চট্টগ্রাম : চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে রুপম কান্তি নাথ নামের যে বন্দিকে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে কারা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে, সেই রুপমকে জামিন দিয়েছেন আদালত।
বুধবার (৩ মার্চ) চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ শেখ আশফাকুর রহমান এ আদেশ দিয়েছেন বলে জানান বাদীর আইনজীবী বিশ্ববিজৎ চক্রবর্তী সুমন।
তিনি বলেন, রুপম কান্তি নাথকে দশ হাজার টাকা বন্ডে জামিন দিয়েছেন আদালত।
এর আগে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে রূপম কান্তি নাথ নামে এক বন্দিকে নির্যাতন করে আহত করার অভিযোগে জেল সুপারসহ চারজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগীর স্ত্রী ঝর্ণা রানী দেবনাথ।
এরপর গতকাল মঙ্গলবার চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম হোসাইন মোহাম্মদ রেজার আদালত অভিযোগটি ফেরত দিয়ে সেটি ‘জজ আদালতে’ দাখিলের পরামর্শ দেন।
আদেশে বিচারক হোসাইন মোহাম্মদ রেজা উল্লেখ করেছেন, “নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইন ২০১৩ অনুযায়ী কোন আদালতের সামনে কোন ব্যক্তি যদি অভিযোগ করেন যে, তাকে নির্যাতন করা হয়েছে তাহলে উক্ত আইনের ধারা ৪ ও ধারা ৪ প্রযোজ্য হবে। নির্যাতিত ব্যক্তি ছাড়া অন্য কেউ বা তৃতীয়পক্ষ আদালতে মামলা করলে ধারা ৬ ও ধারা ৭ অনুসরণ করতে হবে।
নথি পর্যালোচনায় দেখা যায়, মামলাটি করেছেন ভিকটিমের স্ত্রী বা তৃতীয় পক্ষ। সে হিসেবে অভিযোগকারীর বিবৃতির প্রেক্ষিতে আদালত ভিকটিমের নিরাপত্তা বিধানের আদেশ দিতে পারেন। তৃতীয়পক্ষ অভিযোগ দাখিল করলে নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইনের ৭(১) ধারা অনুযায়ী দায়রা জজ আদালত বা পুলিশ সুপারের নিচে নয় এমন কোন পুলিশ কর্মকর্তার নিকট নির্যাতনের অভিযোগ দাখিল করতে পারবে।
এ অবস্থায় নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইনের ৭(১) ধারা অনুযায়ী অত্র আদালত কর্তৃক অভিযোগকারীর নালিশী মামলাটি গ্রহণের এখতিয়ার না থাকায় মামলাটি যথাযথ আদালতে দাখিলের জন্য ফেরত প্রদান করা হোক।”
ভুক্তভোগীর স্ত্রী ঝর্ণা রানী দেবনাথের লিখিত অভিযোগে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের জেল সুপার শফিকুল ইসলাম, জেলার রফিকুল ইসলাম, সহকারী সার্জন ও ভুক্তভোগীর ব্যবসায়িক অংশীদার রতন ভট্টাচার্যকে আসামি করা হয়। নির্যাতনের শিকার রুপম কান্তি নাথ বর্তমানে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কারা কর্তৃপক্ষের অধীনে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছেন।
আদালতে রুপমের স্ত্রী ঝর্ণা রানী দেবনাথ তার স্বামীকে কারাগারে বৈদ্যুতিক শক ও বিষাক্ত ইনজেকশন দিয়ে হত্যা চেষ্টার অভিযোগ আনেন। রুপমের স্ত্রী একুশে পত্রিকাকে জানান, চমেক হাসপাতালের ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের এমএক্স ১২ শয্যায় তার স্বামী চিকিৎসাধীন। আসামিদের নিযাতনে তার স্বামীর মুখ, হাতসহ সারা গায়ে আঘাতের চিহ্ন আছে। অন্ডকোষে আগুনের ছ্যাঁকার চিহ্ন পাওয়া গেছে। পুরো অন্ডকোষ ও পুরুষাঙ্গ আগুনে ঝলসে গেছে।
চিকিৎসকদের বরাত দিয়ে বাদী ঝর্ণা রানী জানান, গুরুতর আঘাতের ফলে অন্ডকোষে রক্তজমাট বেঁধে গেছে। শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আছে আঘাতের চিহ্ন।
আদালত সূত্র জানায়, ২০১৮ সালের ২৫ এপ্রিল নগরের কোতোয়ালী থানায় রতন ভট্টাচার্য নামে এক ব্যবসায়ীর দায়ের করা জালিয়াতি ও আত্মসাতের (৪০৬/৪২০) মামলায় রূপম ২০২০ সালের ১৫ ডিসেম্বর থেকে কারাবন্দি হন। চুক্তি মতো টাকা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় ওইদিনই আদালত তার জামিন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠান। গত ২৫ ফেব্রুয়ারি রাত ১০ টায় তাকে গুরুতর আহত অবস্থায় কারাগার থেকে চমেক হাসপাতালে ভর্তি করেন কারা কর্তৃপক্ষ।
হাসপাতালের শয্যায় রূপম সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করে বলেন, মামলার আসামিরা আমাকে বিষাক্ত ইনজেকশন দিয়েছে। ইলেক্ট্রিক শক দিয়েছে। তার স্ত্রী ঝর্ণারানী দেবনাথ বলেন, আমার স্বামীকে হাসপাতালে ভর্তি করার একদিন পর তার অসুস্থতার খবর পাই। গুরুতর আহত অবস্থায় আমার স্বামীকে পায়ে ডান্ডাবেড়ি পরিয়ে হাসপাতালে আনা হয়েছে। হাসপাতালে ভর্তির পর দুইদিন পযন্ত স্বামী ডান্ডাবেড়ি পরিহিত ছিলেন।
রূপমের আইনজীবীর অভিযোগ, মামলার বাদি রতন ভট্টাচার্য অত্যন্ত প্রভাবশালী। তার প্ররোচনায় রূপমকে কারা অভ্যন্তরে নির্যাতন করা হয়েছে। এদিকে, গত শনিবার চমেক হাসপাতালের পরিচালক বরাবর মামলার বাদি রূপমের স্ত্রী এক আবেদন দাখিল করেন। এতে তার স্বামীর শরীরের বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ আঘাতের ধরণ মেডিকেল রেজিস্টারে সংরক্ষণ করে রাখার আবেদন করা হয়। ওই আবেদনে বলা হয়েছে কারাগারে তার স্বামীকে হত্যার উদ্দেশ্যে বৈদ্যুতিক শক, বিষাক্ত ইনজেকশন পুশ করা হয়েছে। সারা শরীরে আছে আঁচড়, কিল, ঘুষি ও লাথি মারার চিহ্ন।
তবে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার রফিকুল ইসলাম বলেন, রুপম কান্তি নাথ মাদকাসক্ত। মাদক নেওয়ার জন্য তার প্রবল নেশা (বেড়া) উঠলে তাকে গত রোববার চমেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তার স্ত্রীর অভিযোগ ভিত্তিহীন। তার স্বামী রুপমের অন্ডকোষর জটিল রোগে আক্রান্ত। এছাড়া তার ডায়বেটিস রোগও রয়েছে।
তিনি বলেন, কারাগারে তাকে ইলেক্ট্রিক শক, বিষাক্ত ইনজেকশন পুশ করার অভিযোগ মিথ্যা। চিকিৎসকেরা তার শরীর থেকে রক্তের নমুনা নিয়ে যাবতীয় পরীক্ষা করেছেন। বিষাক্ত ইনজেকশন বা ইলেক্ট্রিক শক দেয়ার কোন প্রমাণ পায়নি চিকিৎসকরা।