মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

সিডিএ’র নির্মাণ কাজে নেই নিরাপত্তা বেষ্টনী, টাকায় মিলছে রাস্তায় পার্কিং

প্রকাশিতঃ ২২ সেপ্টেম্বর ২০২০ | ৭:১৩ অপরাহ্ন

জোবায়েদ ইবনে শাহাদত : ভবন বা অবকাঠামোর উন্নয়ন কাজ বা নির্মাণের ক্ষেত্রে নিরাপত্তা বেষ্টনী বাধ্যতামূলক। এই নিয়ম না মানলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়ে থাকে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। অথচ সিডিএ’র অধীনে নির্মাণাধীন এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজে দেখা যাচ্ছে না নিরাপত্তা বেষ্টনী।

সিডিএ’র উদাসহীনতার কারণে সাধারণ পথচারী এবং যানবাহনগুলো ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে সড়কে। উন্মুক্তভাবে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ কাজ করায় ঘটছে দুর্ঘটনাও।

সরেজমিন দেখা যায়, ইপিজেড ফুটওভার ব্রিজের পর থেকে বন্দরটিলা অংশে নিরাপত্তা বেষ্টনী না দিয়েই চলছে নির্মাণ কাজ। এ ক্ষেত্রে পাইলিংয়ের নির্মাণ কাজ চলা অংশে গাড়ি না যাওয়ার জন্য হাতের ইশারায় যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করতে দেখা গেছে শ্রমিকদের। রাস্তা জুড়ে খানাখন্দ এবং নির্মাণ কাজের কারণে সড়ক সংকীর্ণ হওয়ায় এই ইশারা না মেনে বাধ্য হয়ে বিপদসীমার ভেতর দিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে যানবাহন ও পথচারীদের।

তবে বানৌজা ঈসা খাঁ থেকে কাটগড় পর্যন্ত অংশের কাজ সম্পন্ন হলেও সেখানে রাখা হয়েছে নিরাপত্তা বেষ্টনী। রাস্তার মাঝে এই বেষ্টনীর ভেতরে সারিবদ্ধভাবে পার্কিং করা আছে অন্তত শখানেক বাস ও ট্রাক। দীর্ঘ সারি দেখে বাস টার্মিনাল মনে করে ভুল করেতে পারেন যে কেউ। এসব সারিবদ্ধ বাসের পাশেই দেখা মিলেছে গাড়ির গ্যারেজও। কিছুদূর সামনে গিয়ে দেখা যায় হকারদের ভ্যান। যেখানে হরেক রকম পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসেছেন হকাররা।

অভিযোগ আছে, বেষ্টনী দেয়া অংশকে ভাড়া দেয়া হয় পার্কিং স্পেস হিসেবে। এই সুযোগ নিয়ে গাড়ির গ্যারেজও বসানো হয়েছে ওই অংশে। এক্সপ্রেসওয়ের মালামাল পাহারা দেয়ার দায়িত্বে থাকা পাহারাদাররা বাস ও ট্রাক প্রতি পার্কিং-এর জন্য ১৫০ টাকা করে নেন। ছোট পিকআপ ট্রাক রাখতে দিতে হয় ১০০ টাকা।

এই অঘোষিত পার্কিং স্পেস করার কারণে চলাচলে ভোগান্তিও বেড়েছে। এমন ঘটনায় সিডিএ’র গাফিলতি ও অপরিকল্পিতভাবে প্রকল্প পরিচালনাকে দায়ি করছেন সংশ্লিষ্টরা।

ইপিজেডের ইয়ংওয়ান গার্মেন্টসের কর্মী সামির হোসেন একুশে পত্রিকাকে বলেন, ‘আপনারা তো দেখতেই পাচ্ছেন শতশত গাড়ি টিনের ঘেরাওয়ের মধ্যে রাখা হয়েছে। কেয়ারটেকারকে ভাড়া দিয়ে তারা এই বাস-ট্রাকগুলো রাখছে। ভাসমান দোকানও বসাতে দেয়া হয়েছে একইভাবে। তদারকি না থাকায় এমন অনিয়ম হচ্ছে।’

নিরাপত্তা ঝুঁকির কথা উল্লেখ করে বানৌজা ঈসা খাঁ এলাকার বাসিন্দা সিরাজুল হক বলেন, এখন যে অংশে কাজ চলছে সেই অংশে কোনো ধরনের বেষ্টনী দেয়া হয়নি। নির্মাণ কাজের একটি বড় পাথর চলন্ত বাসের উপর পড়ে কিছুদিন আগেও এই জায়গায় একটি দুর্ঘটনা ঘটেছে। এই দুর্ঘটনার প্রধান কারণ ছিল ওই অংশে নিরাপত্তা বেষ্টনী না থাকা। বেষ্টনী না থাকায় পাথরটি রাস্তায় চলে এসেছিল।

নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত না করে নির্মাণ কাজ পরিচালনার বিষয়ে জানতে চাইলে সিডিএর নির্বাহী প্রকৌশলী ও প্রকল্প পরিচালক মো. মাহফুজুর রহমান একুশে পত্রিকাকে বলেন, ‘লকডাউনের সময় কাজ কিছুদিন বন্ধ থাকলেও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ বর্তমানে দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে। এক্ষেত্রে আমাদের নিয়ম হচ্ছে যে অংশে পাইলিং শুরু হবে সেই অংশে আগে নিরাপত্তা বেষ্টনী দেয়া। এই প্রকল্পের প্রকৌশলীদেরও আমি এ বিষয়ে সতর্ক নজর রাখতে বলেছি। কিন্তু নিরাপত্তা বেষ্টনী না দিয়ে পাইলিং এর কাজ করার বিষয়টি আমি জানতাম না। আমি আজই বিষয়টি দেখবো।’

নিরাপত্তা বেষ্টনীর ভেতরে বাস ও ট্রাক রাখার বিষয়ে অবগত থাকলেও এর জন্য ভাড়া নেয়ার ব্যাপারে বিষ্ময় প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘বাস-ট্রাক গুলো আমরা বেশ কয়েকবার সরিয়ে দিয়েছি। কিন্তু এরা আমাদের নিষেধ মানছে না। কিন্তু এই গাড়ি রাখতে দিয়ে ভাড়া নেয়ার ব্যপারে আমি জানতাম না। এই বিষয়েও আমি ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।’

সিডিএ’র প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস একুশে পত্রিকাকে বলেন, ‘পাইলিং কাজ চলাকালীন সময়ে অবশ্যই নিরাপত্তা বেষ্টনী দেয়া বাধ্যতামূলক। বেষ্টনী না দিয়ে কাজ করলে তো বড় ধরনের নিরাপত্তা ঝুঁকি থেকে যায়। নিরাপত্তার বিষয় নিশ্চিত না করে কিভাবে নির্মাণ কাজ করা হচ্ছে তা আমি বুঝতে পারছি না। আমি এখনই এ প্রকল্পের পিডিকে (প্রকল্প পরিচালক) বিষয়টি জানাচ্ছি।’

সারিবদ্ধভাবে গাড়ি পার্কিংয়ের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘গাড়ি রাখার বিষয়টি সত্যি। তবে এর জন্য কেয়ারটেকারদের ভাড়া নেয়ার বিষয়টি আমার জানা নেই। এই বিষয়েও আমি পিডিকে অবহিত করবো।’

নগর পরিকল্পনাবিদ আশিক ইমরান একুশে পত্রিকাকে বলেন, নিরাপত্তা বেষ্টনী ছাড়া ভবনের নির্মাণ কাজ করলে সিডিএ আইনি পদক্ষেপ নেয়। কিন্তু সিডিএ’র দায়িত্বে নির্মাণ প্রকল্পে নিরাপত্তা বেষ্টনী ছাড়া নির্মাণ কাজ করলে সেই অসংগতি কে দেখবে? নিয়মানুযায়ী যে কোন নির্মাণ কাজ শুরু করার আগেই নিরাপত্তা বেষ্টনী দিয়ে তারপর কাজ শুরু করতে হয়। এগুলো আসলে দায়িত্বে অবহেলা ছাড়া আর কিছুই না। সিডিএকে এই বিষয়ে খুবই সতর্ক থাকতে হবে। অন্যথায় যে কোন সময় বড় ধরণের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।’

প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালের ১১ জুলাই জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় ৩ হাজার ২৫০ কোটি ৮৩ লাখ টাকা ব্যয়ে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পটি অনুমোদন দেওয়া হয়। ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন।

লালখান বাজার থেকে বারিক বিল্ডিং, বারিক বিল্ডিং মোড় থেকে সল্টগোলা ক্রসিং, সল্টগোলা থেকে সিমেন্ট ক্রসিং এবং সিমেন্ট ক্রসিং থেকে সমুদ্র সৈকত পর্যন্ত চার ধাপে কাজ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। সাড়ে ১৬ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের চার লেনের এ প্রকল্পে র‌্যাম্প ও লুপসহ মোট দৈর্ঘ্য প্রায় ২০ কিলোমিটার এবং প্রস্ত ৫৪ ফুট। প্রতিটি র‌্যাম্প হবে দুই লেনের।