শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

‘মিরসরাইয়ে বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরে ১৫ লাখ কর্মসংস্থান হবে’

প্রকাশিতঃ ২৪ অক্টোবর ২০২০ | ১০:২৮ অপরাহ্ন


চট্টগ্রাম : চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর চালু হলে ১৫ লাখ কর্মসংস্থান হবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ অর্থনৈতিক কর্তৃপক্ষের (বেজা) নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী।

আজ শনিবার চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন আয়োজিত মিরসরাই ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরে ভূমি অধিগ্রহণে ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে চেক বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ তথ্য জানান।

পবন চৌধুরী বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরের সাথে মিরসরাইবাসীর জন্য আবেগের জায়গা। তারা নিজের ঘর বাড়ি, পৈত্রিক ভিটা-মাটি সরকারের ডাকে সারা দিয়ে দেশের উন্নয়নে অংশীদার হয়েছেন। মিরসরাইবাসীর ত্যাগের ফসল ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর। এ শিল্পনগর পুরোপুরি চালু হলে দেশের ১৫ লক্ষ লোকের কর্মসংস্থান হবে। এতে যে আয় হবে সে আয় দিয়েই বাংলাদেশ সমৃদ্ধ হবে।

এসময় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. আবু হাসান সিদ্দিক, মিরসরাই উপজেলা চেয়ারম্যান মো. জসীম উদ্দিন, উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মিনহাজুর রহমান, ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা মো. কায়সার খসরু, সহকারী কমিশনার সুবল চাকমা উপস্থিত ছিলেন।

বেজা চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী জানিয়েছেন, প্রথম পর্যায়ে ২১ জনকে ৫ কোটি ১৪ লক্ষ, দ্বিতীয় পর্যায়ে ৫৩ জনকে ৬ কোটি ২২ লক্ষ টাকার চেক প্রদান করা হয়েছে। আজ ১৩২ জনকে ২২ কোটি ৫১ লক্ষ টাকার চেক দেওয়া হলো। এটাই শেষ নয়। ক্ষতিগ্রস্থদের আবাসন পল্লী (বাড়ি) করে দেওয়া হবে। ৪০০ পরিবারকে ৫ শতাংশ জমিতে ঘর করে দেওয়া হবে। সেখানে মসজিদ, স্কুল কলেজ কমিউনিটি ক্লিনিক তৈরি করা হবে।

পবন চৌধুরী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশকে সমৃদ্ধির দিকে এগিয়ে নিতে তারুণ্যের শক্তিকে কাজে লাগিয়েই আকাক্সিক্ষত অর্থনৈতিক মুক্তির পথে হাঁটছেন। সেই লক্ষ্যেই সরকার ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর’-সহ ১০০টি নতুন অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ার পরিকল্পনা নিয়েছে। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে দেশে অন্তত এক কোটি নতুন কর্মসংস্থান হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এতে দেশের অর্থনীতির চেহারাই পাল্টে যাবে এবং সমৃদ্ধির পথে অনেকটা এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ।

প্রসঙ্গত, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর উপমহাদেশের অন্যতম বড় অর্থনৈতিক অঞ্চল ‘মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চল’ নির্মাণ কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। চট্টগ্রাম বন্দরের অনতিদূরে সমুদ্র উপকূলে গড়ে ওঠা এ মনোরম অর্থনৈতিক অঞ্চলের নামকরণ করা হয়েছে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর। মিরসরাই থেকে ফেনীর সোনাগাজী পর্যন্ত বিস্তৃত এ অঞ্চল গড়ে উঠছে ৩০ হাজার একর ভূমির ওপর, যেখানে ২৫টি আলাদা জোন নির্মাণের পরিকল্পনার বাস্তবায়ন চলছে। অর্থনৈতিক এ মহাযজ্ঞে ইতোমধ্যে ১৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ নিশ্চিত হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে প্রকল্পটির মাধ্যমে ২০৩০ সালের মধ্যে ১৫ লাখ থেকে ২০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হবে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরে এক হাজার ৫৪ একর জমিতে গড়ে ওঠবে ‘ইন্ডিয়ান ইকোনমিক জোন’। পাশাপাশি একটি আইটি পার্ক করতে ৭২০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করবে ভারত। এছাড়া সিঙ্গাপুর, সৌদি আরব, অস্ট্রেলিয়া, মালয়েশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়ার বিভিন্ন কোম্পানিও এখানে বিনিয়োগ করবে।

এ শিল্পনগরে বিনিয়োগের জন্য ব্যাপক আগ্রহ ও আবেদন লক্ষ করা গেছে। এমনকি করোনাকালেও দেড় বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ প্রস্তাব পাওয়া গেছে, যার মধ্যে এক বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ নিশ্চিত করা হয়েছে। মেগাপ্রকল্পে আর যা আছে একটি অগ্রাধিকারমূলক মেগাপ্রকল্প হিসেবে বিবেচনা করে সরকার ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর প্রতিষ্ঠায় বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে।

২০১৬ সালে চট্টগ্রামের মিরসরাই, সীতাকুণ্ড ও ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার ৩০ হাজার একর জমি নিয়ে পথচলা শুরু হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর প্রতিষ্ঠার। এর মধ্যে ১৬ হাজার একর জমি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া হয়েছে। বাকি অংশ ভূমি উন্নয়নের কাজ শেষে দেওয়া হবে বলে জানান বেপজার ম্যানেজার মো. শরীফুল বাশার।

এ প্রকল্পের কাজ ৫ বছর শেষ হতে চলছে। বাংলাদেশের প্রথম পরিকল্পিত এ শিল্পনগরীতে প্রযুক্তির সাথে তাল মিলিয়ে বিভিন্ন প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে। সরকারের এ সাড়ে ৪০০ কোটি টাকার প্রকল্পে আগামী ২০২৫ সালে সম্পূর্ণ হতে পারে। এ শিল্প জোনে বিনিয়োগের জন্য পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাসসহ সব ধরনের অবকাঠামো সুবিধা নিশ্চিত করার বিষয়ে ভাবছেন বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান।

এ প্রকল্পের সাথে রয়েছে সোনাগাজীতে বিমান বন্দর, কক্সবাজারের মেরিন ড্রাইভের সাথে ২৩ কিলোমিটার সুপার ড্রাইভ নির্মাণ হবে। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার জন্য বনায়নের প্রকল্প রয়েছে।