শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মিতু হত্যা মামলার আসামি সাইদুল গ্রেপ্তার

প্রকাশিতঃ ১২ মে ২০২১ | ১১:২৯ অপরাহ্ন


চট্টগ্রাম : পাঁচ বছর আগে চট্টগ্রামে মাহমুদা আক্তার মিতু হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে সাইদুল ইসলাম সিকদার প্রকাশ শাকু (৪৫) নামের এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব।

আজ বুধবার রাত ৯টার দিকে রাঙ্গুনিয়ার রানীরহাট বাজার এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে র‌্যাব-৭ চট্টগ্রামের মিডিয়া অফিসার এএসপি নুরুল আফসার জানান।

তিনি বলেন, পাঁচলাইশ থানায় দায়ের হওয়া চাঞ্চল্যকর মিতু হত্যার ঘটনায় দায়ের করা নতুন মামলায় শাকু এজাহারভুক্ত আসামি। এজন্য তাকে গ্রামের বাড়ি রাঙ্গুনিয়া থেকে গ্রেপ্তার করেছি আমরা।

২০১৬ সালের ৫ জুন সকালে চট্টগ্রাম নগরীর জিইসি মোড়ে ছেলেকে স্কুল বাসে তুলে দিতে যাওয়ার সময় সড়কে খুন হন পুলিশ কর্মকর্তা বাবুল আক্তারের স্ত্রী মিতু।

এ ঘটনায় আজ বুধবার বাবুল আক্তারসহ আটজনকে আসামি করে চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ থানায় নতুন করে যে মামলা তার বাবা মোশাররফ হোসেন করেছেন, ওই মামলায় সাইদুল ইসলাম সিকদারকে আসামি করা হয়েছে।

গ্রেপ্তার সাইদুল মিতু হত্যা মামলার অন্যতম আসামি কামরুল ইসলাম সিকদার ওরফে মুছার বড় ভাই।

এর আগে ২০১৬ সালের ১ জুলাই সাইদুলকে গ্রেপ্তার করা হয়; সে সময় তার বিরুদ্ধে মিতু হত্যাকাণ্ডে মোটরসাইকেল সরবরাহ করার অভিযোগ আনা হয়েছিল। পরে সাইদুল জামিনে মুক্তি পান।

অন্যদিকে সাইদুলের ভাই মুছা এখনও নিখোঁজ। এর আগে ২০১৬ সালের ৪ জুলাই মুছার স্ত্রী পান্না আক্তার চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে মুছাকে আদালতে হাজির করার দাবি করেন। ২২ জুন বন্দর থানা এলাকায় তাদের এক পরিচিত জনের বাসা থেকে মুছাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে তিনি জানান।

মুছার স্ত্রী পান্না আক্তার আজ একুশে পত্রিকাকে বলেন, মিতু হত্যার পর আমার স্বামী মুছা এবং ভাশুর শাকুকে আমার সামনে থেকে আটক করেছিলেন ডবলমুরিং থানার তৎকালীন ওসি এ কে এম মহিউদ্দিন সেলিম এবং পরিদর্শক নেজাম উদ্দিন (বর্তমানে কোতোয়ালী থানার ওসি)। পাশাপাশি গ্রামের বাড়ি রাণিরহাট থেকে আমাকে, আমার স্বামী মুছার দুই ভাইসহ পরিবারের সাত সদস্যকে আটক করে পুলিশ। অজ্ঞাত স্থানে রেখে সাতদিন পরে মুছা ও শাকু ছাড়া পরিবারের বাকি ৫ জনকে ছেড়ে দেওয়া হয়৷

‘আমার সামনে থেকে পুলিশ অফিসার নেজাম উদ্দিনসহ অন্যরা আমার স্বামী ও ভাশুরকে আটক করে তারা বলেন-আমরা ধরিনি। আমার ভাশুর মিতু হত্যা মামলায় (স্ত্রী মিতু খুনে বাবুল আক্তার বাদী হয়ে করা মামলা) জামিনে আছেন। গত ৫ বছর আমার স্বামীর হদিস পাচ্ছি না। অথচ আজ রাতে গ্রামের বাড়ি থেকে র‍্যাবের একটি টিম শাকুকে তুলে নিয়ে গেছে। বিষয়টি মিডিয়াকে জানিয়ে রাখলাম।’ বলেন পান্না আক্তার।

মিতু হত্যাকাণ্ডের পর মুছা এবং তার বড় ভাই সাকুকে আটকের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন ওসি নেজাম উদ্দিন। তিনি আজ রাতে একুশে পত্রিকাকে বলেন, ‘এটা মিথ্যা কথা। আমি এ বিষয়ে কিছুই জানি না।’

এর আগে আজ বুধবার সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে পিবিআই প্রধান ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার বলেন, বাবুল আক্তারকে হেফাজতে নিয়ে আমরা যে প্রশ্নগুলো করেছি, তিনি সেসব প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেননি। এরপর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আইজিপি মহোদয়কে বিষয়টি জানালে ওনারা বলেছেন, তদন্তে যা আসবে, তাই করতে হবে। শেষ পর্যন্ত আমরা তাই করছি। নড়াইল ও ঢাকা থেকে তার দুই বন্ধুকে আটক করে তাদের জবানবন্দি নেয়া হয়েছে। পরকীয়ার জেরে বাবুল আক্তার নিজের পরিকল্পনায় তার স্ত্রীকে খুন করিয়েছেন।

এদিকে মাহমুদা খানম মিতু হত্যা মামলায় তার স্বামী সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। আজ বুধবার বেলা তিনটার দিকে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার জাহান শুনানি শেষে এ আদেশ দেন।

নগর পুলিশের সহকারী কমিশনার (প্রসিকিউশন) কাজী শাহাবুদ্দীন আহমেদ বলেন, বাবুল আক্তারকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পিবিআই সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করে। শুনানি শেষে আদালত পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

রিমান্ডের আবেদনে পিবিআই বলেছে, হত্যাকাণ্ডে কারা জড়িত এবং কী উদ্দেশ্যে খুন, সে সম্পর্ক জানতে আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন। শুনানিতে বাবুলের পক্ষে দাঁড়ান আইনজীবী আরিফুর রহমান। তিনি রিমান্ড বাতিল ও জামিনের আবেদন করেন। আদালত আসামিপক্ষের সে আবেদন নাকচ করে দেন।