সীতাকুণ্ড প্রতিনিধি: জমির প্রকৃতি পরিবর্তন করা যাবে না এমন আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে সীতাকুণ্ডে কৃষি জমিতে পুকুর কাটার মহোৎসব চলছে।
কৃষকদের জমিতে পুকুর কাটার সুফলের লোভ দেখিয়ে মাটি বিক্রির বাণিজ্যে মেতে ওঠেছে একটি প্রভাবশালী মহল।
ইতোমধ্যে এ উপজেলায় তিন ফসলি কৃষি জমিতে প্রায় শতাধিক পুকুর খনন করা হয়েছে। গত বছরের ডিসেম্বর থেকে লাগা পুকুর কাটার এ হিড়িকের লাগাম টানা যায়নি এখনও।
দিনরাত পুকুর কাটার ফলে সীতাকুণ্ডে আশংকাজনকহারে কমছে কৃষি জমি, লোভের ফাঁদে পড়ে কৃষকরা হারাচ্ছে উর্বর ফসলি জমি। অপরদিকে কৃষি জমি ছাড়াও পাহাড়, খাল, নাল জমি, সরকারি খাস জমি থেকে মাটি কেটে বিক্রি করতে মরিয়া হয়ে ওঠেছে মাটি খেকো একটি চক্র।
প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে রাতের আঁধারে স্কেবেটর লাগিয়ে পাহাড় কাটা হচ্ছে, ড্রাম ট্রাক যোগে এসব মাটি সরবরাহ করা হচ্ছে ইট ভাটা, নতুন ফ্যাক্টরি, পুকুর-ডোবা ভরাট, সড়কের দখলকৃত জায়গা ভরাট কিংবা নতুন বাড়ির ভিটা নির্মাণের কাজে।
প্রতি ট্রাক মাটি বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার থেকে ১২’শ টাকা। পাহাড় ও খাল থেকে মাটি কাটার কোন প্রকার অনুমতি নেওয়া হয়নি বলে জানা গেছে।
৬ মার্চ মঙ্গলবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার পৌরসভার মধ্যম মহাদেব পুরস্থ এ্যালবিয়ন নতুন ফ্যাক্টরি সংলগ্ন রেললাইনের পাশ্ববর্তী কৃষি জমি ও পাহাড়ের পাদদেশে শক্তিশালী স্কেভেটর দিয়ে মাটি কাটা হচ্ছে।
বর্তমানে সেখানকার কৃষি জমিগুলো বিশালাকার পুকুরে পরিণত হয়েছে। অভিযোগ আছে এসব মাটি কাটছে এলাকার প্রভাবশালী মাদক সেবনের দায়ে বহিস্কৃত ছাত্রলীগ নেতা শাখাওয়াত হোসেন টুটুল। একই চক্রের সদস্য সাব্বির হোসেন, এনামুল হক, সাহাবুদ্দিন।
মাস খানেক আগেও এই চক্র পাহাড়ের কিনারে স্কেবেটর লাগিয়ে কয়েকশ ট্রাক মাটি কেটে বিক্রি করে ফুলে ফেঁপে উঠে।
পরে পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হলে প্রশাসনের হস্তক্ষেপে মাটি কাটা বন্ধ হয়ে যায়।
সর্বশেষ গতকাল (৫ মার্চ) দেশব্যাপী লকডাউনের সুযোগ নিয়ে পুনরায় স্কেবেটর দিয়ে কাটা শুরু করে চক্রটি। এসব বিষয়ে এলাকার কেউ ভয়ে মুখ খুলতে রাজি হননি।
তবে মাটি কাটার স্থানে গিয়েও টুটুল ও তার সহযোগী কাউকে পাওয়া যায়নি।
এলাকাবাসীর তথ্য মতে রেললাইনের পাশ্ববর্তী জমি থেকে মাটি কেটে এ্যালবিয়ন ল্যাবরেটরিজের কাছে বিক্রি করছে তারা।
শুধু মহাদেব পুর নয় সীতাকুণ্ড উপজেলার সৈয়দপুরের মীরের হাট, মহানগর বাজার, ব্রিক ফিল্ড, মুরাদপুর ইউনিয়নের ভাটের খীল, হাসনাবাদ, কুমিরা ইউনিয়নের কাজী পাড়াসহ বিভিন্ন স্থানে একাধিক স্কেবেটর দিয়ে কৃষি জমির মাটি কাটাছে আরো কয়েকটি চক্র।
দিনরাত কাটা এসব মাটি সীতাকুণ্ড বাজারের উপর দিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে অর্ডারকারী প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির কাছে।
স্থানীয়রা জানান, মাটি কাটার ফলে যেমনিভাবে কৃষি জমি হ্রাস পাচ্ছে ঠিক তেমনিভাবে পরিবেশও পড়ছে হুমকিতে।
তাছাড়া মাটির গাড়ি চলাচলের কারণে পুরো রাস্তা কাদা মাটিতে পরিণত হয়েছে।
মাটিবাহী গাড়িগুলো যখন দ্রত গতিতে চলে তখন সড়কের সব ধুলোবালি উড়িয়ে যায়। এসময় পথচারী ও যাত্রীদের নাকে-মুখে ঢুকে পড়ে এসব বালু। যা মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকির কারণ।
ভুক্তভোগী কৃষকেরা একুশে পত্রিকাকে জানান, আমরা জমির মাটি বিক্রি না করলেও মাটি ব্যবসায়ীরা দূরবর্তী জমি থেকে কাটা মাটি আমাদের জমির উপর দিয়ে পরিবহন করছে।
এতে করে আমাদের ফসলি জমিগুলো নষ্ট হচ্ছে, গাড়ির চাকায় আমাদের জমির আইল ভেঙে যাচ্ছে, অদূর ভবিষ্যতে এসব জমির সীমানা নির্ধারণ করতে গিয়ে মালিক পক্ষদ্বয়ের মাঝে বিরোধের সৃষ্টি হতে পারে।
শুধু তাই নয় মাটিবাহী ট্রাকগুলোর চলাচলে বিলে-খালে আমরা গবাধি পশু চরাতে ও ঘাস কাটতে পারছি না। বিস্তৃর্ণ মাঠ জুড়ে সবুজ প্রকৃতিকে এসব গাড়ি মাড়িয়ে দিয়েছে, তাদের রমরমা বাণিজ্য আমাদের জীবন যাত্রায় হয়রাণির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে -যোগ করেন কৃষকেরা।
সীতাকুণ্ড উপজেলায় কৃষি জমি নষ্ট করে অবৈধভাবে মাটি কাটার মহোৎসব চলতে থাকলেও প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় থাকায় মাটি খেকোরা রয়েছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে।
এসব বিষয়ে সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী অফিসার মিল্টন রায় বলেন, মাটি কাটার কোনো অনুমতি নেই। এটি সম্পূর্ণ অবৈধ। বিষয়টি আমি অবগত আছি, ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।