ঢাকা : করোনাভাইরাস সংক্রমণের ‘দ্বিতীয় ঢেউ’ মোকাবিলার প্রস্তুতি নিচ্ছে সরকার। দেশের অর্থনীতিকে সচল রেখেই করোনার সম্ভাব্য এ ধাক্কা মোকাবিলার পরিকল্পনা রয়েছে। এক্ষেত্রে লকডাউনের কথা ভাবছে না সরকার। এ জন্য সবাইকে মাস্ক পরাসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে অভিযান পরিচালনা ও গণসচেতনতা বাড়ানো, চিকিৎসাব্যবস্থা ঠিক করা এবং প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিন সুবিধা বাড়ানোসহ বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হবে। আর এসব কাজের বিষয়ে ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা ঠিক করে দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
করোনাভাইরাস সংক্রমণ আরেক দফায় (দ্বিতীয় ঢেউ) বৃদ্ধির আশঙ্কায় এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে আজ মঙ্গলবার সচিবালয়ের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে আন্তমন্ত্রণালয় সভা হয়। সেখানেই এসব সিদ্ধান্ত হয়। সভায় বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিব, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার ও পুলিশের মহাপরিদর্শক উপস্থিত ছিলেন।
এর আগের দিন সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে আসন্ন শীতের সময় দেশে করোনার সংক্রমণ আরেক দফা বাড়তে পারে (দ্বিতীয় ঢেউ) বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়। এ জন্য বর্তমানের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে এখন থেকেই প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরই পরিপ্রেক্ষিতে এই আন্তমন্ত্রণালয় বৈঠক ডাকা হয়।
প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে চলা এ বৈঠক শেষে সভার সভাপতি ও মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম এবং সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. মাহফুজুর রহমান এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সভার সিদ্ধান্ত জানান।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আসবে কি না, সেটা বলা যাচ্ছে না। তবে যদি আসে, তাহলে কর্মসূচি কী হবে, সেগুলো ভাগ করা হয়েছে। যেমন চিকিৎসাসংক্রান্ত বিষয়ে কী করতে হবে, সেই কর্মপরিকল্পনা প্রস্তুত করবেন বিশেষজ্ঞরা। শীতে নিউমোনিয়া ইত্যাদি বেশি হয়। সে জন্যও শিগগিরই সবাইকে সচেতন করা এবং চিকিৎসাসংক্রান্ত পরিকল্পনা তৈরি করে দেওয়া হবে। দ্বিতীয়ত, সবাই যাতে মাস্ক পরে, শারীরিক দূরত্ব নিশ্চিত করে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য নির্দেশিকা মেনে চলে, সে জন্য ব্যাপকভাবে প্রচারাভিযান চালানো হবে। এ বিষয়ে তথ্য মন্ত্রণালয় ও স্থানীয় সরকার বিভাগ ব্যবস্থা নেবে। গণমাধ্যমও এ বিষয়ে বড় ভূমিকা রাখতে পারে। আর মাঠ প্রশাসন, পুলিশ ও সেনাবাহিনী কীভাবে অভিযান পরিচালনা করবে, সে বিষয়েও একটি কর্মপরিকল্পনা ঠিক করা হবে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব আরও বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আর প্রতিটি মন্ত্রণালয় তাদের অফিস-আদালত ও প্রতিষ্ঠানগুলো কীভাবে চালাবে, সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেবে। এ ছাড়া দেশের বাইরে থেকে অনেক মানুষ আসছেন ও যাচ্ছেন। তাই বাইরে থেকে যাতে নতুন করে ভাইরাস ঢুকতে না পারে, সে জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ বিষয়ে এখনো বিমানবন্দরে সশস্ত্র বাহিনী কাজ করছে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, প্রাথমিকভাবে আলোচনা করে এসব কাজের জন্য দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এখন ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে এসব কর্মপরিকল্পনা করে দিতে হবে। এরপর সেগুলো চূড়ান্ত করে সবাইকে জানিয়ে দেওয়া হবে। আর অভিযানের বিষয় বাস্তবতার ওপর নির্ভর করবে। তবে মূল কথা থাকবে, অর্থনীতিকে সচল রাখা।
বিদেশ থেকে আগতদের বিষয়ে সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার (পিএসও) লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘আমরা এখন যেটা করছি, সিভিল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন এবং ফরেন মিনিস্ট্রির সাথে কোলাবরেশন। এয়ারপোর্টে এবং বিভিন্ন এন্ট্রিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের লোকজন থাকে। বিদেশফেরত অনেকে সার্টিফিকেট নিয়ে আসেন যে, তারা কোভিড ফ্রি। যারা নিয়ে আসেন না, তারা কতদিন সেখানে হোম কোয়ারেন্টাইনে ছিলেন সেই সার্টিফিকেট নিয়ে আসেন। যাদের এ রকম কোনো সার্টিফিকেট বা কোনো কিছু নেই এবং যাদের সন্দেহ হয়, তাদের আমরা প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে পাঠাই। ঢাকায় দিয়াবাড়ী ও হাজী ক্যাম্পে কোয়ারেন্টাইনের ব্যবস্থা আছে।’
তিনি বলেন, ‘করোনা যখন পিকে ছিল তখন সাড়ে ৩ হাজারের মতো প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনের ক্যাপাসিটি (ধারণ ক্ষমতা) ছিল। সেখানে দেড় হাজারের ওপর ওঠেনি। এজন্য আমরা এটাকে (ধারণ ক্ষমতা) কমিয়ে ২ হাজারের মতো রেখেছি। এতে আমাদের সাশ্রয় হচ্ছে। যদি পরিস্থিতি খারাপের দিকে যায় তাহলে আমরা কোয়ারেন্টাইন সুবিধা আবার সাড়ে ৩ হাজারে নিয়ে যাব।’