শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

করোনা সন্দেহে চিকিৎসা পেলেন না হার্টের রোগী, অবশেষে মৃত্যুতেই স্বস্তি

প্রকাশিতঃ ৩১ মার্চ ২০২০ | ৩:৪৭ অপরাহ্ন

চট্টগ্রাম : চট্টগ্রামের চন্দনাইশ সাতবাড়িয়ার বাবুল বড়ুয়ার হার্টের সমস্যা কিছুদিন ধরে। তার মাঝেই সপ্তাহ খানেক আগে হার্ট অ্যাটাক করেন তিনি।সাথে শ্বাসকষ্ট। এ অবস্থায় স্বজনরা তাকে নিয়ে আসেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।

কিন্তু চমেক হাসপাতাল গ্রহণ না করায় স্বজনরা তাকে নিয়ে যান আন্দরকিল্লা জেনারেল হাসপাতালে। সেখানেও তার চিকিৎসা হলো না। নিয়ে যাওয়া হলো চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন হাসপাতালে। করোনা-আক্রান্ত সন্দেহে ঠাঁই হলো না সেখানেও।

এবার করোনা-সন্দেহ দূর করতে নিয়ে যাওয়া হলো ফৌজদারহাট বক্ষব্যাধি হাসপাতালে। নমুনা সংগ্রহ করে তারাও রাখলো না বাবুল বড়ুয়াকে। চিকিৎসা ছাড়াই তিনদিন কেটে গেলো হার্ট অ্যাটাকের রোগী বাবুল বড়ুয়ার।

এর মধ্যে তার অবস্থার অবনতি হয় আরও। কিন্তু তার জন্য কোথাও চিকিৎসা নেই। রাষ্ট্র, সরকার, ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠান কেউ নেই তার পাশে।চরম অসহায়ত্ব নিয়ে বাবুল বড়ুয়ার স্বজনরা দ্বারস্থ হন ডা. সুব্রত বড়ুয়ার।

সুব্রত বড়ুয়ার অনুরোধে অবশেষে নগরের রয়েল হাসপাতাল তাকে গ্রহণে রাজি হয়। কিন্তু ততক্ষণেই মুমূর্ষু অবস্থা তার। শুক্রবার (২৭ মার্চ) রাতে ভর্তির পর শনিবার ভোরে মারা যান বাবুল বড়ুয়া। এদিকে, তিনদিন পর পাওয়া রিপোর্টে জানা গেলো বাবুল বড়ুয়ার দেহে করোনা ভাইরাসের অস্তিত্ব নেই।

কিন্তু করোনা-সন্দেহে চিকিৎসাজগতের বর্তমান নির্মম, নিষ্ঠুরতায় পৃথিবী থেকে ‌’নাই’ হয়ে গেলেন ৬২ বছর বয়সী বাবুল বড়ুয়া।

ফৌজদারহাট বক্ষব্যাধি হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ডা. প্রণব বড়ুয়া সোমবার (৩০ মার্চ) একুশে পত্রিকাকে এই তথ্য দিয়ে বললেন, সময়মতো চিকিৎসা পেলে বেঁচে যেতেন বাবুল বড়ুয়া। তিনিই জানালেন, হতভাগ্য বাবুল বড়ুয়াকে নিয়ে স্বজনদের ছুটোছুটি আর সরকারি হাসপাতালগুলোর অবহেলার মর্মন্তুদ এই গল্পটি। তবে সে ক্ষেত্রে কিছুটা হলেও উদারতা দেখিয়েছে রয়েল হাসপাতাল। শেষমুহূর্তের চেষ্টাটা তারাই করেছে।

এব্যাপারে জানতে চাইলে রয়েল হাসপাতালের পরিচালক ডা. মোহাম্মদ সেলিম একুশে পত্রিকাকে বলেন, হ্যাঁ, ঘটনা সত্য। অবহেলার শিকার এ রোগীটি কোথাও যখন চিকিৎসা পাচ্ছিলেন না, তখন আমরাই তাকে গ্রহণ করেছি। কিন্তু ততক্ষণে রোগীটি অনেকটা নেতিয়ে পড়েন। আমরা চেষ্টা করেও বাঁচাতে পারিনি। রাতে ভর্তি হয়ে ভোরে মান যান।

রোগীর স্বজন বা পরিচিত কারো নাম্বার, বিস্তারিত তথ্য দিয়ে সহযোগিতার অনুরোধ জানালে ডা. সেলিম জানান, হাসপাতালের রেজিস্ট্রার্ড খাতায় তার ব্যাপারে খুব বেশি তথ্য নেই। পরে তিনি রয়েল হাসপাতালের ম্যানেজার আমিনের নাম্বার দেন। আমিনকে ফোন করা হলে জানান তিনি এখন ঘরে। তারও বক্তব্য, ওই রোগীটার ব্যাপারে খুব বেশি তথ্য নেই। তিনি দিলেন ডা. সুব্রত বড়ুয়ার (যার মাধ্যমে রয়েল হাসপাতালে এসেছিলেন) নাম্বার।

সুব্রত বড়ুয়া জানালেন, বিভিন্ন স্থানে চিকিৎসা পেতে ব্যর্থ হওয়া রোগিটিকে সর্বশেষ ফিরিয়ে দেয় মেট্রোপলিটন হাসপাতালও। আমার এক চাচাত ভাইয়ের অনুরোধে শেষপর্যন্ত রয়েল হাসপাতালের সিসিইউতে ভর্তির ব্যবস্থা করি। হার্ট অ্যাটাকের পর সময়মতো সঠিক চিকিৎসা পেলে বাবুল বড়ুয়াকে বাঁচানো যেতো- বললেন সুব্রত বড়ুয়াও।

তিনিও চন্দনাইশের সাতবাড়িয়ায় বাড়ি, এটুকু ছাড়া আর কোনো তথ্য জানাতে পারেননি বাবলু বড়ুয়ার ব্যাপারে।

একুশে পত্রিকা অন্যভাবে খবর নিয়ে জেনেছে, বাবুল বড়ুয়া চট্টগ্রামের চন্দনািইশ উপজেলার পূর্ব সাতবাড়িয়ার হাজীপাড়া গ্রামের বিমল বড়ুয়ার ছেলে।