- চট্টগ্রাম মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি-সম্পাদক হওয়ার পর প্যানেল মেয়র আবদুস সবুর লিটনের কাছে ছুটে যান দেবাশীষ নাথ দেবু ও আজিজুর রহমান আজিজ।
আবছার রাফি : ঢাকার পরই রাজনীতির বড় ইউনিট চট্টগ্রাম মহানগর। আওয়ামী লীগ তো বটেই; অঙ্গসংগঠনগুলোর কমিটিও ঢাকার পর দেশের অন্যান্য অঞ্চল বা ইউনিটের চেয়ে বিশেষ গুরুত্ব পেয়ে থাকে কেন্দ্রসহ রাজনীতিক সচেতন মহলে।
সে কারণে নগরে নতুন কোনো কমিটি হলে স্বাভাবিকভাবেই শীর্ষ নেতৃবৃন্দের কাছে ফুলেল শুভেচ্ছাবিনিময়, মিষ্টিমুখ, খাওয়া-দাওয়া সব মিলিয়ে উৎসবের আমেজ থাকে টানা কয়েকমাস। অতীতে দায়িত্বপ্রাপ্ত কমিটির নেতাদের টুঙ্গিপাড়ায় জাতির জনকের সমাধিতে ফুল নিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য ছুটতেও দেখা গেছে।
এখানকার রাজনীতি-বিশ্লেষকদের মতে, এবারই প্রথম স্বেচ্ছাসেবক লীগের ২০ সদস্যের কমিটি হওয়ার পর পদপ্রাপ্তিদের মাঝে তেমন উৎসবমুখরতা লক্ষণীয় নয়। গত ১০ মার্চ কমিটি ঘোষণা হওয়ার পর ২১ দিন পার হলেও টুঙ্গিপাড়ায় স্বাধীনতার মহান স্থপতির সমাধিতে শ্রদ্ধা জানানো দূর অস্ত; চট্টগ্রামের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গেও দেখা করতে যাননি।
প্রয়াত নেতা এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী বলয় থেকে দেবাশীষ নাথ দেবু ও আজিজুর রহমান আজিজ মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের নতুন কমিটিতে যথাক্রমে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক হয়ে দুজনই এই প্রাপ্তি বা অর্জন মহিউদ্দিন চৌধুরীকে উৎসর্গ করেছেন, কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন মহিউদ্দিনপুত্র শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের প্রতি।
রাজনীতি-সচেতনরা বলছেন, মহিউদ্দিন চৌধুরী ও তাঁর সন্তানের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানোর পাশাপাশি স্বেচ্ছাসেবক লীগের নতুন নেতৃত্ব এই মুহূর্তে চট্টগ্রামের রাজনীতির অভিভাবক আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম মেম্বার ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতা মাহতাবউদ্দিন চৌধুরী, সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন, বর্তমান মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী কিংবা প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা হিসেবে দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমেদ, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের সঙ্গে দেখা করে শুভেচ্ছাবিনিময় তথা দিকনির্দেশনা, পরামর্শ চাইতে পারতেন। এবং এটাই হতে পারত কুৎসিত, হিংসাত্মক রাজনৈতিক সংস্কৃতির বিপরীতে সুন্দর, ঐক্যবদ্ধ রাজনীতির নতুন উদাহরণ।
কিন্তু তাঁদের কারো কাছেই না গিয়ে নতুন কমিটির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক বরং ঘটা করে ফুল দিতে গেছেন চট্টগ্রামের আলোচিত-সমালোচিত প্যানেল মেয়র আবদুস সবুর লিটনকে। অবশ্য চট্টগ্রাম ১১ আসনের এমপি এম এ লতিফ ও চেম্বার সভাপতি মাহবুব আলমকেও ফুল দিতে দেখা গেছে তাদের।
রাজনীতি সচেতনরা বলছেন, লিটনকে শুভেচ্ছা জানানোর ক্ষেত্রে তাদের উৎসবমুখর আয়োজন ও উপস্থিতিতে বরং এটাই মনে হয়েছে যে, এই মুহূর্তে আবদুর সবুর লিটনই চট্টগ্রামের শীর্ষ নেতা; অথচ লিটনের উল্লেখ করার মতো দলীয় কোনো পদ-পদবীই নেই।
এরইমধ্যে লিটন অনুসারীরা চাউর করেছেন আগামীতে উপ নির্বাচন হোক কিংবা স্বাভাবিক নির্বাচন হোক ডা. আফছারুল আমীনের আসনে তিনিই (লিটন) এমপি হবেন। মনোনয়ন বাগিয়ে আনার মতো অর্থনৈতিক শক্তিসামর্থ্যসহ সকল শক্তিমত্তা প্রদর্শন-প্রমাণের যোগ্যতা আছে আবদুস সবুর লিটনের।
প্রশ্ন উঠেছে, পরিশুদ্ধতা আর ঐক্যবদ্ধ রাজনীতির ডাকডোল পিটিয়ে দীর্ঘ ২০ বছরের বেশি সময় পর চট্টগ্রাম নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতৃত্বে আসীনরাও কি তাহলে কুৎসিত, কদর্যতার পথেই হাঁটবে? ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবসে ফুল দিতে গিয়ে ডাকসুর সাবেক ভিপি নূরের অনুসারীদের সঙ্গে দ্বন্দ্ব ও মারপিটে জড়ানোটাও কি তাহলে পুরোনো সংস্কৃতির নতুন রূপ?
তবে স্বেচ্ছাসেবক লীগের নতুন নেতৃত্বের দাবি, আলাদাভাবে দেখা করে শুভেচ্ছাবিনিময় না করলেও আ জ ম নাছির উদ্দীনের প্রয়াত মা’র মেজবানে তারা উপস্থিত হয়েছেন; ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাবউদ্দিন চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছিরের সাথে দেখা করেছেন। মেজবানীয় ব্যস্ততার মাঝেই দেবু-আজিজকে মিষ্টিমুখ করিয়েছেন মাহতাব-নাছির।

