লাইফস্টাইল ডেস্ক : সবচেয়ে বেশি বয়স পর্যন্ত বেঁচে রেকর্ড করেছিলেন ফ্রান্সের নাগরিক জিয়ান্নি লুইস ক্যালমেন্ট। তিনি ছিলেন বিশ্বের সবচেয়ে বেশি বয়সের বুড়ো। বেঁচেছিলেন ১২২ বছর পর্যন্ত। ১৯৯৭ সালে তিনি মৃত্যুর সময় তার আয়ুষ্কালের রেকর্ড হিসেবে গিনেজ বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে স্থান করে নেন। ক্যালমেন্টের এ রেকর্ডকে ভেঙে ফেলে ১৮০ বছরে পৌঁছুতে চান মার্কিন ধনকুবের ডেইভ অ্যাসপ্রে। তিনি বুলেটপ্রুফ কফি নামক প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা এবং মানুষের দীর্ঘায়ু নিশ্চিত করতে কাজ করছেন নিরন্তর।
৪৭ বছর বয়সী এ যুবার নাম ডেইভ অ্যাসপ্রে। ন্যূনতম তিনি বাঁচতে চান ২১৫৩ সাল পর্যন্ত। তিনি সিলিকন ভ্যালির একজন সাবেক এক্সিকিউটিভ। স্বাস্থ্য বিষয়ে বা চিকিৎসাবিজ্ঞানে কোনো ব্যবহারিক অভিজ্ঞতা নেই তার। গত ২ দশকে প্রায় ১০ লাখ মার্কিন ডলার তিনি ব্যয় করেছেন নিজের বয়স ধরে রাখার স্বার্থে। বিভিন্ন যন্ত্রপাতি এবং প্রযুক্তির সহায়তা নিয়ে স্নায়ুতন্ত্রে পরিবর্তন ঘটানোর এই প্রক্রিয়াকে তিনি নাম দিয়েছেন ‘বায়ো-হ্যাকিং’।
তিনি বিশ্বাস করেন, তার ব্যবহার করা এসব প্রযুক্তি ও পদ্ধতি একসময় মুঠোফোনের মতো মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে যাবে। ন্যূনতম ২১৫৩ সাল পর্যন্ত বেঁচে থাকার লক্ষ্যে তিনি নিয়মিত ক্রিপ্টোথেরাপি নেন এবং মাঝে মাঝেই নিয়মতান্ত্রিক উপবাস করেন।
তবে শুধু বেঁচে থাকা নয় শক্ত সামর্থ্য তথা চির তারুণ্য ধরে রেখে বেঁচে থাকার লক্ষ্যে তিনি ‘স্টেম সেল’ প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে বয়সের কাঁটা উল্টোদিকে ঘুরিয়ে নেয়া সম্ভব বলে দাবি করছেন।
উল্লেখ্য, স্টেম সেল হচ্ছে মানবদেহের বিশেষায়িত কিছু কোষ যেগুলো কোনো নির্দিষ্ট উদ্দেশ্যে কাজ শুরু করেনি।। দেহের প্রতিটি অংশে স্বল্প পরিমাণে স্টেম সেলের উপস্থিতি থাকে। দেহের প্রয়োজন অনুযায়ী কাজভেদে স্টেম সেল তার কাজের ধরন পরিবর্তন করে। এমনকি প্রয়োজনে নিজেকে বিভাজিত করে নতুন সেল গঠনে ভূমিকা রাখে।
ডেইভ অ্যাসপ্রে প্রায় ২৫ হাজার মার্কিন ডলার ব্যয় করে ১০ বার নিজের বোন ম্যারোতে স্টেম সেল প্রবেশ করিয়েছেন। কারণ, বয়সের সাথে স্টেম সেলের কার্যকারিতা কমে যায়। নতুন স্টেম সেল প্রবেশের ফলে দেহের সেই ক্ষয়সাধন কমে যায়। শুধু তাই নয় নতুন স্টেম সেল প্রবেশের ফলে চেহারায় এবং শারীরিক সুস্থতায় বয়সের কোনো প্রভাব পড়ে না।
তিনি দাবি করেছেন, স্টেম সেল প্রবেশের এই পদ্ধতিতে ১০০ বছরের একজন মানুষও ৪০ বছর বয়সীদের মতো সুস্থ ও সক্রিয় জীবনযাপন করতে পারবেন।
কেন তিনি ১৮০ বছর বাঁচতে চান এই প্রশ্নের উত্তরে ডেইভ অ্যাসপ্রে বলেছেন, ‘আমি মনে করি পৃথিবীর জন্য আমাদের অনেক কিছু করার আছে। মানুষ চাইলেই পৃথিবীর অনেক কিছুর উন্নতি সাধন করতে পারবে। আমি সেই দিনটি দেখে যেতে চাই।’
তিনি আরও বলেন, ‘খরুচে স্টেম সেল চিকিৎসা ছাড়াও পরিমিত খাদ্য গ্রহণ, পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ এবং নিয়মতান্ত্রিক উপবাসের ফলে ৪০ পরবর্তী কোনো শারীর সমস্যা আমার নেই।’
স্টেম সেল প্রবেশ পদ্ধতির বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে ডেইভ অ্যাসপ্রে বলেন, ‘তরুণ বয়সে স্টেম সেল অত্যন্ত কার্যকরি থাকে। দেহের ক্ষয়পূরণে দ্রুত কাজ করতে পারে। কিন্ত সময়ের সাথে সাথে স্টেম সেল কিছুটা ধীরগতিতে কাজ করে। তাই পূর্ব থেকে সংরক্ষণ করে রাখা স্টেম সেল নিয়মিত বিরতিতে মানবদেহে প্রবেশ করালে সেগুলো তরুণ বয়সীদের মতোই দ্রুত কাজ করে। ফলে বয়সের ছাপ পড়ে না।’
বিজ্ঞানীদের মধ্যে তার প্রচলিত পদ্ধতি নিয়ে পক্ষে বিপক্ষে মতামত থাকলেও ডেভিড মনে করেন স্টেম সেল প্রবেশের পর থেকে তিনি আগের চেয়ে অনেক বেশি সুস্থ অনুভব করেন এবং তার মাঝে বয়সের কোনো প্রভাব পড়ছে না।
তিনি দাবি করেছেন, স্টেম সেল প্রবেশের এই পদ্ধতিতে ১০০ বছরের একজন মানুষও ৪০ বছর বয়সীদের মতো সুস্থ ও সক্রিয় জীবনযাপন করতে পারবেন।