তানভীর শাহরিয়ার রিমন : একটা মিশ্র অনুভূতি নিয়ে লিখছি! ২০২১-২২ অর্থবছরে আমাদের রেকর্ড রপ্তানি আয় হয়েছে! অংকে ৫২.০৮ বিলিয়ন ডলার! এর আগে সর্বোচ্চ রপ্তানি ছিল ২০১৮-১৯ সালে ৪০.৫৩ বিলিয়ন ডলার। বিশ্বজুড়ে মহামারি, যুদ্ধ। এর মাঝেও এই অর্জন অসামান্য!
এবার বলি, মিশ্র অনুভূতি কেন হচ্ছে। দেখুন, এই যে রেকর্ড রপ্তানি হলো আমাদের, তার ৮১ শতাংশই কেবল মাত্র একটি খাত থেকে। হ্যাঁ, ঠিকই ধরেছেন, তৈরি পোশাক খাতই সবচেয়ে বৃহৎ কন্ট্রিবিউটর। আমরা ৭০০ এর উপরে পণ্য রপ্তানি করি ২০০ এরও অধিক দেশে, অথচ বাকি সব পণ্য মিলে মাত্র ১৯ শতাংশ কন্ট্রিবিউশন! এটা একটা চিন্তার জায়গা। কেন? সেটা পরে বলছি।
মিশ্র অনুভূতির আরেকটা কারণ আমরা যেমন রপ্তানির রেকর্ড গড়েছি তেমনি আমাদের আমদানিও রেকর্ড ছুঁয়েছে! চিন্তা করতে পারেন, ৮০ বিলিয়ন ডলার প্রায়! তার মানে হলো বিরাট অংকের বাণিজ্য ঘাটতি তৈরি হয়েছে আমাদের। যেটা অংকে প্রায় ৩০ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি! এটা কোনোভাবেই ভালো খবর না। এতে রিজার্ভের উপর চাপ বাড়ে।
এখন আন্তর্জাতিক বাজারে জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে, কাজেই আমদানির পরিমাণ যদি একই থাকে তারপরও দাম বৃদ্ধির কারণে মূল্য পরিশোধ করতে হচ্ছে বেশি। কিন্তু আমরা যখন রপ্তানি করছি তখন কিন্তু বায়াররা আমাদের সঠিক মূল্য দিচ্ছে না। ওরা নানা অজুহাতে প্রাইস বার্গেন করছে। এমনকি কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধির পরও খুব কম তৈরি পোশাক রপ্তানিকারী প্রতিষ্ঠান প্রাইস এডজাস্টমেন্ট করতে পারছে। সামনে এই বার্গেন যে কমবে তার কোনো সম্ভাবনা নাই। বরং বিশ্বব্যাপী, বিশেষ করে ইউরোপ আমেরিকায় যে উচ্চহারে ইনফ্লেশন হইছে, তাতে করে এই অর্থবছরে নতুন অর্ডারের পরিমাণ ঠিক থাকবে তো?
ভিয়েতনাম আমাদের তৈরি পোশাক রপ্তানির অন্যতম বড় প্রতিদ্বন্দ্বী। ২০২১ সালে ভিয়েতনাম ৩৩৬ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি করে। তার মাঝে তাদের তৈরি পোশাক খাত থেকে রপ্তানি হয় ৩৩ বিলিয়ন ডলার। ফোন বিক্রি থেকে রপ্তানি আয় হয় ৫৭ বিলিয়ন ডলার। ইলেকট্রনিকস থেকে আসে ৫১ বিলিয়ন ডলার, মেশিনারি ইক্যুইপমেন্টস থেকে ৩৮ বিলিয়ন ডলার, জুতা রপ্তানি থেকে ১৭ বিলিয়ন ডলার, টিম্বার থেকে ১৫ বিলিয়ন ডলার, আয়রন এবং স্টিল থেকে ১১.৭৫ বিলিয়ন ডলার, মোটর পার্টস থেকে ১০.৬৯ বিলিয়ন, সি-ফুড ৮.৮৯ থেকে আসে বিলিয়ন ডলার।
একটু ভালো করে খেয়াল করেন, ওদের এক্সপোর্ট এর কত ডাইভারসিটি। এখন কোনো কারণে একটা খাত সমস্যায় পড়লেও অন্য খাতগুলো ঠিকই টেনে নিয়ে যেতে পারবে। অথচ আমাদের এক্সপোর্ট এর ৮১ শতাংশই তৈরি পোশাকখাত নির্ভর। এখানেই চিন্তা।
যাই হোক আমদানি নির্ভরতা কমানোর উপায় খুঁজতে হবে আমাদের। যদিও বিষয়টা খুব সহজ না। তাই বলে এক্সপোর্ট এর ৫০ বিলিয়ন অতিক্রম করার অর্জন মোটেই ফেলনা না, যখন জানবেন এর ৪২ বিলিয়নই এসেছে কেবলমাত্র তৈরি পোশাকখাত থেকে। এই খাতের সংশ্লিষ্ট সকলকে অভিনন্দন।
অর্থবছর; রপ্তানি আয় (ডলার)
২০২১-২২; ৫২.০৮ বিলিয়ন
২০২০-২১; ৩৮.৭৫ বিলিয়ন
২০১৯-২০; ৩৪.৬৭ বিলিয়ন
২০১৮-১৯; ৪০.৫৩বিলিয়ন
লেখক : তানভীর শাহরিয়ার রিমন, রিয়েলটর।