শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

পরীমণিকে ধর্ষণ-হত্যাচেষ্টা: নাসিরসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা

প্রকাশিতঃ ১৪ জুন ২০২১ | ১২:২৪ অপরাহ্ন


ঢাকা : আশুলিয়ার একটি ক্লাবে অভিনেত্রী পরীমণিকে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার ঘটনায় ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন মাহমুদসহ ছয়জনকে আসামি করে সাভার থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। সোমবার (১৪ জুন) মামলাটি দায়ের করা হয়।

এর আগে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার ঘটনায় পরীমণির অভিযোগ লিখিত আকারে গ্রহণ করে সাভার থানা পুলিশ। গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন মিরপুর বিভাগের উপ-কমিশনার আ স ম মাহতাব উদ্দিন।

এর আগে রোববার রাতে সাংবাদিকদের কাছে এবং ফেসবুক পোস্টে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগ করেছিলেন পরীমণি। অভিযোগে তিনি ঢাকা বোর্ড ক্লাব লিমিটেডের সাবেক প্রেসিডেন্ট নাসির উদ্দিন মাহমুদের কথা উল্লেখ করেছেন।

বাংলাদেশ পুলিশের মিডিয়া ও পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি) সোহেল রানা বলেন, পরীমণি পুলিশের প্রয়োজনীয় ও উপযুক্ত সেবা পাবেন। উপযুক্ত বিচার পাবেন।

এর আগে রোববার রাত ৮টার দিকে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে পরীমণি স্ট্যাটাস দিয়ে জানান, তাকে হত্যা ও ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে তিনি লেখেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আমি পরীমণি। এ দেশের একজন বাধ্যগত নাগরিক। আমার পেশা চলচ্চিত্র। আমি শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছি। আমাকে রেপ এবং হত্যা করার চেষ্টা করা হয়েছে। আমি এর বিচার চাই।’

পরে রাত সাড়ে ১০টায় বনানীর বাসায় সাংবাদিকদের পরীমণি জানান, গত ১০ জুন রাতে পারিবারিক বন্ধু অমি ও ব্যক্তিগত রূপসজ্জাশিল্পী জিমির সঙ্গে বাইরে বের হয়েছিলেন তিনি। রাত তখন ১২টা পেরিয়েছে। বন্ধুটি তাদের নিয়ে যান আশুলিয়ার একটি ক্লাবে। ক্লাবটির নাম উত্তরা বোট ক্লাব। সেখানে মদ্যপানরত কয়েকজন ব্যক্তির সঙ্গে পরীমনির পরিচয় করিয়ে দেন অমি। ওই ব্যক্তিদের মধ্যে একজনের নাম নাসিরউদ্দিন মাহমুদ। তিনি নিজেকে ক্লাবটির সাবেক প্রেসিডেন্ট পরিচয় দেন। নাসিরউদ্দিনসহ উপস্থিত ব্যক্তিরা তার সঙ্গে বাজে আচরণ করেন। মাধুরী দিক্ষিত বলে নাচতে বলে। এক সময় তাদের একজন হঠাৎ জোর করে পরীমনির মুখে পানীয়র গ্লাস চেপে ধরে এবং শ্লীলতাহানির চেষ্টা করে। এ সময় পরীমনির সঙ্গে থাকা কস্টিউম ডিজাইনার জিমিকেও মারধর করে তারা।

নাসির উদ্দিন তার সঙ্গে জোরপূর্বক শারীরিক সম্পর্ক গড়ার চেষ্টা করেন বলেও অভিযোগ করেন পরীমণি। নাসির উদ্দিনসহ চারজন মদ্যপ ব্যক্তি আমাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করেন। চড়-থাপ্পড় মারেন। গায়ে আঘাত করেন। এক পর্যায়ে একজন আমাকে নেশাদ্রব্য খাইয়ে ধর্ষণের চেষ্টা করে।

এই ঘটনার পর পরীমণি বনানী থানায় অভিযোগ করতে গিয়েছিলেন। কিন্তু সেখানে তিনি কোনো সহযোগিতা পাননি। দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা তারা অভিযোগ রেকর্ড করেননি। এরপর হাসপাতাল পর্যন্ত গিয়েও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগে চিকিৎসা না নিয়েই বাড়ি ফিরে যান।

পরীমণি বলেন, ‘এমন ঘটনায় সাধারণ মেয়েরা প্রথমে কোথায় যায়? থানায় যায়। আমিও থানায় গিয়েছি। আমি বারবার বলেছি, ঘটনাটা যদি নিজের সঙ্গে না ঘটে তাহলে কেউ বুঝবে না। ওইদিন পর্যন্ত কি তবে অপেক্ষা করবেন?’

অভিযুক্তদের বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চাইলে পরীমণি বলেন, ‘আমার মুখটা সাদা কাপড়ে ঢাকা পড়লেই কেবল বুঝতেন। আমি চার দিন ধরে কারও সাপোর্ট পাইনি। আপনারা সত্যিটা খোঁজেন। সাধারণ কোনো মেয়ের হলে সে খবর হয়তো আপনাদের কাছে পৌঁছায় না। সাংবাদিকদের কাছে খবর পৌঁছানো হয় না। আমার মতো যখন কোনো মেয়েকে ভয় দেখানো হয় তখন সাধারণ মেয়ের খবর তো পাবেন না!’

কাঁদতে কাঁদতে সাংবাদিকদের উদ্দেশে পরীমণি বলেন, ‘আপনারা আমাকে ৫ মিনিট কাঁদতে দেখছেন। কিন্তু আমি গত চারদিন ধরে কাঁদছি। ওই লোক আমাকে কী সব বিশ্রি কথা বলেছিলো। আমি বলতে পারছি না। আমি পাগল হয়ে যাচ্ছি। আমার জায়গায় আপনারা থাকলে হয়ত কথাও বলতে পারতেন না। আমি ওইখানে অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলাম। ওয়েটাররা ধরে আমাকে নামিয়ে দেয়। সিসি ক্যামেরায় সব রেকর্ড আছে। আমার মনে হয়েছে বিষয়টি তাদের পূর্বপরিকল্পিত।’

একপর্যায়ে অঝোরে কাঁদতে কাঁদতে পরীমণি চিৎকার করে বলেন, ‘আমি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। তবে আপনারা জেনে রাখুন, আমি আত্মহত্যা করার মতো মেয়ে নই। যদি মরে যাই তবে বুঝবেন, আমাকে মেরে ফেলা হয়েছে। আমার সঙ্গে অন্যায় করা হয়েছে। আমি এর বিচার চাই। মরলে আমি আমার বিচার নিয়ে মরব।’