বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ধরাছোঁয়ার বাইরে নুরজাহান গ্রুপের কর্ণধার!

প্রকাশিতঃ ১৭ ফেব্রুয়ারী ২০১৯ | ৭:০৮ অপরাহ্ন


শরীফুল রুকন : অন্তত দুটি মামলায় দু’বছরের সাজাপ্রাপ্ত হয়েছেন চট্টগ্রামভিত্তিক ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান নুরজাহান গ্রুপের কর্ণধার টিপু সুলতান। প্রায় এক বছর আগে উক্ত রায় ঘোষণা করা হয়। এছাড়া তার বিরুদ্ধে আরো অন্তত ৫টি মামলা বিচারাধীন। এসব মামলায় তাকে গ্রেফতারের জন্য পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত। কিন্তু শিল্পপতি টিপু সুলতান এখনও রয়েছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে।

দণ্ডিত টিপু সুলতান চট্টগ্রাম নগরের পাঁচলাইশ থানাধীন ও আর নিজাম রোডের ৪ নম্বর সড়কের ৫১ নম্বর বাসার বাসিন্দা আবদুল খালেকের ছেলে। নুরজাহান গ্রুপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান মেরিন ভেজিটেবল অয়েলের চেয়ারম্যান তিনি; মামলায় উক্ত প্রতিষ্ঠানের ঠিকানা উল্লেখ করা হয়েছে ১৬২৮/১৬৭১, রামজয় মহাজন লেইন, কোতোয়ালী, চট্টগ্রাম।

মামলার বিবরণে দেখা যায়, পাওনা পরিশোধের জন্য ২০১৫ সালের ২৫ জানুয়ারি আবদুল আলীম নামের এক ব্যবসায়ীকে পূবালী ব্যাংকের এক কোটি ৮৩ লাখ ৩০ হাজার টাকার চেক দেন টিপু সুলতান। ওই বছরের ৩০ মার্চ পর্যাপ্ত তহবিলের অভাবে চেকটি প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পর ২১ জুন আবদুল আলীম বাদি হয়ে চেকের বিপরীতে একটি মামলা করেন।

উক্ত মামলায় ২০১৫ সালের ৩১ আগস্ট অভিযুক্ত টিপু সুলতান জামিন নিয়েছেন। এরপর ২০১৬ সালের ১ ফেব্রুয়ারি আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে মামলার বিচার শুরু হয়।

দু’বছর পর ২০১৮ সালের ২৪ এপ্রিল এ মামলায় রায় ঘোষণা করেন প্রথম যুগ্ম মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. রাশেদ তালুকদার। আদেশে টিপু সুলতানকে দোষী সাব্যস্ত করে এক বছরের কারাদণ্ডের পাশাপাশি এক কোটি ৮৩ লাখ ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

অন্যদিকে টিপু সুলতানের বিরুদ্ধে ২০১৫ সালের ২১ জুন আরো একটি চেক প্রতারণার মামলা করেন ব্যবসায়ী আবদুল আলীম। একই বছরের ২৯ জানুয়ারি দেয়া ন্যাশনাল ব্যাংকের এক কোটি ৮৩ লাখ ৩০ হাজার টাকার চেকটি পর্যাপ্ত তহবিলের অভাবে ব্যাংকে প্রত্যাখ্যাত হওয়ার ঘটনায় এ মামলাটি করা হয়। উক্ত মামলায় ২০১৬ সালের ১ ফেব্রুয়ারি টিপু সুলতানের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়।

২০১৮ সালের ২৪ এপ্রিল এ মামলায় রায় ঘোষণা করেন প্রথম যুগ্ম মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. রাশেদ তালুকদার। এতে টিপু সুলতানকে দোষী সাব্যস্ত করে এক বছরের কারাদণ্ডের পাশাপাশি এক কোটি ৮৩ লাখ ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করেন বিচারক।

এখনও টিপু সুলতান আইনের আওতায় না আসায় ক্ষুব্ধ আবদুল আলীম। তিনি বলেন, টিপু সুলতান ও তার ভাই জহির আহমদ রতনের কাছ থেকে ১১ কোটি টাকা পাই। এজন্য তাদের বিরুদ্ধে আমি ৭টি চেক প্রতারণার মামলা করেছি। এরমধ্যে দুটি মামলায় রায় হয়েছে। দুটি মামলা বিচারাধীন আছে। বাকি তিনটি মামলার রায়ের জন্য অপেক্ষায় আছি। এসব মামলা আপোসে প্রত্যাহার না করায় আমাকে মেরে ফেলার হুমকি দেয়া হচ্ছে।

এসব বিষয় জানিয়ে গত ২০ জানুয়ারি কোতোয়ালী থানায় সাধারণ ডায়েরী করেছেন বলেও জানান আবদুল আলীম।

বাদি পক্ষের আইনজীবী মো. আকবর আলী বলেন, টিপু সুলতানের বিরুদ্ধে সাজা হওয়া দুটি মামলায় উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশ ব্যাকেট করেছি আমরা। এ ছাড়া টিপু সুলতানের বিরুদ্ধে আরো ৫টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। এসব মামলায় তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা রয়েছে। আসামির অফিসের ঠিকানা কোতোয়ালী থানাধীন এলাকায় হওয়ায় এসব পরোয়ানা উক্ত থানায় পৌঁছার কথা।

এ বিষয়ে জানতে চাওয়ার পর খোঁজ নিয়ে কোতোয়ালী থানার ওসি মোহাম্মদ মহসীন জানান, টিপু সুলতানের বিরুদ্ধে আদালতের গ্রেফতারি পরোয়ানার আদেশ তাঁরা এখনো পাননি।

প্রসঙ্গত নুরজাহান গ্রুপ ২২টি ব্যাংক থেকে প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে। যার পুরোটাই এখন খেলাপি বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ এসেছে।

একুশে/এসআর/এটি