রবিবার, ২৮ মে ২০২৩, ১৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০

১১ বছর ধরে বিচারের অপেক্ষায় ফেলানীর পরিবার

প্রকাশিতঃ ৭ জানুয়ারী ২০২২ | ১১:০৮ পূর্বাহ্ন


ঢাকা : আজ ৭ জানুয়ারি। সীমান্তে বহুল আলোচিত কিশোরী ফেলানী খাতুন হত্যা দিবস। ফেলানী হত্যা ১১ বছর পূর্ণ হচ্ছে আজ।

২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি ভোরে ফুলবাড়ীর অনন্তপুর সীমান্ত দিয়ে বাড়িতে ফেরার পথে ভারতীয় বিএসএফের গুলিতে মারা যান কিশোরী ফেলানী। সকাল পৌনে ৭টার থেকে নিথর দেহ কাঁটাতারে ঝুলে থাকে দীর্ঘ সাড়ে ৪ ঘণ্টা।

এ ঘটনায় আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমসহ বিশ্বের মানবাধিকার সংগঠনগুলোর তীব্র সমালোচনার মুখে পড়ে ভারত।

ফেলানী হত্যার বিচার ভারতের সর্বোচ্চ আদালতে বিবেচনাধীন রয়েছে। কিন্তু, এখনো তা বিচারকার্য তালিকায় উঠেনি। ন্যায়বিচারের আশায় এখনো অপেক্ষা করছে ফেলানীর পরিবার।

নিহত ফেলানীর পরিবার জানায়, কাজের সন্ধানে ফেলানীর বাবা নুর ইসলাম পরিবার নিয়ে ভারতের আসামে যান। সেখানে ছোট একটি চায়ের দোকান দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন।

ফেলানীর বয়স ১৬-১৭ বছর হয়েছিল। তাকে বিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল। ২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি ভোরের দিকে কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার অনন্তপুর সীমান্ত দিয়ে ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করছিলেন ফেলানী ও তার বাবা।

নুর ইসলাম কাঁটাতারের বেড়া ডিঙিয়ে পার হতে পারলেও তার মেয়ে তা পারেনি। কাঁটাতারে উঠতেই বিএসএফ সদস্য অমিয় ঘোষ গুলি চালালে কাঁটাতারের ওপরেই ঢলে পরে ফেলানীর নিথর দেহ। সেখানে প্রায় সাড়ে ৪ ঘণ্টা ঝুলে থাকার পর তার মরদেহ বিএসএফ নিয়ে যায়।

ঘটনার ৩০ ঘণ্টা পর বিজিবি’র কাছে মরদেহ হস্তান্তর করে বিএসএফ।

এ ঘটনায় বিশ্বব্যাপী তোলপাড় শুরু হলে ২০১৩ সালের ১৩ আগস্ট ভারতের কোচবিহারে জেনারেল সিকিউরিটি ফোর্সেস কোর্টে ফেলানী হত্যা মামলার বিচার শুরু হয়।

বিএসএফের এ কোর্টে সাক্ষ্য দেন ফেলানীর বাবা নূর ইসলাম ও মামা হানিফ। ওই বছরের ৬ সেপ্টেম্বর আসামি অমিয় ঘোষকে খালাস দেয় বিএসএফের বিশেষ কোর্ট। পরে রায় প্রত্যাখ্যান করে পুনঃবিচারের দাবি জানান ফেলানীর বাবা। ২০১৪ সালের ২২ সেপ্টেম্বর পুনরায় বিচার শুরু হলে ১৭ নভেম্বর আবারও আদালতে সাক্ষ্য দেন ফেলানীর বাবা। ২০১৫ সালের ২ জুলাই এ আদালত পুনরায় আত্মস্বীকৃত খুনি অমিয় ঘোষকে খালাস দেয়। রায়ের পরে একই বছর ১৪ জুলাই ভারতের মানবাধিকার সুরক্ষা মঞ্চ ‘মাসুম’ ফেলানীর বাবার পক্ষে দেশটির সুপ্রিম কোর্টে রিট পিটিশন করে। ওই বছর ৬ অক্টোবর রিট শুনানি শুরু হয়। ২০১৬ এবং ২০১৭ সালে কয়েক দফা শুনানি পিছিয়ে যায়। পরে ২০১৮ সালের ২৫ জানুয়ারি দিন ধার্য হলেও হয়নি শুনানি। পরবর্তীতে আরও কয়েকদফা শুনানির দিন ধার্য থাকলেও বিভিন্ন কারণে তা সম্পন্ন হয়নি আজও।

ফেলানীর মা জাহানারা বেগম হতাশা প্রকাশ করে বলেন, মেয়ে হত্যার বিচার চেয়ে মানবাধিকার সংস্থাসহ বহু জনের কাছে গিয়েছি। কিন্তু ১১ বছরেও কাঙ্ক্ষিত বিচার পেলাম না।

ফেলানীর বাবা নূরুল ইসলাম বলেন, দুইবার ভারতে গিয়ে সাক্ষ্য দিয়েছি। বিএসএফ সদস্য অমিয় ঘোষের নৃশংসতার বর্ণনা দিয়েছি। তারপরও ন্যায়বিচার পাইনি। ন্যায়বিচার পাওয়ার জন্য ভারতের সুপ্রিম কোর্টে রিট আবেদন দাখিল করেছি। তবে শুনানি হচ্ছে না। তারপরও আশা ছাড়িনি। প্রতীক্ষায় আছি। আর যতদিন ন্যায়বিচার পাবো না, ততদিন বিচার চাইতে থাকবো।