বীকৃতি জানালে সহিদুর রহমান বিষয়টি অন্যভাবে দেখবেন জানিয়ে টেলিফোনের লাইন কেটে দেন।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সাংবাদিক পরিচয় দেয়া রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী সহিদুর রহমান একুশে পত্রিকাকে জানান, হ্যাঁ, আমি সাংবাদিক পরিচয়ে বাংলাদেশ টেলিভিশনের হিসাব সংরক্ষণ শাখার নির্বাহী পরিচালক মঞ্জুরুল করিমকে ফোন দিয়েছিলাম। ফোন দিয়ে শিল্পীদের জন্য বার্ষিক বাজেট কতো তা জানতে চেয়েছিলাম। কারণ টেলিভিশনের নানা বিষয় নিয়ে আমরা একটা সংবাদ সম্মেলন করছি। এর জন্য সঠিক তথ্য-উপাত্ত দরকার। শিল্পী পরিচয়ে ফোন দিলে উনারা তথ্য দেন না। তাই দৈনিক আজাদীর সাংবাদিক কাশেম শাহ্‘র পরিচয় দিয়ে আমি মঞ্জুরুল করিমকে ফোন দিই।

আপনি একজন সংগীতশিল্পী। তথ্য জানতে সাংবাদিক পরিচয়ে আবির্ভূত হওয়াটা কতটা যুক্তিযুক্ত বা নৈতিক-এমন প্রশ্নে শিল্পী সহিদুর রহমান বলেন, বিষয়টি অযৌক্তিক কিংবা অনৈতিক নয়। কারণ বিষয়টি কাশেম শাহ জানেন। তাকে অবহিত করেই আমি ফোন করেছি। আমরা যারা তালিকাভুক্ত শিল্পী আছি তারা ও বাংলাদেশ টেলিভিশন একে অন্যের পরিপূরক। কোন বাজে উদ্দেশ্য নেই আমার।

এ বিষয়ে দৈনিক আজাদীর সহ সম্পাদক কাশেম শাহ্ বলেন, সহিদুর রহমান আমাকে না জানিয়ে বিটিভিতে ফোন দিয়েছেন। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর তিনি একদিন রাত সোয়া ৩টার দিকে আমাকে ফোন করেন, তখন আমি ঘুমে,। তিনি বলেন, আমি আপনার সঙ্গে অন্যায় করেছি। আমি তখন বলেছি, আপনার সঙ্গে আমি কালকে কথা বলবো। এখন রাখছি।

কাশেম শাহ্ বলেন, আমি একটা লেখা লিখেছি, তিনি এটা নিয়ে উদ্দেশ্য হাসিল করতে চান। তিনি গর্হিত কাজ করেছেন। আজকে বিকেলে তিনি প্রেস কনফারেন্স করেছেন, সেখানে আমি সবার সামনে তাকে বলেছি, কাজটা খুব অন্যায় করেছেন, আমার পরিচয় কেন দিয়েছেন। আপনার মধ্যেই দুর্বলতা আছে।

বিষয়টি নিয়ে কথা হয় বাংলাদেশ টেলিভিশন চট্টগ্রাম কেন্দ্রের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) নিতাই কুমার ভট্টাচার্যের সাথে। তিনি একুশে পত্রিকাকে জানান, সহিদুর রহমান নামে যে শিল্পী সাংবাদিক পরিচয়ে আমাদের অ্যাকাউন্টসে ফোন দিয়েছেন তিনি সংগীত পরিচালক বিভাগে তালিকাভুক্ত। আগে তিনি নিয়মের বাইরে গিয়ে প্রতি মাসে দুটি করে সংগীত পরিচালনা করতেন, যা টেলিভিশনের ইতিহাসে নেই। আর উনার প্রোগ্রামে সংগীত পরিচালকের কোনো ভূমিকা নেই। তাই সংগীত পরিচালক হিসেবে যে সম্মানী তিনি পেতেন তা বন্ধ আছে।

তাছাড়া সংগীত-পরিচালকের উচিত অনুষ্ঠানে সংগীতের মান যাচাই করা। কিন্তু তা করা হয় না। তাই উনি অনুষ্ঠানটি বন্ধ করে টেলিভিশনের বিরুদ্ধে অপপ্রচারে মাঠে নেমেছেন। আমি এই কেন্দ্রের দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে সবকিছুিই নিয়মতান্ত্রিকভাবে পরিচালনা করছি। আগে অনেকে নিয়মের বাইরে গিয়ে ৪-৫ টা প্রোগ্রামও করতো। এখন আর এসব হয় না। আর এই কারণেই নিয়ম বহির্ভূতভাবে দুইয়ের অধিক প্রোগ্রাম যারা করতেন, তারা কখনো লিগ্যাল নোটিশ, কখনো মামলা, কখনো ব্যানার নিয়ে মানববন্ধন করে নিয়মিত অপপ্রচার করে যাচ্ছেন। কিন্তু আমি তো নিয়মের বাইরে যাবো না। অতীতের চেয়ে বাংলাদেশ টেলিভিশন এখন অনেক ভালো অবস্থায় আছে। ক্ষেত্রবিশেষে ঢাকা কেন্দ্র থেকেও এগিয়ে আছে চট্টগ্রাম কেন্দ্র। যোগ করেন জিএম নিতাই কুমার ভট্টাচার্য।

এদিকে সামান্য তথ্য জানার জন্য নিজের পরিচয় আড়াল করে একজন রবীন্দ্রসংগীত শিল্পীর সাংবাদিক পরিচয়-ধারণকে ভালোভাবে নেননি অনেকেই। তাদের মতে, একজন প্রকৃত শিল্পীর চিন্তা, রুচি একেবারেই পুতপবিত্র থাকে। তারা গতানুগতিক ও বৈষয়িক হন না। তাদের কাছ থেকে শিক্ষনীয় থাকে অনেককিছুই। শিল্পী সহিদুর রহমান এমন ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে কী শেখালেন সেটিই বড় প্রশ্ন।

এদিকে এ রিপোর্ট লেখার সময় চট্টগ্রাম শিল্পী সমিতির ব্যানারে বাংলাদেশ টেলিভিশন চট্টগ্রাম কেন্দ্রে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ তুলে সংবাদ সম্মেলন করছেন সহিদুর রহমান। তিনি সংগঠনিটির সভাপতি।

একুশে/এসআর/এটি