শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আম্পানের প্রভাবে জলোচ্ছ্বাসের শঙ্কা যেসব এলাকায়

প্রকাশিতঃ ২০ মে ২০২০ | ১২:০০ অপরাহ্ন


ঢাকা : বঙ্গোপসাগর থেকে ধেয়ে আসা অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় আম্পানের প্রভাবে দেশের উপকূলীয় নিচু এলাকায়গুলোয় স্বাভাবিকের চেয়ে ১০ থেকে ১৫ ফুট বেশি উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে। বুধবার সকালে আবহাওয়া অফিসের বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

সকাল ছয়টায় আবহাওয়া অধিদপ্তরের বিশেষ বুলেটিনে বলা হয়েছে, ঘূর্ণিঝড়টি সকাল ৬টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৫৬৫ কি.মি. দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৫৪৫ কি.মি. দক্ষিণপশ্চিমে, মংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৩৯০ কি.মি. দক্ষিণপশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৪১০ কি.মি. দক্ষিণপশ্চিমে অবস্থান করছিল। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ২২০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটে সাগর খুবই বিক্ষুব্ধ রয়েছে।

জলোচ্ছ্বাসের সতর্কতায় বলা হয়, ঘূর্ণিঝড় এবং দ্বিতীয় পক্ষের চাঁদের সময়ের শেষ দিনের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী ও চট্টগ্রাম এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোর নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে থেকে ১০ থেকে ১৫ ফুট অধিক উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।

আবহাওয়া অফিস জানায়, ঘূর্ণিঝড় আম্পানের কারণে মংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত নামিয়ে তার পরিবর্তে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। এছাড়া উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোও এই ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে। তবে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্র বন্দরে ৬ নম্বর বিপদ সংকেতই দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।

ঘূর্ণিঝড় অতিক্রমকালে সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী ও চট্টগ্রাম জেলাসমূহ এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহে ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণসহ ঘণ্টায় ১৪০ থেকে ১৬০ কি.মি. বেগে দমকা অথবা ঝড়ো হওয়া বয়ে যেতে পারে বলে আবহাওয়ার বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে।

উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।

ঘূর্ণিঝড়ের সময় ঝড়ো হাওয়ায় প্রাণক্ষয়ের পাশাপাশি জলোচ্ছ্বাসে বিপুল ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা থাকে। ঘূর্ণিঝড় আঘাত আনার আগেই উপকূলীয় নিচু এলাকা থেকে মানুষ ও গবাদি পশু সরিয়ে নেয়া হয়েছে। সম্ভাব্য ক্ষয়-ক্ষতি এড়াতে উপকূলীয় এলাকার বাসিন্দাদের ইতোমধ্যে সতর্ক করা হচ্ছে। অনেককে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেয়া হয়েছে।

১৯৭০ সালের প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়ের সময় বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস দেখা গিয়েছিল। সেই বছরের ১২ নভেম্বর ঘূর্ণিঝড়ের সময় ১০ থেকে ৩৩ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হয়েছিল চট্টগ্রামের নিচু এলাকা। ঝড় উপকূল পার হওয়ার সময় বাতাসের সর্বোচ্চ গতি ছিল ঘণ্টায় ২২৪ কিলোমিটার।

১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়ের সময় চট্টগ্রামে ১২ থেকে ২২ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস দেখা গিয়েছিল। ওই ঝড়ের সময় বাতাসের সর্বোচ্চ গতি ছিল ২২৫ কিলোমিটার।