ব্যক্তি-ইমেজে হেভিওয়েট ও দল-সমর্থনে হেভিওয়েটের লড়াই


জোবায়েদ ইবনে শাহাদত : আসন্ন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সংরক্ষিত ৯, ১০ ও ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে আওয়ামী লীগের সমর্থন নিয়ে বই প্রতীকে লড়ছেন তছলিমা বেগম নূরজাহান।

জিপ গাড়ি প্রতীকে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন মহিলা আওয়ামী লীগ নেত্রী সদ্যবিদায়ী কাউন্সিলর আবিদা আজাদ। বিএনপি থেকে দলের একক মনোনয়নে মোবাইল ফোন প্রতীকে লড়ছেন সকিনা বেগম।

এছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নাদিরা সুলতানা চশমা, মোছাম্মৎ আয়শা আক্তার গ্লাস এবং ইসমত আরা জেরিন আনারস প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। যদিও শেষোক্ত তিনজনের তেমন প্রচার-প্রচারণা লক্ষনীয় নয়।

ভোটাররা বলছেন, মূলত ভোটের মাঠে লড়াই হবে আবিদা আজাদ এবং তছলিমা বেগমের মধ্যে। দলের সমর্থন পেলেও তসলিমা বেগমের জয় পাওয়া কঠিন হতে পারে। কারণ তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে মাঠে আছেন গত ৫ বছরের আলোচিত কাউন্সিলর আবিদা আজাদ। দলের সমর্থন না পেলেও তার আছে নগরজুড়ে পরিচিতি, বাড়তি ইমেজ।

এই অবস্থায় দুই প্রার্থীর মধ্যে চলছে পরস্পর অভিযোগ, কাঁদা ছোড়াছুড়ি। তসলিমা বেগম তার গাড়িবহরে হামলার অভিযোগ করেছেন তার শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী আবিদা আজাদের দিকে।

তবে আবিদা বলছেন, তার জনপ্রিয়তায় ভীত হয়ে এমন মিথ্যা অভিযোগ তুলছেন তসলিমা। শুধু তাই নয়, তার বিরুদ্ধে তসলিমা বিভিন্নভাবে অপপ্রচার চালাচ্ছেন বলেও জানিয়েছেন আবিদা আজাদ।

প্রধান দুই প্রার্থীর এমন পাল্টাপাল্টি অভিযোগে বিব্রত ভোটারা। তাদের চাওয়া- শান্তিপূর্ণ প্রচার-প্রচারণা এবং আবাধ নির্বাচন। জয়ের জন্য মরিয়া হয়ে এধরনের কোনো ঘটনা ঘটুক একেবারেই চান না তারা।

অভিযোগের ঝুলি নিয়েই নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকা চষে বেড়াচ্ছেন প্রধান দুই প্রার্থী। গণসংযোগ, প্রচার-প্রচারণায় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। নানা কৌশল অবলম্বন করে যে যার মত চেষ্টা করছেন আগামী ৫ বছরের জন্য কাউন্সিলরের চেয়ারে বসতে।

মালিপাড়া এলাকার বাসিন্দা শাহীনুর বেগম একুশে পত্রিকাকে বলেন, ‘আগের মহিলা কাউন্সিলর আমাদের বিভিন্নভাবে উপকার করেছেন। এবারও বিভিন্ন আশা ভরসা দিচ্ছেন। একইভাবে অন্যান্য প্রার্থীরাও আসছেন। আমরা দল বুঝি না। যিনি আমাদের কথা শুনবেন, আমাদের পাশে থাকবেন তাকেই আমরা বেছে নিবো।’

পাহাড়তলী ঝাউতলা এলাকার ভোটার শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা হামলা, অভিযোগ এসব শুনতে চাই না। আগে তো পুরুষ কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে হানাহানির ঘটনা ঘটেছে। এখন মহিলা কাউন্সিলরদের বিরুদ্ধেও এধরনের অভিযোগ উঠেছে। ভোটের দিন যত ঘনিয়ে আসছে আমাদের ভয় ততই বাড়ছে। এরকম হলে ‘না’ ভোট দেওয়া ছাড়া আমাদের কোনো উপায় থাকবে না।’

শুধু দলীয় সমর্থনকে পুঁজি করে শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী সাবেক কাউন্সিলর আবিদা আজাদকে হারাতে পারবেন? এমন প্রশ্নে তসলিমা বেগম নুরজাহান একুশে পত্রিকাকে বলেন, ‘আমি তৃণমূল পর্যায়ে রাজনীতি করা কর্মী। ২০০২ সাল থেকে আমি হতদরিদ্র মানুষদের নিয়ে কাজ করছি, যা আমাদের সাবেক কাউন্সিলর কখনোই করেননি। আর তিনি কাউন্সিলরের দায়িত্ব পেয়ে শুধু সে সময় কিছু কাজ করেছেন। তাই আমি মনে করি আমার জনগণপ্রীতির মূল্য আমি ভোটের মাধ্যমে পাব।’

আবিদা আজাদের বিরুদ্ধে গণসংযোগে হামলার অভিযোগ এনে তসলিমা বেগম বলেন, ‘গত ১০ জানুয়ারি নৌকার মিছিল আকবরশাহ রেল গেইট এলাকা পার হওয়ার সময় বিদ্রোহী প্রার্থী আবিদা আজাদের লোকজন আমার গাড়িতে ইট-পাথর নিক্ষেপ করে। এতে আমার ২-৩ জন কর্মী মাথায় আঘাত পেয়েছে। আমি সেসময় মেয়র প্রার্থী রেজাউল করিমের গাড়িতে ছিলাম। বিষয়টি সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনও জেনেছেন।’

তার কর্মীদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে জানিয়ে তসলিমা বলেন, আমার অনেক কর্মীকে প্রচার প্রচারণার সময় হুমকি দেওয়া হচ্ছে। তিনি একজন সিনিয়র নেত্রী, তাকে আমি যথেষ্ট সম্মান করি, কিন্তু তার এমন কর্মকাণ্ডে আমি খুবই বিব্রত।’

জয়ী হলে অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও কিশোরগ্যাং, মাদক, সন্ত্রাস নির্মূলে ভুমিকা রাখার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন এই প্রার্থী। এই ক্ষেত্রে কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নির্মাণ করে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দেওয়ার পাশাপাশি বেকার যুবকদের কর্মসংস্থান সৃষ্টির কথাও জানান তিনি।

অন্যদিকে নিজের জয়ের ব্যাপারে যে আশাবাদ, সেই আশাবাদের যুক্তি দিয়েছেন আবিদা আজাদ। তিনি বলেন, ‘আমি দায়িত্ব পালনকালে এলাকার ব্যাপক উন্নয়ন করেছি। যেমন- রাস্তাঘাটের উন্নয়ন, বিদ্যুতের উন্নয়ন, ওয়াসা সংশ্লিষ্ট উন্নয়ন, নারী ও শিশুদের নিয়ে কাজ করেছি। শুধু তাই নয়, এলাকার বাল্যবিবাহ এবং নির্যাতিত নারীদের ব্যাপক সহযোগিতা করেছি। এছাড়া বয়স্কভাতা, মাতৃত্বকালীন ভাতা প্রদান করেছি। আমার বিশ্বাস এলাকাবাসী আমার পাশেই থাকবেন। বিপুল জনরায়ে তাদের সেবকের চেয়ারে বসাবেন।’

ফের নির্বাচিত হলে নিজের অসমাপ্ত কাজগুলো সম্পন্ন করার পাশাপাশি প্রতিটি ওয়ার্ডে আধুনিক গ্রন্থাগার নির্মাণ, যুব সমাজের বেকারত্ব দূর করার জন্য কারিগরি শিক্ষার ব্যবস্থা করা, শিশু-কিশোরদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশে খেলাধূলা ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের আয়োজন, জলাবদ্ধতা নিরসনে কার্যকরী ভূমিকা রাখা এবং পরিচ্ছন্ন এলাকা গড়তে কাজ করার কথা জানিয়েছেন আবিদা আজাদ।

দলের মনোনয়ন না পাওয়া প্রসঙ্গে আবিদা আজাদের বক্তব্য- ‘দল তো মেয়র প্রার্থী রেজাউল করিমকে নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন দিয়েছেন। কাউন্সিলর প্রার্থীদের মনোনয়ন দেয়নি। যার প্রমাণ আপনারা কাউন্সিলর প্রার্থীর প্রতীক দেখলেই পাবেন। প্রত্যেককে আলাদা আলাদা প্রতীক দেওয়া হয়েছে।’ মনোনয়নের নামে আওয়ামী লীগে ভাঙন সৃষ্টির একটি ষড়যন্ত্র চলছে বলে জানান এই প্রার্থী।

প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর গাড়িবহরে হামলার অভিযোগের বিষয়ে আবিদা বলেন, ‘যে গণসংযোগে হামলার অভিযোগ আনা হয়েছে সেখানে আমি নিজেই উপস্থিত ছিলাম, রেজাউল ভাইয়ের জন্য প্রচারণা করছিলাম। সেখানে এধরনের কিছুই হয়নি। আমার জনপ্রিয়তার ঈর্ষান্বিত হয়ে তসলিমা বেগম এই মিথ্যা অভিযোগ করছেন। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগটি এনেছেন তাতে শুধু আমি নই, নগর আওয়ামী লীগের সকল নেতাকর্মী অবাক হয়েছেন।’

এদিকে, গণসংযোগে ব্যস্ত আছেন জানিয়ে পরে যোগাযোগ করতে বলেন বিএনপি মনোনীত মহিলা কাউন্সিলর প্রার্থী সকিনা বেগম। কিন্তু পরে একাধিকবার তার সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেও আর পাওয়া যায়নি। একইভাবে স্বতন্ত্র প্রার্থী নাদিরা সুলতানা, মোছাম্মৎ আয়শা আক্তার এবং ইসমত আরা জেরিনের সাথেও যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হয়।