চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আ.লীগের তিন বছরের কমিটির সাত বছর পার


ইমরান এমি : দীর্ঘ ৩৫ বছর ধরেই চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছিলেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য প্রয়াত আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু ও মোছলেম উদ্দিন আহমেদ। বাবুর মৃত্যুর পর ২০১২ সালের ২৩ ডিসেম্বর দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের নতুন কমিটির অনুমোদন দেন।

তিন বছরের জন্য গঠিত ওই কমিটি এখন পার করেছে ৭ বছর ৮ মাস। দীর্ঘদিন ধরে সম্মেলন না হওয়ায় হতাশ তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা। অন্যদিকে, নতুন নেতৃত্ব তৈরি না হওয়ায় দলের কার্যক্রম ঝিমিয়ে পড়েছে। এছাড়া নতুন কমিটি না হওয়ায় কোন্দলেও জড়িয়ে পড়েছেন অনেক নেতা। তবে দল ক্ষমতাসীন হওয়ায় এ নিয়ে প্রকাশ্যে মুখ খুলছেন না নেতারা।

এদিকে তিন বছর মেয়াদী দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের কমিটির সাড়ে সাত বছর পার হলেও শিগগিরই নতুন কমিটি করার কোন আভাস নেই। তবে করোনা মহামারীর আগে সম্মেলন করার জন্য কেন্দ্রীয় কমিটির পক্ষ থেকে তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছিল বলে একুশে পত্রিকাকে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান।

তিনি জানান, সম্মেলন করার জন্য হাই কমান্ড তারিখ নির্ধারণ করলেও পরবর্তীতে আমাদের সভাপতি বোয়ালখালী আসনের উপ-নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় সেটা সম্ভব হয়নি। এরপর চলে আসে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন। সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন শেষ হওয়ার আগেই শুরু হয় করোনাকাল। এখন তো আর সম্মেলন করা যাবে না, করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে সম্মেলন করা হবে।

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সম্মেলনের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি আছে। কেন্দ্রীয় হাইকমান্ড যখনই বলবে, তখনই সম্মেলন করতে পারবো।

সম্মেলন হলে সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থী হবেন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে মফিজুর রহমান বলেন, যদি নেতাকর্মীরা চায় তাহলে সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থী হবো। আর সবকিছু নির্ভর করছে দলীয় সভানেত্রীর উপর। তিনি যদি মনে করেন আমাকে আবারো রাখা দরকার, তাহলে থাকতে আমার কোন আপত্তি নেই।

এদিকে দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের কমিটি হওয়ার পর থেকে বিতর্ক যেন পিছু ছাড়ছে না নেতাদের। দক্ষিণ জেলার আওতাধীন উপজেলা ও পৌরসভা কমিটি গঠন নিয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্যদের সাথে নেতাদের দ্বন্ধ লেগেই আছে। এছাড়া বিগত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দলের প্রার্থী বাছাই নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ।

ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন দেওয়া নিয়ে দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোছলেম উদ্দীন আহমদের অনুসারীদের সাথে সংঘর্ষ পর্যন্ত হয় আনোয়ারা আসনের সংসদ সদস্য ও ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের অনুসারীদের। মোছলেম উদ্দীনকে “সওদাগর” আখ্যা দিয়ে বিক্ষোভও করে আনোয়ারা ও কর্ণফুলী উপজেলা আওয়ামী লীগ। তবে সে দ্বন্ধ এখন তেমন নেই।

এদিকে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের আওতাধীন সাতটি উপজেলা ও ৫টি পৌরসভায় আওয়ামী লীগের কমিটি আছে। তবে বেশিরভাগ কমিটির বয়স এখন ৫ থেকে ২৪ বছর পর্যন্ত। সবচেয়ে পুরনো কমিটি হচ্ছে বাঁশখালী উপজেলা কমিটি। ২৪ বছর আগে ১৯৯৬ সালে বর্তমান সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমানকে সভাপতি করে এই কমিটি গঠন করা হয়েছিল।

এরপর দুই যুগ পার হলেও সম্মেলন বা নতুন কমিটি করার কোন তোড়জোড় দেখা যাচ্ছে না। নানা কারণে সমালোচিত সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমানের কারণে সমালোচনায় পড়তে হচ্ছে উপজেলা ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগকেও। এছাড়া আনোয়ারা উপজেলা, কর্ণফুলী উপজেলা, পটিয়া উপজেলা ও পৌরসভা ছাড়া অন্য প্রায় সব ইউনিটের মেয়াদ শেষ হয়েছে।

এসব ইউনিটে কমিটি করার চিন্তা-ভাবনা আছে কি না জানতে চাইলে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান বলেন, প্রায় সব ইউনিটে আমাদের পূর্ণাঙ্গ কমিটি আছে। শুধুমাত্র সাতকানিয়া পৌরসভায় আহবায়ক কমিটি। আর করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব কমলে যে সব ইউনিটের মেয়াদ নেই সেখানে নতুন কমিটি গঠনে হাত দেওয়া হবে।

এদিকে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ায় নতুন কমিটিতে কারা আসছেন তা নিয়ে চলছে আলোচনা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সম্মেলন ছাড়া হলে কমিটি হবে এক ধরনের, আবার সম্মেলন হলে তখন আসবে দলের তৃণমূল থেকে উঠে আসা পরীক্ষিতরা।

আবার কেউ মনে করছেন, বাবুপুত্র সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদই হতে পারেন দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগে পিতার উত্তরসূরী। যার কারণে বিগত কমিটিতে রাখা হয়নি জাবেদকে। সভাপতি পদে জাবেদ আসলে সাধারণ সম্পাদক পদে পরিবর্তন আসবে না বলেও মনে করছেন কেউ কেউ। আবার অনেকে আলোচনায় আনছেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মাঈনুদ্দীন হাসান চৌধুরীকে। ত্যাগী এ নেতার ভাগ্য এবার খুলতে পারে বলেও আলোচনা আছে।

সার্বিক বিষয়ে জানার জন্য চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোছলেম উদ্দীন আহমদের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি অসুস্থ আছেন জানিয়ে পরে কথা বলবেন বলে জানান।

এদিকে সম্মেলনের মাধ্যমেই চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের নতুন কমিটি হবে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ। তিনি একুশে পত্রিকা বলেন, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের কমিটি সম্মেলনের মাধ্যমেই হবে। করোনাভাইরাসের আগে আমরা একটি নির্দেশনাও দিয়েছিলাম। কিন্তু করোনার কারণে সেটা হয়ে উঠেনি। করোনায় সাংগঠনিক কার্যক্রমও স্থগিত ছিল।

‘ধীরে ধীরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও এখনো সেভাবে মানুষের সুরক্ষার নিশ্চয়তা দেওয়া যাচ্ছে না। করোনা পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসার পর আমরা সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ করবো। স্বাভাবিকভাবে আওয়ামী লীগের সম্মেলন তো যেমন তেমন করে হবে না। হাজার হাজার নেতাকর্মীর উপস্থিতিতেই হবে। তাই আরো কয়েক মাস যাওয়ার পর পরিস্থিতি বিবেচনা করে সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করা হবে।’ বলেন মাহবুব উল আলম হানিফ।