পুলিশ-ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম আদালতে মামলার নেপথ্যে কী


চট্টগ্রাম : চট্টগ্রাম মহানগরি পুলিশের কয়েকজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে নির্যাতনের শিকার হওয়ার অভিযোগ করেছিলেন জসিম উদ্দিন নামে এক ব্যক্তি। এ ঘটনার পেছনে দাউদকান্দি থানার তৎকালীন এসআই নজরুল ইসলাম ও আব্দুল হান্নানের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বলেও অভিযোগ করেছিলেন তিনি।

এ অভিযোগটির বিভাগীয় তদন্তের সময় জসিম লিখিত জবানবন্দি দেন, তাকে নির্যাতনের ঘটনায় এসআই নজরুল ও হান্নানের কোনো সম্পৃক্ততা নেই এবং তাদের বিরুদ্ধে তার কোনো অভিযোগও নেই। এ জবানবন্দি দেন তিনি ২০১৫ সালের অক্টোবর মাসে। অভিযোগকারী জসিমের জবানবন্দির উপর ভিত্তি করে বিভাগীয় মামলা থেকে খালাস দেওয়া হয় এসআই নজরুল ইসলাম ও আব্দুল হান্নানকে।

এ ঘটনার ৫ বছর পর সেই জসিম ঘটালেন এবার আরেক কাণ্ড। যে এসআই নজরুল ও হান্নানের বিরুদ্ধে তিনি নিজ হাতে জবানবন্দি দিয়েছিলেন কোনো অভিযোগ নেই বলে, তাদের বিরুদ্ধেই একই অভিযোগে গত ২৬ আগস্ট চট্টগ্রাম আদালতে করলেন মামলা। ওই মামলায় মোট ৩ পুলিশ ও ৪ ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তের আদেশ দিয়েছেন আদালত।

সম্প্রতি অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ কক্সবাজার মেরিন ড্রাইভ সড়কে পুলিশের গুলিতে নিহত হওয়ার পর পুলিশের বিরুদ্ধে আদালতে ও হেডকোয়ার্টারে একের পর এক অভিযোগ যাচ্ছে। কিছু কিছু মামলায় দেখা যাচ্ছে, তালিকাভুক্ত ডাকাত, মাদক কারবারিরাও ভুয়া মামলা ঠুকে দিচ্ছেন আদালতে।

এ প্রেক্ষাপটে বিভাগীয় তদন্তে জসিমের অভিযোগ নিষ্পত্তি হওয়ার পরও পুণরায় পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা করাকে হয়রানিমূলকই বলছেন মামলার বিবাদীরা। তারা বলছেন, জসিম কখনো নিজে নিজে অপহরণের শিকার হন। পরে পুলিশের তদন্তে বেরিয়ে আসে এটি অপহরণ ছিল না। জসিমকে অপহরণের ঘটনার অভিযোগকারী আলাউদ্দিন নিজেই তদন্তকারী পুলিশ কর্মকর্তাকে লিখিত জবানবন্দি দিয়েছেন, জসিমই তাকে এই নাটক সাজিয়ে থানায় অভিযোগ করতে বলেছেন।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, জসিম কখনো নিজের স্ত্রীকে বাদী করে ভাইজিকে ভিকটিম সাজিয়ে দায়ের করে নারী ও শিশু নির্যাতন মামলা। পরে তদন্তে বেরিয়ে আসে এই মামলা মিথ্যা, হয়রানিমূলক। উল্টো তখন তাদের বিরুদ্ধেই মামলা দায়ের হয় আদালতে। এ মামলায় জেল খাটেন তারা। আদালতে শাহাবুদ্দিনের বিরুদ্ধে এমন মিথ্যা মামলা না করার মুচলেকা দিয়ে জামিন পান জসিমসহ মামলার বাদি।

পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, পুলিশের বিরুদ্ধেও জসিম নিয়মিত হেডকোয়ার্টারে দায়ের করেন অভিযোগ। এ সময় তিনি সিএমপির ডিসি, এডিসি, পাহাড়তলী থানা, সদরঘাট থানা, পতেঙ্গা থানা, সিআইডি চট্টগ্রাম, ডিবি, দাউদকান্দি থানার প্রায় ১২ জন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে পুলিশ হেডকোয়ার্টারে অভিযোগ দেন। পরে এসব অভিযোগের বিভাগীয় তদন্তে কর্মকর্তারা খালাস পান। এছাড়া পুলিশের বিরুদ্ধে আদালতেও দায়ের করেন মামলা। যে প্রতিষ্ঠানে তিনি চাকরি করতেন সে প্রতিষ্ঠানের মালিকদের বিরুদ্ধে দায়ের করেছেন দুই ডজন মামলা। গত কয়েকদিন আগে পুলিশের ৯ কর্মকর্তা ও ৪ ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে নালিশী আদালতে গেছেন মামলা করতে।

নিজের সাবেক কর্মস্থল ‘ওয়েলটেক বাংলাদেশ’ এর মালিক সাহাবুদ্দিন এবং তার অংশীদারদের বিরুদ্ধে প্রায় ২৪টি মামলা এবং অভিযোগ করেছেন জসিম। চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, মানিকগঞ্জ, ফরিদপুরসহ একাধিক আদালতে জসিম এসব মামলাগুলো করেন। এসব মামলায় কখনও তিনি নিজে বাদী হয়েছেন, কখনও বা তার স্ত্রী কিংবা আত্মীয়স্বজনকে করেছেন বাদী। এসব মামলা করতে গিয়ে মিথ্যা তথ্য দিয়ে হয়রানি করায় আদালতের কাছে মুচলেকাও দিয়েছেন তিনি।

এদিকে অতীতে পুলিশের বিভাগীয় তদন্তে নিষ্পত্তি হওয়া একটি অভিযোগকে আদালতে নালিশী অভিযোগ আকারে সামনে এনে আবারও নিজেকে আলোচনায় এনেছেন জসিম। গত ২৬ আগস্ট চট্টগ্রাম মহানগর মূখ্য হাকিম আদালতে ২০১৪ সালে ডিবি কার্যালয়ের নির্যাতনের বিষয় নিয়ে এই মামলা দায়ের করেন তিনি। যেখানে আসামি করা হয় ৯ জন পুলিশ কর্মকর্তা এবং ৪ জন ব্যবসায়ীকে।

শাহাবুদ্দিন নামে এক ব্যবসায়ী একুশে পত্রিকাকে জানান, ২০১২ সালের ১৪ এপ্রিল তিনি, বিষ্ণুপদ পালিত ও কাজল বৈদ্যসহ তিন ব্যবসায়ী ফৌজদারহাট শিল্প এলাকায় ‘ওয়েলটেক বাংলাদেশ’ নামে একটি কারখানা স্থাপন করেন। যেখানে চাকরি করতেন জসিম। পরবর্তীতে মালিকেরা জসিমকে বিশ্বস্ত মনে করে ব্যবসা পরিচালনার দায়িত্ব দেন। সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে জসিম সূচনা এন্টারপ্রাইজ নামে একটি ভুয়া ভাউচার বানিয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ‘ওয়েলটেক বাংলাদেশে’র উৎপাদিত বিভিন্ন যন্ত্রাংশ বিক্রি করে প্রতিষ্ঠানের প্রায় ১৫ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেন।

এছাড়া সূচনা এন্টারপ্রাইজের নামে তৈরি করা বিভিন্ন কাগজপত্র দেখিয়ে বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক থেকে দুই দফায় ১৫ ও ২০ লাখ টাকাসহ মোট ৩৫ লাখ টাকা ঋণ গ্রহণ করে। পরবর্তীতে ঋণ পরিশোধ না করায় ব্যাংক কতৃপক্ষ তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে। সে মামলায় জসিম বিভিন্ন মেয়াদের সাজাভোগ করেন।

শাহাবুদ্দিন জানান, জসিমের প্রতারণার বিষয়টি জানাজানি হয়ে গেলে ‘ওয়েলটেক বাংলাদেশে’র মালিকরা তার হিসাব বুঝিয়ে দেওয়ার তাগিদ দেন। সেখান থেকেই তাদের উপর চড়াও হন জসিম। শুরু করেন সিরিজ মামলা।

তিনি আরও জানান, তিনি ও তার প্রতিষ্ঠানের অন্যান্য অংশীদারদের বিরুদ্ধে একেএকে প্রায় ২৪টি মামলা ও অভিযোগ করেছেন জসিম। তার করা এসব মামলার তদন্তে অধিকাংশ ক্ষেত্রে ঘটনার সত্যতা না পাওয়ায় উল্টো তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আদালতে সুপারিশ করেছেন তদন্ত কর্মকর্তারা।

জসিমের দায়ের করা মিথ্যা মামলার তথ্য দিয়ে শাহাবুদ্দিন বলেন, ‘২০১৬ সালে জসিম তার ভাই আবুল কাশেমের মেয়ে নাবিয়া আক্তারকে ভিকটিম এবং তার ভাবি শিরীণ আক্তারকে বাদী সাজিয়ে দিয়ে কুমিল্লা জেলার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনালে আমাদের বিরুদ্ধে একটি ধর্ষণ মামলা (১৭১/১৬) করেন।’

‘পরে তদন্ত রিপোর্টে ঘটনার সত্যতা না পাওয়ায় তদন্ত কর্মকর্তা বাদীনীর বিরুদ্ধে ১৭ ধারায় ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেন। আদালত মামলাটি মিথ্যা এবং বানোয়াট সাব্যস্ত করে তদন্ত কর্মকর্তার সুপারিশ মোতাবেক মামলার বাদীনী, সাক্ষী এবং সহযোগিদের বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা (২৭১/১৮) গ্রহণ করেন।’ যোগ করেন শাহাবুদ্দিন।

এ মামলা মামলায় জসিম, কাশেম এবং শিরীণ গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে গেলে ২০১৮ সালের ১৭ এপ্রিল কুমিল্লার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনালে আর কোথাও শাহাবুদ্দিনদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করবেন না উল্লেখ করে মুচলেকা দিয়ে জামিন পায় তারা।

শাহাবুদ্দিন বলেন, ‘এসবের পরও থেমে থাকেনি জসিম। গত বছর জাতীয় জরুরি সেবা ‘৯৯৯’ ব্যবহার করে অপহরণ নাটক করে থানায় তার স্ত্রীকে দিয়ে করতে চেয়েছিলেন অপহরণ মামলা।’

তিনি জানান, ২০১৯ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারী রাত আনুমানিক ১০টার দিকে আলাউদ্দিন নামে এক ব্যক্তি পুলিশের জরুরি সেবা নম্বর ‘৯৯৯’ এ ফোন দিয়ে জানান, কালো রঙের একটি মাইক্রোবাসে করে আগ্রাবাদ ব্যাংক কলোনি থেকে জসিম উদ্দিন সিকদার নামে এক ব্যক্তিকে অপহরণ করা হচ্ছে। এ ঘটনায় অপহরণ মামলা দায়ের করে আলাউদ্দিন নামে এক ব্যক্তি। কিন্তু ডবলমুরিং থানার তদন্তে বেরিয়ে আসে এ ঘটনা ছিল সাজানো। পরে বাদীর বিরুদ্ধে ২১১ ধারায় মামলা করে পুলিশ। পরে অপহরণ মামলাটি জসিমের প্ররোচনায় দায়ের করেন বলে পুলিশের কাছে জবানবন্দি দেন অপহরণ মামলার আলাউদ্দিন।’

পুলিশ কর্মকর্তাদের দাবি, এসব কারণে ক্ষিপ্ত হয়ে জসিম বিভিন্ন সময় পুলিশের বিরুদ্ধেও পুলিশের ঊর্ধ্বতন মহলে অভিযোগ করতেন। বিভাগীয় মামলায় পড়ে হয়রানির শিকার হতেন পুলিশ কর্মকর্তারা। এরকম মিথ্যা মামলা করার কারণে জসিমের বিরুদ্ধে পাল্টা হওয়া বেশ কয়েকটি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। এসব ছাড়াও তার বিরুদ্ধে হওয়া মামলাগুলো হচ্ছে, সিআর ১৩৮২/১২, ১৪৬৪/১৩ এবং চেক ডিজঅনার মামলা ১৮৬/১৪, ৩৮২/১৪।

এসব মামলায় জসিম উদ্দিন বেশ কয়েকবার বিভিন্ন মেয়াদের জেল ও অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হয়েছেন। এছাড়া জসিমের বিরুদ্ধে ২০১৪ সালে দণ্ডবিধির ৪৫৮, ৩৪২, ৫০৬, ৩৮৬, ৩৮০ ধারায় সদরঘাট থানায় রুজু হয় একটি মামলা। মামলাটি বর্তমানে আদালতে বিচারাধীন আছে। সদরঘাট থানায় হওয়া এই মামলাকে সামনে রেখে জসিম গত ২৬ আগস্ট চট্টগ্রামের আদালতে উক্ত মামলাটি করেন।

তার করা এই নালিশি মামলায় আসামি করা হয় ৯ জন পুলিশ কর্মকর্তা ও ৪ জন ব্যবসায়ীকে। পুলিশ কর্মকর্তারা সবাই তৎকালীন সিএমপির গোয়েন্দা শাখা, পতেঙ্গা ও সদরঘাট থানা এবং কুমিল্লার দাউদকান্দি থানায় কর্মরত ছিলেন। আর ব্যবসায়ীরা ছিলেন জসিমের আগের কর্মস্থল ‘ওয়েলটেক বাংলাদেশে’র মালিক।

আদালত সূত্রে জানা যায়, জসিমের করা মামলায় আসামি করার চেষ্টা করা হয় সিএমপির গোয়েন্দা বিভাগের সাবেক অতিরিক্ত উপ-কমিশনার বাবুল আক্তার, সদরঘাট থানার সাবেক ওসি প্রণব চৌধুরী, সদরঘাট থানার সাবেক পরিদর্শক (তদন্ত) মর্জিনা আক্তার, এসআই সন্তোষ চাকমা, এসআই কামরুল এবং এসআই তালাত মাহমুদকে। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ গ্রহণযোগ্য না হওয়ায় আদালত প্রাথমিকভাবে তাদেরকে আসামির তালিকা থেকে বাদ দেন।

পরে আদালত ব্যবসায়ী এস.এম সাহাবুদ্দিন, বিষ্ণুপদ পালিত, কাজল কান্তি বৈদ্য, জিয়াউর রহমান এবং পরিদর্শক লিয়াকত আলী, দাউদকান্দি থানার সাবেক দুই এসআই নজরুল ও হান্নানের বিরুদ্ধে জসিমের অভিযোগটি সিএমপির গোয়েন্দা উত্তর বিভাগের উপ-কমিশনারকে তদন্তের নির্দেশ দেন।

এই মামলায় ১১ ও ১২ নং আসামি, তৎকালীন দাউদকান্দি থানার এসআই নজরুল ও এসআই হান্নানের বিষয়ে জসিম উদ্দিন অভিযোগ এনেছেন চট্টগ্রামে আটকের পর নির্যাতনের পেছনে তাদের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। অথচ তাদের বিরুদ্ধে জসিমের করা পুলিশ হেডকোয়ার্টারের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে কুমিল্লা জেলা পুলিশের বিভাগীয় মামলায় (মামলা নং ২৭/২০১৫) জসিম তার স্বাক্ষরিত লিখিত জবানবন্দিতে দাবি করেন, ‘চট্টগ্রামে আমাকে আটকের ব্যাপারে দাউদকান্দি থানার এসআই নজরুল ইসলামের কোন হাত নেই এবং তার বিরুদ্ধে আমার কোন অভিযোগ নাই।’ একইভাবে এসআই আব্দুল হান্নানের বিষয়েও এই ঘটনায় সম্পৃক্ততা নেই বলে জবানবন্দি দেন৷ পরে ২০১৫ সালের ২৩ আগস্ট বিভাগীয় মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কুমিল্লা জেলার পুলিশ সুপার বরাবর প্রতিবেদন দিলে চূড়ান্ত আদেশে পুলিশের এই দুই কর্মকর্তা খালাস পান।

এ ব্যাপারে এসআই নজরুল ইসলাম একুশে পত্রিকাকে বলেন, ‘আমি শুধু আদালতের ওয়ারেন্ট কপি ওসি স্যারের হাওলামতে আসামির তৎকালীন ঠিকানা পতেঙ্গা থানায় ওয়ারেন্টের রিকুইজিশন কপি পাঠিয়েছিলাম। এটা আমার পেশাগত দায়িত্ব পালন ছিল। পরবর্তীতে পতেঙ্গা থানায় কী হয়েছিল আমি জানি না এবং এটা আমাদের বিভাগীয় মামলায় জসিম নিজে লিখিত জবানবন্দি দিয়ে উল্লেখ করেছেন, এসব বিষয়ে আমার হাত নাই। যে কারণে আমি খালাস পাই। ৫ বছর আগে নিষ্পত্তি হওয়া ঘটনাটি আবার তুলে কেন তিনি আবার আমাকে মামলায় জড়ালেন বুঝতে পারছি না।’

এ বিষয়ে ব্যবসায়ী শাহাবুদ্দিন একুশে পত্রিকাকে বলেন, ‘জসিমের করা ২৪ টি মিথ্যা মামলা ও অভিযোগ চালাতে গিয়ে আমি নিঃস্ব হয়ে পড়েছি। তার করা মামলা পরিচালনা করতে গিয়ে আমি এখন ব্যবসা বাণিজ্য করতে পারি না। আমার বয়স এখন ৬৫। এই বয়সে এসব মামলার ভার আমি সইতে পারছি না। আমার বিরুদ্ধে সে যেভাবে পেরেছে মামলা করেছে। ২০১৮ সালের ১৭ এপ্রিল কুমিল্লা জেলার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনালে জসিম আমাদের বিরুদ্ধে আর কোন মিথ্যা মামলা করবে না বলে মুচলেকা দিয়ে জামিন পায়। কিন্তু এরপরও সে আবার মামলা করেছে। আমি আদালতের কাছে এবং সংবাদ সম্মেলন করে দেশবাসীর কাছে এর আশু প্রতিকার চাইবো।’

লিখিত জবানবন্দিতে এসআই নজরুল ও হান্নানকে নির্দোষ উল্লেখ করার পর একই বিষয়ে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করার কারণ জানতে চাইলে জসিম উদ্দিন একুশে পত্রিকাকে বলেন, এসআই নজরুল ও হান্নানের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হওয়ার পর সাক্ষী দেয়ার জন্য পুলিশ আমাকে বারবার কুমিল্লার মুরাদনগরে ডাকছিল। ১০-১২ বার ডাকার পর মুরাদনগরের এএসপির স্টেনো বললেন, আপনি গাড়ি ভাড়া দিয়ে আর কতবার আসবেন? আপনাকে আর আসতে হবে না, আপনি এখানে স্বাক্ষর দিয়ে চলে যান, আমরা লিখে নেব। তখন আমি সাদা কাগজে স্বাক্ষর দিয়ে দিই। সেখানে তারা যা লেখার লিখে নিয়েছে।

তিনি বলেন, জামিন নেয়ার পর দাউদকান্দি থানায় রিকল জমা দিলেও অবৈধভাবে আমাকে গ্রেপ্তার করতে পতেঙ্গা থানায় ওয়ারেন্টের কপি পাঠানো হয়েছিল। এ বিষয়ে সিকিউরিটি সেলে অভিযোগ করার সময় এসআই হান্নান ও নজরুলের নাম আমি দিইনি। পুলিশ সদর দপ্তরই তদন্ত করে তাদের নাম পেয়েছে। তাদেরকে যখন পুলিশ সদর দপ্তর থেকে কল দিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে, তারা স্বীকার করেছে। নজরুল বলেছে, হান্নান সাহেব আমাকে দিয়েছে করার জন্য। হান্নান সাহেব বলেছে, আমার ড্রয়ার থেকে আমার অগোচরে নিয়ে নজরুল সাহেব পাঠিয়েছে সেটা। নজরুল সাহেব এটাও বলেছে, ওসি সাহেবের কথামতো আমি এটা দিয়েছি। বিভাগীয় মামলার মধ্যে তারা এসব লিখিতভাবে স্বীকার করেছে। সেগুলোর নথি আনলে তাৎক্ষণিক সমস্ত কিছু জানা যাবে।

একের পর এক মিথ্যা মামলা দিয়ে তাকে হয়রানি করা হয়েছে দাবি করে জসিম উদ্দিন বলেন, সর্বশেষ চট্টগ্রাম আদালতে দায়ের করা মামলার আসামি শাহাবুদ্দিন আমার অধীনে চাকরি করতো। পরবর্তীতে আমার ব্যবসায় অংশীদার হওয়ার প্রস্তাব দেন তিনি। পরে অংশীদার হওয়ার জন্য টাকা দেবে-দিচ্ছে করে আমাকে ঘুরাচ্ছিল। অংশীদার তো মুখে বললেই হয়ে যায় না, হিস্যা অনুযায়ী টাকা দেয়াও লাগে। কিন্তু তিনি টাকা দিচ্ছে না। আমি চায়না যাওয়ার পর তিনি বিভিন্ন রকম ষড়যন্ত্র শুরু করলেন। এরপর একের পর এক মিথ্যা মামলা দিয়ে আমাকে হয়রানি শুরু করেছেন।

মিথ্যা মামলা না করার বিষয়ে আদালতে মুচলেকা দেয়া প্রসঙ্গে জসিম বলেন, আদালতের কাজ তো মুচলেকা নেয়া না, বিচার করা। সে (শাহাবুদ্দিন) আদালতকে বাধ্য করে আমার কাছ থেকে মুচলেকা নিয়েছে, আমি মিথ্যা মামলা করবো না বলে। মিথ্যা মামলা করার তো প্রশ্নই আসে না।

এদিকে জসিমকে অপহরণের ঘটনার অভিযোগকারী আলাউদ্দিন নিজেই তদন্তকারী পুলিশ কর্মকর্তাকে লিখিত জবানবন্দি দিয়েছেন, জসিমই তাকে এই নাটক সাজিয়ে থানায় অভিযোগ করতে বলেছেন।

এ বিষয়ে জসিম উদ্দিন একুশে পত্রিকাকে বলেন, শাহাবুদ্দিন আমাকে অপহরণ করেছিল, এরপর বিষ খাইয়ে বায়েজিদের এক জায়গায় ফেলে রেখেছিল। এসআই নবগোপাল আমাকে সেখান থেকে উদ্ধার করে। এ ঘটনায় তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়। তাদের প্রভাবের ফলে সেই মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়া হয়। পরে আমি নারাজি দিলে মামলাটি সিআইডিকে তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়। এ প্রেক্ষিতে সেটা সিআইডিতে গেছে, তারা টাকা-পয়সা খেয়ে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়েছে। এরপর আমি রিভিশন করেছি, রিভিশনেও তারা প্রভাব খাটিয়েছে। মামলাটা এখন উচ্চ আদালতে আছে।