শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

‘আইসিইউ-ভেন্টিলেশন নৈরাজ্যে ফুঁসছে চট্টগ্রাম’

যে কোনো সময় বড় দুর্ঘটনার আশঙ্কা সুজনের

প্রকাশিতঃ ১০ জুন ২০২০ | ১০:২৮ অপরাহ্ন


চট্টগ্রাম : জীবনরক্ষার আইসিইউ-ভেন্টিলেশন নৈরাজ্যে দুঃখে-ক্ষোভে ফুঁসছে চট্টগ্রাম। করোনাভাইরাস আমাদের জীবনধারাকে কেড়ে নিয়েছে। প্রতিনিয়ত জীবনমৃত্যুর মাঝখানে অবস্থান করছে মানুষের অমূল্য জীবন। কখন যে কার ঘরে প্রাণঘাতি এ ভাইরাস হানা দেয় তা কারো জানা নেই। আর এরকম একটি দুঃষহ পরিস্থিতিতে শ্বাসকষ্টে ভোগা করোনা রোগীকে একটুকু স্বস্তি দিতে পারে আইসিইউ-ভেন্টিলেশন সুবিধা। অথচ এই আইসিইউ-ভেন্টিলেশন সুবিধাই মিলছে না বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামের করোনা আক্রান্ত রোগীদের।

একদিকে প্রতিদিন বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষের অমূল্য জীবন ঝরে যাচ্ছে এই নগরীতে, অন্যদিকে প্রতিনিয়ত মৃত্যুর সাথে যুদ্ধ করে বাঁচার করুণ আকুতি জানাচ্ছেন আক্রান্ত রোগীরা। মানুষ মৃত্যুকে জয় করে বাঁচতে চাইছেন প্রাণপণ। কিন্তু কে দেবে তাদের স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি, সে প্রশ্ন আজ চট্টগ্রামবাসীর মুখে মুখে।

এমন অভিমত ব্যক্ত করেছেন জনদুর্ভোগ লাঘবে জনতার ঐক্য চাই শীর্ষক নাগরিক উদ্যোগের প্রধান উপদেষ্টা ও চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন।

বুধবার (১০ জুন) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে খোরশেদ আলম সুজন আরো বলেন, চট্টগ্রামের মানুষের চোখেমুখে আজ উদ্বেগ-উৎকন্ঠা। আইসিইউ-ভেন্টিলেশন সুবিধা থাকা সত্বেও হাসপাতালগুলো প্রতিদিন রোগী ফেরত দেওয়ার নিষ্ঠুর কার্যকলাপ চালিয়ে যাচ্ছে। কোনো কিছুতেই তাদের দৌরাত্ন্য থামানো যাচ্ছে না। দেখা যাচ্ছে যে, রোগীগণ সারাদিন আইসিইউ সুবিধার আশায় হাসপাতালের দ্বারে দ্বারে ঘুরে রাতের বেলা মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছে।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ, জেনারেল হাসপাতাল, মা ও শিশু হাসপাতালসহ নগরীর বেসরকারি হাসপাতালসমূহে কয়টি আইসিইউ-ভেন্টিলেশন সুবিধা আছে তা রোগী কিংবা তার আত্নীয়স্বজনদের অজানা। ফলত এই আইসিইউ-ভেন্টিলেশন সুবিধা নিয়েও নিষ্ঠুর বাণিজ্য চলছে। তাই চট্টগ্রাম নগরীতে আইসিইউ-ভেন্টিলেশন সুবিধা সম্বলিত কয়টি বেড রয়েছে তার পরিসংখ্যান সরজমিনে পরিদর্শন করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মেডিকেল কোরের একজন উর্দ্ধতন কর্মকর্তার নেতৃত্বে ডাটাবেজ তৈরি করে কেন্দ্রীয়ভাবে প্রকৃত রোগীর অনুকূলে বরাদ্ধ করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানান সুজন।

তার মতে, এতে করে আইসিইউ-ভেন্টিলেশন নিয়ে চট্টগ্রামের রোগীদের সন্দেহ এবং অবিশ্বাসও দুর হবে। দেখা যাছে যে আইসিইউ খালি রেখে ভূয়া বুকিং এর মাধ্যমে এসব আইসিইউ-ভেন্টিলেশন বুকিং করে রাখা হচ্ছে, যার কারণে প্রকৃত রোগীরা এসব সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ফলে অকালে ঝরে পড়ছে অনেক তাজা প্রাণ। বিপরীতে দুঃখ-ক্ষোভে ফুঁসছে চট্টগ্রামবাসী। এ ক্ষোভ থেকে যে কোনো সময় বড় ধরনের দূর্ঘটনাও ঘটে যেতে পারে বলে আশংকা প্রকাশ করেন তিনি।

সুজন বলেন, অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্যি যে, চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের আওতাধীন বায়েজিদ থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সগির আহমেদ গতকাল হাসপাতালের দ্বারে দ্বারে ঘুরে বিনাচিকিৎসায় মারা গিয়েছেন। দলীয় রাজনীতির পাশাপাশি স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনসহ বিভিন্ন গণতান্ত্রিক আন্দোলনে চট্টগ্রামের একজন পরিচিত মুখ ছিলেন সগির আহমেদ। ঢাকার রাজপথে নূর হোসেন শহীদ হওয়ার মিছিলেও উপস্থিত ছিলেন তিনি। একজন প্রতিভাবান রাজনীতিবিদ হিসেবে যিনি নিজের জীবনকে তিলে তিলে জনগনের জন্য উৎসর্গ করেছিলেন অথচ সেই মানুষটিই মৃত্যুর সময় সামান্য চিকিৎসাসেবা থেকেও বঞ্চিত হয়েছেন। হাসপাতালগুলো তাকে চিকিৎসা সেবা না দিয়ে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে। আমরা মনে করি এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। তার মৃত্যু ও চিকিৎসা সেবা বঞ্চিতের বিষয়ে একজন প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেট অথবা বিচারপতির নেতৃত্বে একটি নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গঠনের মাধ্যমে প্রকৃত ঘটনা উদঘাটন এবং দায়ী ব্যক্তিদের কঠোর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানের অনুরোধ করেন সুজন।

সুজনের প্রশ্ন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভিশন ২০২১ বাস্তবায়নে বাঁধাগ্রস্ত করতে চায় কারা? কারা প্রধানমন্ত্রীর এতোসব অর্জন প্রশ্নবিদ্ধ করতে চায়? এদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য আইনশৃংখলা বাহিনীর কাছে আহ্বান জানান সুজন।