প্রমাণ মিলেছে দুর্নীতির তবু বহাল তবিয়তে রেল কর্মকর্তারা


মোহাম্মদ রফিক : রেলওয়েতে দুর্নীতি থামছেই না। তদন্তে ‘দোষী’ প্রমাণিত হয়েও বহাল তবিয়তে আছেন দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্তরা। অপরাধীদের শাস্তি না হওয়ায় বন্ধ হচ্ছে না অনিয়ম৷ ভেস্তে যাচ্ছে দুর্নীতি বন্ধের সকল প্রচেষ্টা।

জানা গেছে, করোনাভাইরাস সুরক্ষা সামগ্রী ক্রয়ে দুর্নীতিতে রেলওয়ে পুর্বাঞ্চলের ২৯ জন কর্মকর্তা জড়িত থাকার প্রমাণ পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তদন্ত কমিটি। এর মধ্যে ২১ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা করার সিদ্ধান্ত নিলেও রহস্যজনক কারণে অভিযুক্তদের এখনো শাস্তির আওতায় আনেনি দুদক।

দুর্নীতি-অনিয়মের অভিযোগ ওঠা ২১ জন কর্মকর্তার মধ্যে রয়েছেন- অতিরিক্ত মহাপরিচালক (আরএস) মো. মঞ্জুর-উল-আলম চৌধুরী, পূর্বাঞ্চল রেলওয়ের তৎকালীন মহাব্যবস্থাপক বর্তমান অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপা.) সরদার সাহাদাত আলী, পূর্বাঞ্চলের প্রধান সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক (সিসিএস) রুহুল কাদের আজাদ, অতিরিক্ত সিসিএস মো. আনোয়ারুল ইসলাম বর্তমানে ইনভেন্ট্রি কন্ট্রোল সেলের পরিচালক মো. মনিরুজ্জামান, এসিওপিএস সাহেব উদ্দিন, মজিবুল হক, এসিসিএম আর খায়রুল করিম, বর্তমানে সহকারী ট্রাফিক সুপারিন্টেন্ডেন্ট (টিকেট চেকিং) মো. এমদাদুর রহমান, মো. জাহিদ হাসান, মো. মারুফ, প্রধান চিকিৎসা কর্মকর্তা ফারজানা উম্মে খানম, গৌতম কুমার কুন্ড, সুকেন্দ্রনাথ হালদার, মহিউদ্দিন আহমেদ, কাজী নাজিম উদ্দিন, ফাতেমা আক্তার, মো. রাহিদ হোসেন ও ফরিদ আহমেদের নাম।

সংশ্লিষ্টরা জানান, ২০২০ সালে করোনা সুরক্ষাসামগ্রী ক্রয়ে দুর্নীতির জন্য পূর্বাঞ্চল রেলের ২১ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করে রেলওয়ের তদন্ত কমিটি। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করে ২০২০ সালের ৫ নভেম্বর রেলপথ সচিব মো. সেলিম রেজার কাছে প্রতিবেদন জমা দেয় কমিটি। প্রকৃত মূল্যর চেয়ে বেশি দরে কেনাকাটার প্রমাণ পেয়েছে বলেও উল্লেখ করা হয় প্রতিবেদনে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, এপ্রিল-মে’তে কেনাকাটায় ৭৭৫ থেকে সর্বোচ্চ ১৫০০ টাকার থার্মোমিটার ১২ হাজার ৩০০ টাকা, আট টাকার গ্ল্যাভস ৩২ টাকায়, ১০ টাকার মিনি সাবান ২৫ টাকায়, ১২০ টাকা কেজির ডিটারজেন্ট ১৮৮ টাকায়, ১২০ টাকা কেজির ব্লিচিং পাউডার ১৯৩ টাকায়, ১৩০ টাকার হেক্সিসল ৩৮৪ টাকায়, ১২০ টাকার প্লাস্টিক চশমা ৩৯৭ টাকায়, ১৫০ থেকে ৪০০ টাকার চীনের তৈরি কেএন-৯৫ মাস্ক ৭২৭ টাকায় এবং ট্রলি ও ফ্লুমিটারসহ প্রতিটি অক্সিজেন সিলিন্ডার কেনা হয় ৪১ হাজার টাকায়।

কমিটির সুপারিশে বলা হয়েছে, ওটিএম পদ্ধতিতে দরপত্র আহ্বান করা হলে অবাধ প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করা সম্ভব হতো এবং প্রতিযোগিতামূলক দর পাওয়া যেত। এক্ষেত্রে তা না করে সরকারের আর্থিক ক্ষতি করা হয়েছে।

সুপারিশে আরও বলা হয়, সিসিএস দফতর ও সিওএস দফতরের ২৯ কর্মকর্তা ক্রয় কাজে সম্পৃক্ত ছিলেন। তাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ যেমন সত্য, উচ্চমূল্যে কেনাকাটার বিষয়টিও প্রমাণিত। কমিটি ২৯ কর্মকর্তাকে দায়ী করে ভবিষ্যতে তাদের এ ধরনের কেনা কাটার কাজ না দেয়ার সুপারিশ করেছে। অভিযোগ আছে, দুনীতির দায়ে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।

রেলওয়ে পূর্ব অঞ্চলের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্তদের বিচার না হওয়ায় তারা আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠছে।’ এই প্রসঙ্গে জানতে চাইলে রেলের মহাপরিচালক ধীরেন্দ্র নাথ মজুমদার কোন প্রকার মন্তব্য করতে রাজি হননি।

কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান ও চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিটির সভাপতি এস এম নাজের হোছাইন বলেন, ‘রেলে দুর্নীতি নতুন কিছু নয়। সরকারের গুরুত্বপূর্ণ এই দপ্তরে অনিয়মের মাত্রা দিন দিন চরম পর্যায়ে পৌছেছে। দুঃখজনক হলো- দুর্নীতির সঙ্গে যারা জড়িতদের শাস্তি না দিয়ে উল্টো পদন্নোতি দেওয়া হয়।’

এ প্রসঙ্গে রেলপথমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন একুশে পত্রিকাকে বলেন, ‘রেলে কোনো অনিয়ম-দুনীতি আমি সহ্য করব না। করোনাভাইরাস সুরক্ষা সামগ্রী ক্রয়ে দুর্নীতির অভিযোগ তদন্ত করা হয়েছে। এ সংক্রান্তে গঠিত কমিটি তদন্ত রিপোর্ট দিয়েছে। কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। অনিয়মের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।’