হাটহাজারী (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি : সায়রা খাতুন জেনেছিলেন কোনো ঋণগ্রহিতা মারা যাওয়ার পর তার ঋণ মওকুফ হয়ে যায়। বিভিন্ন এনজিও থেকে নেয়া ঋণের ভারে জর্জরিত সায়রা খাতুন ঋণ থেকে মুক্তি পেতে শেষপর্যন্ত জীবন থেকেই মুক্তি নিলেন আত্মহননের মধ্য দিয়ে। আত্মহত্যার কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে উঠে আসে এই তথ্য।
গত ১৬ মে চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার ফতেপুরের লতিফপাড়া গ্রামের নিজ ঘরে গলায় ওড়না পেছিয়ে আত্মহত্যা করেন আলি সারেং বাড়ির মৃত উবায়দুল হকের স্ত্রী সায়রা খাতুন (৫০)।
সায়রা খাতুন বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে দ্বিতীয় মেয়েকে বিয়ে দেন। কিন্তু কোন পুত্র সন্তান কিংবা বিক্রির মত জায়গা জমি না থাকায় সময়মতো ঋণের টাকা পরিশোধ করতে ব্যর্থ হলে এনজিওকর্মীদের বকাঝকাও খেতেন প্রায়সময়।
সায়রা খাতুনের পারিবারিক সূত্র জানায়, প্রথম তিনি ঋণ নিয়েছিলেন গ্রামীণ ব্যাংক থেকে বছর খানেক আগে। ঠিকমতো গ্রামীণের টাকা পরিশোধ করতে না পারায় সুদ-আসলে ঋণের অংক একসময় বড় হয়ে উঠে।
জানা যায়, গ্রামী ব্যাংকের মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের অব্যাহত চাপের মুখে তিনি একের পর এক ঋণ নেন ব্র্যাক, সাজেদা ফাউন্ডেশন, টিএমএস, প্রত্যাশা, ইপসা, দুঃস্থ স্বাস্থ্য, পল্লীউন্নয়ন থেকে।
আত্মহত্যাকারীর ভাই মোহাম্মদ ইদ্রিস জানান, মাস ছয়েক আগে এসব এনজিও থেকে নেওয়া
টাকায় গ্রামীণের ঋণ পরিশোধ হলেও ক্রমান্বয়ে তার বোনোর ঋণের বোঝা’ বড় হয়ে যায়।
সর্বশেষ তিনি দ্বারস্থ হন ক্ষুদ্র ঋণদান সংস্থা এসএস-এর হাটহাজারী চৌধুরী হাট শাখায়। সেখান থেকে নেওয়া ঋণসহ সব মিলিয়ে তার ঋণের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় তিন লাখ টাকার উপরে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ নম্বর গেইটের ছাত্র কটেজে রান্নার কাজ করে উপার্জিত অর্থের একটি বড় অংশ নিয়মিত ঋণদান সংস্থাগুলোর পকেটে দিয়ে দেনা-পাওনার মাঝে একটা ভারসাম্য তৈরি করার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করছিলেন সায়রা খাতুন।
কিন্তু শারীরিক অসুস্থতার কারণে গত দুই মাস তিনি কাজ করতে পারেননি। ফলে ঋণের কিস্তি পরিশোধ করাও তার পক্ষে সম্ভব হয়নি।
ইদ্রিস জানান, আত্মহত্যার আগের দিন সর্বশেষ দেওয়া কিস্তিটা ছিলো এসএস-এর। এসএস কিস্তির টাকা ছিলো ৭৫০ টাকা। কিন্তু সায়রা খাতুন দিতে পেরেছিলেন ৫০০ টাকা। তার পরেরদিন সকালেই আত্মহত্যা করেন।
ঘটনার দিন সকালে এক পাওনাদার টাকার জন্যে এসে কারো কোন সাড়া না পেয়ে ঘরের দরজা ভেঙ্গে ভেতরে ঢুকে গলায় ওরনা জড়ানো অবস্থায় ফাঁসিতে ঝুলানো সায়রা খাতুনের লাশ দেখতে পান।
স্থানীয় ইউপি সদস্য হামিদ জানান, ঋণের টাকার চিন্তায় মূলত মহিলাটি আত্মহত্যা করেন। ঋণের বোঝা বেড়ে যাওয়ায় তিনি আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছিলেন বলে শুনেছি।
হাটহাজারী মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মো. বেলাল উদ্দিন জাহাঙ্গীর ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, নিহতের পক্ষ থেকে কারো বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ না থাকায় ময়না তদন্ত ছাড়া লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
এদিকে সরেজমিনে যোগাযোগ করা হলে ঋণদান সংস্থা এসএস চৌধুরী হাট শাখার কর্মকর্তা জানান, ঋণ নেয়ার পর যদি গ্রহীতা বা নমিনি যে কোনো একজনের কোনো কারনে মৃত্যু হয় তবে তার কাছে পাওনা সমস্ত ঋণ মওকুফ করে দেয়া হয়। এটাই এসএস’র নিয়ম। তাই সায়রা খাতুনের সমস্ত ঋণ স্বয়ংক্রিয়ভাবে মওকুফ হয়ে গেছে।
