বুধবার, ৪ অক্টোবর ২০২৩, ১৯ আশ্বিন ১৪৩০

বাংলাদেশ-ভারতের সিইপিএ চুক্তিতে অপার সম্ভাবনা

প্রকাশিতঃ ২৭ অগাস্ট ২০২২ | ১০:৩৫ অপরাহ্ন


ফারুক আবদুল্লাহ : দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার বাংলাদেশ। ধারাবাহিকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে দুই দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য। বর্তমানে এর মূল্য ১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ভারত বাংলাদেশের সাথে তার আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের প্রায় ১.৫ শতাংশ ভাগ করে এবং একটি বিশাল বাণিজ্য উদ্বৃত্ত রয়েছে।

একটি উদীয়মান বাংলাদেশ এবং একটি সমৃদ্ধশালী ভারতের মধ্যে বিশাল সমন্বয় রয়েছে। দেশ দুটি পরস্পরের জন্য ভালো এমন বিষয়গুলো নিয়ে একটি যৌথ স্টাডি গ্রুপ (জেএসজি) একটি দ্বিপাক্ষিক সিইপিএ-তে প্রবেশের সম্ভাবনাগুলি খুঁজে বের করতে কমিশন করা হয়েছিল। উভয় পক্ষের আলোচক ও বাণিজ্য বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে গঠিত জেএসজি সিইপিএ-র সম্ভাব্যতার বিষয়ে তাদের সুপারিশ জমা দিয়েছে।

সিইপিএ হল একটি আঞ্চলিক বাণিজ্য চুক্তি (আরটিএ) যা পণ্য ও পরিষেবা, বিনিয়োগ, অবকাঠামো প্রকল্প এবং ই-কমার্স ব্যবসার ব্যবস্থাপনা ও নীতি-নৈতিক অংশ নিয়ে আলোচনা করে। এটি বাংলাদেশ ও ভারতের নিজস্ব ব্যবসার নিয়ম-নীতি ও পলিসিগুলোর সমন্বয়ের মাধ্যমে দুই দেশকে পরষ্পরের সঙ্গে অর্থনৈতিক কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার স্বাধীনতা দেয়। বাংলাদেশ ও ভারত চারটি বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে- নিরবচ্ছিন্ন সাপ্লাই চেইন, প্রতিরক্ষা সরঞ্জামের যৌথ উৎপাদনে প্রেরণা, বিনিয়োগের সম্ভাব্য ক্ষেত্র অন্বেষণ এবং ভ্যাকসিন এবং অন্যান্য ওষুধের যৌথ উৎপাদন।

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে প্রস্তাবিত সিইপিএ-এর তিনটি মাত্রা রয়েছে, পণ্য বাণিজ্য, পরিষেবা বাণিজ্য এবং বিনিয়োগ। প্রস্তাবিত সিইপিএ-এর মূল লক্ষ্য হল বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বিশাল বাণিজ্য ব্যবধান হ্রাস করা এবং সংযোগ, নতুন বাজার এবং সহযোগিতা ও অংশীদারিত্বসহ নতুন অর্থনৈতিক সুযোগ উন্মুক্ত করা। এটি দ্বিপাক্ষিক অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্কের উল্লেখযোগ্য সুবিধা প্রদান করবে।

এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের সাথে একটি ব্যাপক অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তি (সিইপিএ) স্বাক্ষরের জন্য আনুষ্ঠানিক আলোচনা শুরু করার সবুজ সংকেত দিয়েছেন, যা পূর্ব ও উত্তর-পূর্ব ভারতে বাণিজ্য ও বিনিয়োগকে বড় আকারে বাড়িয়ে তুলতে পারে।এটি হবে যেকোনো দেশের সাথে ঢাকার প্রথম বাণিজ্য চুক্তি। এতে চীন ও জাপানের মুক্ত-বাণিজ্য চুক্তি করার অনুরোধ সত্ত্বেও ভারতকে অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে।

আর জাপান এবং চীনের সাথে চুক্তিগুলো এখনও মূল্যায়ন পর্যায়ে রয়েছে। ৬-৭ সেপ্টেম্বর শেখ হাসিনার প্রস্তাবিত ভারত সফরের সময় সিইপিএ আলোচ্যসূচিতে স্থান পাবে। প্রস্তাবিত চুক্তির ফলে বাংলাদেশের রপ্তানি আয় ১৯০ শতাংশ এবং ভারতের ১৮৮ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে এবং মোট দেশজ উৎপাদন যথাক্রমে ১.৭২ শতাংশ এবং ০.০৩ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা হচ্ছে, যা ঢাকা-দিল্লি যৌথ সম্ভাব্যতা সমীক্ষায় প্রকাশ করা হয়েছে।

গত অর্থবছরে প্রথমবারের মতো ভারতে বাংলাদেশের রপ্তানি প্রায় ২ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে। ভারত থেকে আমদানি মোট ১৪ বিলিয়ন ডলার। সংশ্লিষ্টদের মতে, দক্ষিণ এশীয় মুক্ত বাণিজ্য এলাকা চুক্তির অধীনে স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে ভারতে তামাক ও অ্যালকোহলসহ ২৫টি পণ্য রপ্তানির জন্য বাংলাদেশ ইতিমধ্যেই শুল্কমুক্ত এবং কোটামুক্ত সুবিধা ভোগ করেছে।

২০২১ সালের মার্চ মাসে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের সময় তিনি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিইপিএ স্বাক্ষর সংক্রান্ত যৌথ সম্ভাব্যতা সমীক্ষা শেষ করার নির্দেশনা জারি করেছিলেন। সেই অনুযায়ী, বাংলাদেশের ফরেন ট্রেড ইনস্টিটিউট এবং ভারতের সেন্টার ফর রিজিওনাল ট্রেড বিশদ যৌথ সম্ভাব্যতা সমীক্ষা পরিচালনা করে। চলতি বছরের মে মাসে তারা সমীক্ষা প্রতিবেদন নিজ নিজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে জমা দেন। তাতে প্রতিবেদনে সিইপিএ স্বাক্ষরের জন্য আলোচনা শুরু করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

যৌথ সম্ভাব্যতা সমীক্ষার চূড়ান্ত খসড়া প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, একবার বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষরিত হলে, পরবর্তী ৭-১০ বছরে বাংলাদেশের রপ্তানি আয় ৩-৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং ভারতের ৪-১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বৃদ্ধি পাবে। গবেষণায় দাবি করা হয়েছে, এটি উভয় দেশের জন্য নতুন বিনিয়োগের রাস্তা খুলবে।

লেখক: সাংবাদিক