মঙ্গলবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৬ ভাদ্র ১৪৩১

স্মৃতির মেলায় বন্ধুতায় হারায়

প্রকাশিতঃ ২ এপ্রিল ২০২২ | ১২:৪৯ অপরাহ্ন


কাজী হোসনে আরা বেগম রেনু : সময় যতো এগিয়ে যেতে থাকে মানুষের স্মৃতিকাতরতাও যেন বাড়ে। ফেলে আসা দিনগুলো যেন ডেকে নিয়ে যায়। বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ে বন্ধুরাও যদি সেই আয়োজনে সামিল হয়। আমাদের জন্য তেমন একটি দিন ছিল ২৬ মার্চ।

সকালে বাস নিউমার্কেট হতে জিইসি হয়ে যাত্রা শুরু করলো চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্দেশ্যে। বাসে উঠেই যেন ফিরে গেলাম ছাত্রজীবনে। সবার আবেগময়তা আর কথার ফুলঝুরিতে কখন যে আমরা বিশ্ববিদ্যালয় ১ নম্বর গেইটে পৌঁছে গেছি বুঝতেই পারিনি। পৌঁছেই মনে হলো আমাদেরকে বরণ করে নিতে প্রকৃতি সেজেছে নতুন সাজে।

শুরুতেই মনটা ভালো হয়ে গেলো। রেলস্টেশন পেরিয়ে কাটাপাহাড়ের ভেতরের মসৃণ রাস্তা পেরিয়ে যখন ক্যাম্পাসের দিকে যাচ্ছিলাম তখন কেউ কেউ কাটাপাহাড়ের সেই এবড়োথেবড়ো রাস্তার কথা মনে করে স্মৃতিকাতর হয়ে পড়লো।

গাড়ি ফ্যাকাল্টির সামনে আসতেই হৈ হুল্লোড়, চিৎকার চেঁচামেচি, ফটোসেশান সবমিলিয়ে এক আবেগঘন মুহূর্ত। আবেগঘন মুহূর্ত সামাল দিয়ে নাস্তার উদ্দেশ্যে শিক্ষক লাউন্জে নিয়ে যেতে বেচারা হাসমতের গলদঘর্ম অবস্থা। বন্ধু ও বন্ধুর পরিবারকে আপ্যায়নে ব্যতিব্যস্ত হাসমত নিজহাতে পৌঁছে দিচ্ছে নাস্তার প্লেট। তার সাথে রিপন,পলাশ, সালামসহ আরও কয়েকজন। চলছে দীর্ঘদিনের না বলা কথার আদানপ্রদান, হাসিঠাট্টা আর ফোড়ঁন কাটা।

ইতোমধ্যে পেয়ারুকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিলো না। কিছুক্ষণের মধ্যে তাকে দেখা গেলো বউয়ের হাত ধরে ধীরলয়ে শিক্ষক লাউঞ্জে আসতে। সালামকে কিছু টোকেন হাতে ঘুরঘুর করতে দেখে মনে হলো সত্যিকারের ফাইন্যান্সের ছাত্র আর আমাদের অর্থমন্ত্রী আতিকের সেকি গুরুগম্ভীর ভাব! সাইন্স ফ্যাকাল্টির সামনে শিক্ষক লাউঞ্জের পেছনে কিছুদূর হাঁটতেই এসে পড়লাম এমন একটি জায়গায় যেখানে সারিসারিভাবে লাগানো ছিলো পাম ট্রি। জসীমসহ বেশ কয়েকজনের কন্ঠে।

পাম ট্রি বাগান পেরিয়ে সামনে যেতেই দুপাশে পাহাড়, মাঝখানে লেক আর সরু রাস্তা। ক্লান্তি আমাদের কিছুটা কাবু করলেও বাচ্চাদের ধারেকাছেও আসতে পারেনি। সবাই ব্যস্ত ফটোসেশনে। কেউবা পুরনো প্রেমিকাকে দেখে। মিলি আর টিপুর এমন একটি ভাব তারা যেনো আজকেও সেই আগের প্রেমিক প্রেমিকা। সাইন্স ফ্যাকাল্টির সামনে ফিরে এসেই দেখতে পেলাম ইকবাল, ওয়াহিদ, নোবেল চলে এসেছে।

পা ভাঙার অজুহাতে নোবেল সেতুকে বাসায় রেখে আসার অপচেষ্টা করলেও শেষমেশ সেতু নিজেই উপস্থিত হয়ে অনুষ্ঠানকে করে তুললো প্রাণবন্ত। ‘এই নোবেইল্লা আঁর ব্যগ ধর’- সেতুর এই একটি উক্তিতেই মনে হলো সে তাকে না নিয়ে আসার প্রতিশোধ নিয়ে ফেলেছে। তবে অনুষ্ঠানের শেষার্ধে যখন আনোয়ারের বউ উপস্থিত হলো আনোয়ার এর উৎফুল্লভাব ছিলো দেখার মতো।

তারপর দুপুরের খাবার শেষে সকলে চলে এলাম মাঠে। মাঠে আসবো স্মৃতিবিজড়িত ক্যাম্পাসে যাবো না, তা কি করে হয়? পুরনো ক্যাম্পাস ঘুরে দেখা, স্মৃতিচারণ করা শেষে আবার চলে এলাম মাঠে। এরই মধ্যে আমাদের সাথে এসে যোগ দিলো শাকিল, রুবাইয়াত, নাজু (স্বামীসহ)। বন্ধুত্বের টানে তাদের আর ঘরে থাকা সম্ভব হয়নি।

গতানুগতিকতার বাইরে সকল বন্ধুরা, বাচ্চারা, ভাবীরা বিভিন্ন ইভেন্টে অংশগ্রহণ করে জিতে নিলো নির্ধারিত পুরস্কার। এরপর ইকবালের পরিবেশনার সাথে সাথে সকলেই গেয়ে উঠলো, মুখরিত জীবনের চলার বাঁকে…। আর মিষ্টি মেয়ে দিনার মিষ্টি মিষ্টি কথা আমাদের প্রাণটা দিলো জুড়িয়ে। সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলো। আকাশে অন্ধকার নামার সাথে সাথে সকলের মন অন্ধকারে ছেয়ে গেলো।

শেষ হয়েও যেন হইলো না শেষ। কোথায় যেনো পড়েছিলাম বয়স বাড়ার সাথে সাথে অনেক পেছনের স্মৃতিগুলো মানুষকে তাড়া করে বেড়ায়। মানুষ বড্ড স্মৃতিকাতর হয়ে পড়ে। সেই স্মৃতিময় দিনগুলোতে হয়তো বা ফিরে যাওয়া সম্ভব নয়। তারপরও নতুন আঙ্গিকে সেই দিন যেন ফিরে পাওয়া।

লেখক : প্রাক্তন শিক্ষার্থী, ফাইন্যান্স, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।