রবিবার, ২৮ মে ২০২৩, ১৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০

চবি শিক্ষক সমিতির নির্বাচন ঘিরে খোলা চিঠিতে তোলপাড়

প্রকাশিতঃ ১৭ জানুয়ারী ২০২২ | ১০:২১ পূর্বাহ্ন


চট্টগ্রাম : চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) শিক্ষক সমিতির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে আজ (১৭ জানুয়ারি)। এবারের নির্বাচনে সাধারণ সম্পাদকসহ মোট সাতটি পদে আওয়ামীপন্থী হলুদ দলের প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। এছাড়া বাকি ১১টির মধ্যে চার পদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এসব পদে হলুদ দলের সঙ্গে বিদ্রোহীদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে।

এদিকে, নির্বাচনের চূড়ান্ত ভোটগ্রহণের আগের রাত রোববার (১৬ জানুয়ারি) সাড়ে ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় শিক্ষকের মেইলে গেছে একটি খোলা চিঠি৷ এ চিঠিতে হলুদ দলে কোন্দল ও বিদ্রোহী প্রার্থীদের কারা দাঁড় করিয়েছে সে বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে। এই প্রতিবেদকের মেইলে এরকম একটি খোলা চিঠি এসেছে। cu.probe@gmail.com এই মেইল থেকে চিঠিটি আসে।

চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, ‘চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রগতিশীল তথা আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের প্রাণের সংগঠন বাঙালি জাতীয়তাবাদ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজে (হলুদ দল) বিভক্তি সৃষ্টি করছে কারা? এ প্রশ্নের উত্তর মেলাতে হিমশিম খাচ্ছেন তরুণ শিক্ষকরা।’

এতে বলা হয়, ‘শিক্ষকদের অধিকার নিয়ে প্রশাসনের দ্বিমুখী নীতি শিক্ষকদের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার করেছে। অসংখ্য শিক্ষকের পদোন্নতি আটকে রাখা হয়েছে। কারও কারও পদোন্নতি হয় না আট-নয় মাসেও। আবার কোনো কোনো বিভাগের শিক্ষকরা যোগ্যতা থাকার পরও নিজ বিভাগের চেয়ারম্যান হতে পারছেন না। প্রশাসনের চাপিয়ে দেওয়া অন্য বিভাগের শিক্ষককে চেয়ারম্যান হিসেবে রাখা হয়েছে বিভাগে। কলা অনুষদের একটি বিভাগে প্রভাষক নিয়োগে বিপুল অর্থ লেনদেনের অভিযোগ রয়েছে। তবে, এসব অন্যায়-দূর্নীতি উপাচার্যের সিদ্ধান্তে হচ্ছে না।‘

খোলা চিঠিতে নৃ-বিজ্ঞান বিভাগেরে এক অধ্যাপক ও প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকা এক অধ্যাপককে দায়ী করে লেখা হয়, ‘এই দুই শিক্ষক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে পক্ষপাতদুষ্ট প্রশাসনে পরিণত করেছেন। এই দুই শিক্ষক মিলে হলুদ দলের মধ্যে সৃষ্টি করেছে কোন্দল। তরুণ শিক্ষকদের বিভ্রান্ত করতে তারা বেশ কিছু বিভাগে পদোন্নতির বোর্ড আটকে রেখেছেন। এসব বোর্ড বসানোর কথা বলে তারা এখন বিদ্রোহী প্রার্থীদের পক্ষে ভোট চাচ্ছেন।’

চিঠিতে লেখা হয়, ‘উপাচার্যের সরলতা ও আস্থাকে ব্যবহার করে ওই দুই শিক্ষক ও তার অনুসারীরা শিক্ষকদের জিম্মি করে রাখার নীল-নকশা আঁকছেন। এ জন্য তাঁরা দাবার গুটি বানিয়েছেন বিদ্রোহী প্রার্থীদের, যারা প্রশাসনের বিভিন্ন সুবিধাভোগী। কেউ কেউ সরাসরি প্রশাসনের দায়িত্ব পালন করছেন।’

এতে আরও উল্লেখ করা হয়, ‘বিদ্রোহী প্রার্থীদের যিনি দাঁড় করিয়েছেন তিনি মহামান্য রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ এবং বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে কুরুচিপূর্ণ ভাষায় ফেসবুকে কুৎসা রটিয়েছেন। এমন অভিযোগ ইউজিসি তদন্ত করে সত্যতা পায়। গত বছরের ২৩ ফেব্রুয়ারি শিক্ষা মন্ত্রণালয় ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে মন্ত্রণালয়কে অবহিত করতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে চিঠি দেয়।’ শিক্ষক সমিতিতে নিজের লোকদের বিজয়ী করে এই শাস্তি থেকে রেহাই পেতেই তিনি বিদ্রোহী প্রার্থীদের দাঁড় করিয়েছেন বলেও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।

এই চিঠি শিক্ষকদের মেইলে যাওয়ার পর শুরু হয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রসায়ন বিভাগের এক শিক্ষক বলেন, ‘আমি এরকম একটি মেইল পেয়েছি। তবে এ বিষয়ে আমি কোনো মন্তব্য করতে চাই না।’ কারা এই চিঠি পাঠিয়েছেন জানতে চাইলে ওই শিক্ষক বলেন, ‘এ বিষয়ে আমার কোনো ধারণা নেই।’

জানা গেছে, সোমবার সকাল ৯টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান অনুষদের মিলনায়তনে এই ভোটগ্রহণ শুরু হবে। বেলা দেড়টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ চলবে। এবারের নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না বিএনপি-জামায়াতপন্থী শিক্ষকদের সাদা দল ও সাদা দল থেকে বেরিয়ে আসা জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরাম। নির্বাচনে মোট ভোটার রয়েছেন ৮৬২টি। এরই মধ্যে গত ১১ ও ১৩ জানুয়ারি অগ্রিম ভোট দিয়েছেন ১৭১ শিক্ষক।

নির্বাচনে হলুদ দল থেকে নির্বাচনে লড়ছেন সভাপতি পদে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক হানিফ সিদ্দিকী, সহ-সভাপতি পদে ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক আবদুল হক, কোষাধ্যক্ষ পদে চারুকলা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক জসিম উদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক পদে মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক সজীব কুমার ঘোষ, যুগ্ম সম্পাদক পদে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হেলাল উদ্দিন আহম্মদ।

এছাড়া সদস্য পদে জিন প্রকৌশল ও জৈবপ্রযুক্তি বিভাগের নাজনীন নাহার ইসলাম, বাংলা বিভাগের শারমিন মুস্তারী, সমাজতত্ত্ব বিভাগের মুহাম্মদ শোয়াইব উদ্দিন হায়দার, রসায়ন বিভাগের ফণীভূষণ বিশ্বাস, পদার্থবিদ্যা বিভাগের সৈয়দা করিমুন্নেছা ও আইন বিভাগের হোছাইন মোহাম্মদ ইউনুছ সিরাজী।

হলুদ দল থেকে মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে চারটি পদে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন হলুদ দলের আরও চার প্রার্থী। এরা হলেন সভাপতি পদে ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক সেলিনা আখতার, সহ-সভাপতি পদে ফলিত রসায়ন ও কেমিকৌশল বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সুমন বড়ুয়া, কোষাধ্যক্ষ পদে একই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সুমন গাঙ্গুলী ও যুগ্ম-সম্পাদক পদে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এস এ এম জিয়াউল ইসলাম।