আলকরণে ভোট: বহিরাগতদের দিয়ে মাসুমের শোডাউন, সহিংসতার আশঙ্কা


চট্টগ্রাম : চট্টগ্রাম সিটির ৩১ নম্বর আলকরণ ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে আগামীকাল রোববার। এই নির্বাচনকে ঘিরে ভোটারদের মনে রয়েছে সহিংসতার আশঙ্কা। তবে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদের আইনানুগভাবে প্রতিহত করা হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

আলকরণ ওয়ার্ডে মিষ্টি কুমড়া প্রতীকের কাউন্সিলর প্রার্থী ইয়াসির আরাফাতের অভিযোগ, তার প্রতিপক্ষ লাঠিম প্রতীকের প্রার্থী আব্দুল আলম মাসুম বহিরাগত সন্ত্রাসীদের দিয়ে ভোট কেন্দ্র দখলের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তারা ভোটারদের ঘরে ঘরে গিয়ে হুমকি-ধামকি দিচ্ছেন।

মাসুম পুলিশের তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী “ভাড়া” করেছেন অভিযোগ করে ইয়াসির আরাফাত বলেন, ‘সন্ত্রাসীদের বিভিন্ন গ্রুপ গত ৪-৫ দিন ধরে এলাকায় মহড়া দিচ্ছে। তারা ভোট কেন্দ্র দখলের ছক করেছেন। গণসংযোগে গেলে সাধারণ মানুষ আমাকে এসব অভিযোগ করেছেন।’

‘আমি চাই সুষ্ঠু নির্বাচন। ভোটাররা যেন বিনা বাধায় ভোট কেন্দ্রে গিয়ে নিরাপদে ভোট দিতে পারেন, এই পরিস্থিতি প্রশাসনকে তৈরি করে দিতে হবে।’ বলেন ইয়াসির আরাফাত।

অভিযোগ আছে, পুলিশের তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী চকবাজারের ত্রাস নুরুল মোস্তাফা টিনু, হেলাল আকবর চৌধুরী বাবরের শিষ্য সরফরাজ নেওয়াজ মাসুদ এবং খলিলুর রহমান নাহিদসহ একাধিক সন্ত্রাসী গ্রুপ মাসুমের পক্ষে প্রতিনিয়ত আলকরণ ওয়ার্ড এলাকার অলিগলিতে সশস্ত্র মহড়া দিচ্ছে।

স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি একুশে পত্রিকাকে অভিযোগ করে বলেছেন, বহিরাগতদের তৎপরতায় উদ্বিগ্ন সাধারণ ভোটাররা। কাউন্সিলর প্রার্থী মাসুমের ছোট ভাই আব্দুল বাতেন ও আব্দুল মামুন ঘরে ঘরে গিয়ে ভোটারদের ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন।

দোভাষ কলোনি এলাকার টারজান নামে এক যুবকের অভিযোগ, দুইদিন আগে তার স্ত্রীর সামনেই কাউন্সিলর প্রার্থী মাসুম তার গায়ে হাত তুলেছেন। প্রতিদিন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকজনকে ভোট কেন্দ্রে না যেতে ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন।

জানা গেছে, আলকরণ ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে লড়াইয়ে আছেন মোট চারজন। এর মধ্যে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে ইয়াসির আরাফাত ও আব্দুল আলম মাসুমের মধ্যে।

ইয়াসির আরাফাত সাবেক সিটি মেয়র আ জ ম নাছিরের অনুসারী এবং আলকরণ ওয়ার্ডের সদ্য প্র‍য়াত সাবেক কাউন্সিলর তারেক সোলেয়মান সেলিমের ঘনিষ্ঠজন হিসাবে পরিচিত।

অন্যদিকে আব্দুল আলম মাসুম ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সদস্য, তিনি শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।

এছাড়া নির্বাচনী লড়াইয়ে আছেন বিএনপি সমর্থিত রেডিও প্রতীকের প্রার্থী দিদারুল রহমান বাবু ও ঠেলাগাড়ি প্রতীক নিয়ে লড়ছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হানিফ ভুঁইয়া।

বহিরাগতদের নিয়ে ভোট কেন্দ্র দখলের ছক ও সন্ত্রাসীদের ভাড়া করার অভিযোগ অস্বীকার করে কাউন্সিলর প্রার্থী আব্দুল আলম মাসুম একুশে পত্রিকাকে বলেন, ‘কারো বিরুদ্ধে আমার অভিযোগ নেই। আমি আশা করি সুষ্ঠু নির্বাচন হবে। যিনি আপনাদের (প্রতিবেদক) অভিযোগ দিয়েছেন, তিনি তো দুর্বল মানুষ। আমি ওনার সম্পর্কে কী বলব। আমি কি শীর্ষ সন্ত্রাসী নিয়ে নির্বাচনী প্রচারণা করেছি। তিনি (আরাফাত) নিজেই শীর্ষ সন্ত্রাসী সাইফুল আলম লিমনকে নিয়ে এলাকায় মিছিল গণসংযোগ করেছেন। সেই ছবি আমার কাছে আছে।’

এদিকে নির্বাচনকে ঘিরে বহিরাগতদের জড়ো করার বিষয়ে কোনো তথ্য নেই বলে দাবি করেছেন কোতোয়ালী থানার ওসি নেজাম উদ্দীন। তিনি বলেন, ‘আইনের ঊর্ধ্বে কেউই নয়। আগামীকাল পুলিশ সদস্যরা আলকরণ ওয়ার্ডের বিভিন্ন স্থানে দায়িত্বপালন করবে। কোন ঘটনা ঘটলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

রিটার্নিং কর্মকর্তা মুহাম্মদ হাসানুজ্জামান বলেন, ‘যদি কোন বহিরাগত থাকে তাহলে তা যাচাই করতে বলেছি সংশ্লিষ্ট থানার ওসিদের। ভোটের দিন সবাইকে জাতীয় পরিচয়পত্র সঙ্গে রাখতে বলেছি। বহিরাগত থাকলে তখন সঙ্গে সঙ্গে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীর বলেন, ‘বহিরাগত ঠেকানোর একটা পথ হচ্ছে এনআইডি কার্ড। ভোটার শনাক্ত করা যাবে তার এনআইডি কার্ডের মাধ্যমে। এনআইডি কার্ড যার কাছে আছে তিনি এখানকার সম্মানিত ভোটার। কেউ আইনশৃঙ্খলার জন্য হুমকি হলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

উল্লেখ্য, ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ১৮ জানুয়ারি ঢাকার ডেলটা হাসপাতালে মারা যান তারেক সোলেমান সেলিম। আলকরণ ওয়ার্ডের চারবারের নির্বাচিত কাউন্সিলর ছিলেন তিনি। তার মৃত্যুতে ভোটগ্রহণ স্থগিত করে নির্বাচন কমিশন। ভোট গ্রহণের জন্য ২৮ ফেব্রুয়ারি নতুন তফসিল ঘোষণা করা হয়।

এরপর গত ২ ফেব্রুয়ারি ওই ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন সাবেক কাউন্সিলর তারেক সোলেমান সেলিমের স্ত্রী হাসিনা খানম। তবে অসুস্থতার কারণে তিনি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান।