চট্টগ্রাম : একটি হাত পুরো নেই। অন্য হাত কনুই পর্যন্ত। বলা চলে, দুই হাত-ই অচল, অক্ষম। এমন শারীরিক সীমাবদ্ধতার মধ্যেও থেমে নেই মেধাবি হাবিবুর রহমান। প্রাথমিক, জুনিয়র ও মাধ্যমিক পেরিয়ে দিচ্ছেন উচ্চ মাধ্যমিক। অন্য স্বাভাবিক পরীক্ষার্থীদের মতোই পরীক্ষা দিচ্ছেন হাবিব। অদম্য সেই হাবিবের পাশে দাঁড়ালেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।
শনিবার (১৩ এপ্রিল) হাবিবের হাতে নগদ ৫০ হাজার টাকা তুলে দিয়ে পড়ালেখা চালিয়ে যেতে উৎসাহ জুগিয়েছেন মন্ত্রী। পড়ালেখা চালিয়ে নিতে যাতে কোনো সমস্যা না হয়, সে বিষয়টিও দেখার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।
চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার দক্ষিণ রাজানগর ইউনিয়নের দক্ষিণ নিশ্চিন্তাপুর গ্রামের অটোরিকশাচালক রমজান আলী ও রাশেদা বেগম দম্পতির সন্তান হাবিবুর রহমান। দুই হাত ছাড়াই জীবনযুদ্ধে অবতীর্ণ হাবিবকে নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশের পর বিষয়টি নজরে আসে তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদের। সঙ্গে সঙ্গে তিনি হাবিবের পাশে দাঁড়ানোর ইচ্ছা পোষণ করেন। শনিবার দুপুরে নগরের দেওয়ানজী পুকুর পাড়ের বাসভবনে অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানে হাবিবের হাতে নগদ এই অর্থ তুলে দেন তথ্যমন্ত্রী।
এসময় মন্ত্রী বলেন, ‘শারীরিকভাবে সচল, সক্ষম অনেক শিক্ষার্থীও যেখানে উচ্চ মাধ্যমিকের গণ্ডি পার হতে পারে না, তখন হাবিব তাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে অদম্য ইচ্ছা থাকলে সবকিছু সম্ভব। সমাজে ভিন্নভাবে সক্ষম এসব মানুষের পাশে দাঁড়ানো সবারই দায়িত্ব।’
হাবিবের বাবা রমজান আলী তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, বয়স যখন পাঁচ বছর, তখন রাঙ্গুনিয়া থেকে খাগড়াছড়িতে বেড়াতে যাওয়ার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় হাবিবের একটি হাত সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় ও অন্যটি থেঁতলে যায়। থেঁতলে যাওয়ার কারণে এক হাতের কনুই পর্যন্ত কেটে ফেলতে হয়। তার দুই হাত না থাকলেও ছোটবেলা থেকে সে সবকিছু নিজে করার চেষ্টা করত। এখন অন্য স্বাভাবিক ছেলেমেয়েদের মতো সে-ও নিয়মিত কলেজে যায়, কম্পিউটার ব্যবহার করে, মুঠোফোন চালায়, নিজ হাতে খাওয়া, এমনকি ক্রিকেট-ফুটবলসহ শারীরিক কসরতপূর্ণ খেলাধুলায় নৈপুণ্য দেখায়।
হাবিব বলেন, অস্বাভাবিকভাবে লিখতে একটু অসুবিধা হয়। তবুও এগিয়ে যেতে চান তিনি। কারও বোঝা হয়ে না থেকে নিজের পায়ে দাঁড়াতে চান। ভবিষ্যতে প্রকৌশলী হওয়ার ইচ্ছা হাবিবের। পাশে দাঁড়ানোয় তথ্যমন্ত্রীর কাছে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন তিনি।
প্রসঙ্গত, এসএসসিতে ৪ দশমিক ৮৬ পেয়ে রাঙ্গুনিয়া সরকারি কলেজে ভর্তি হয়েছিলেন হাবিব। প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় জিপিএ-৫ ও ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি এবং জেএসসি পরীক্ষায় ৪ দশমিক ৬৭ পেয়ে উত্তীর্ণ হন তিনি। উপবৃত্তিসহ কলেজ কর্তৃপক্ষ তাঁকে সব সুযোগ-সুবিধা দিয়েছে।
একুশে/এসআর/এটি