‘পোল্ট্রি শিল্প ধ্বংস করে বছরে ৫ হাজার কোটি টাকা লোপাট’


ঢাকা : পোল্ট্রি শিল্প ধ্বংস করে করপোরেট কোম্পানিগুলো বছরে পাঁচ হাজার কোটি টাকা লোপাট করছে বলে দাবি করেছে বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএ)। সংগঠনটি বলছে, বর্তমানে পোল্ট্রি শিল্প মারাত্মক হুমকির মুখে। দেশের সব ইলেক্ট্রনিক্স ও প্রিন্ট মিডিয়ার মাধ্যমে খামারিদের সংকটময় প্রতিবেদন প্রচারিত হয়েছে। কিন্তু দেশবিরোধী কিছু আমদানিকারক বিদেশ থেকে ডিম আমদানির জন্য আবেদন করেছেন। সরকার অনুমতি দিলেই তারা আমদানি করবেন। যা পোল্ট্রি শিল্প ধ্বংসের আরেকটি ষড়যন্ত্র।

মঙ্গলবার (২২ নভেম্বর) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির নেতারা এসব কথা বলেন। লিখিত বক্তব্যে বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুমন হাওলাদার বলেন, বাংলাদেশে ডিমের চাহিদা সাড়ে চার কোটি। আমাদের ডিম উৎপাদন হচ্ছে প্রায় পাঁচ কোটি। তারপরেও যারা ডিম সংকট বলছেন, এটা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ধান্দাবাজি। বাজারে চাহিদা কম থাকায় আমাদের দেশে খামারিরা ডিম ও মুরগি বিক্রি করতে পারছে না। তারপরেও যারা ডিম ও মুরগির সংকটের কথা বলছেন তারা দেশের প্রান্তিক খামারিদের ধ্বংস করে সিন্ডিকেট করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিতে চায়।

সুমন হাওলাদার বলেন, চুক্তিবদ্ধ নামে প্রান্তিক খামারিদের প্রলোভন দেখিয়ে তাদের কাছ থেকে স্ট্যাম্প ও চেক নিয়ে প্রতারণা করে গুটিকয়েক করপোরেট কোম্পানি বছরে এক হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট করে। চুক্তিবদ্ধ খামার করতে না চাইলে খামারি এবং ডিলারদের বিরুদ্ধে করপোরেট কোম্পানিগুলো চেক ডিজেনার মামলা করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এর মধ্যে প্রমাণিত- ৭১ফিড কোম্পানি, আলাল গ্রুপ, বিভিন্ন জেলা থেকে শত শত কোটি টাকা খামারিদের কাছ থেকে প্রতারণার মাধ্যমে নিয়েছেন। শুধু রংপুর জেলায় চুক্তিবদ্ধ পোল্ট্রি খামারিদের কাছ থেকে ১২০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন এবং সকল খামারি রাস্তায় রাস্তায় দেউলিয়া হয়ে ঘুরছেন। অনেক খামারি খামার বন্ধ করে দিয়েছেন।

পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি বলেন, দেশে বর্তমানে ডলার সংকটকালে কেন তারা বিদেশ থেকে ডিম আমদানি করতে চায় তা জানা জরুরি। তাদের ডিম আমদানি মূল বিষয় নয়, কালো টাকা সাদা করা এবং দেশ থেকে টাকা পাচারের চিন্তা করছেন বলে মনে করি। ফিড উৎপাদনে কোম্পানিগুলো বছরে সিন্ডিকেট করে বছরে তিন হাজার কোটি টাকা লোপাট করে। যেমন ভুট্টা, সয়াবিন বাজারে মূল্য থাকে ২৫ টাকা, কোম্পানিগুলো কিনে ২৬ টাকা। এভাবে তারা সব পণ্য গুদামজাত করে ফিড উৎপাদনকারী সব করপোরেট কোম্পানি ৩৮ থেকে ৪০ টাকায় বাজার উঠিয়ে দেয় শুধু তাদের উৎপাদিত ফিডের দাম বাড়ানোর জন্য। সিন্ডিকেট করে পাঁচ টাকা কেজি দরে যদি দেখানো হয় তাহলে বছরে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা। বছরে এক দিন বয়সের মুরগির বাচ্চায় সিন্ডিকেট করে বছরে ৮০০ কোটি টাকা লোপাট করে। চুক্তিবদ্ধ খামারিদের কাছ থেকে প্রতারণা করে হাতিয়ে নেয় প্রায় ১৩০০ কোটি টাকা।

সুমন বলেন, একদিকে খাদ্যের দাম প্রতি এক দুই মাস পরপরই বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ কারণে ক্ষুদ্র খামারিদের আর টিকে থাকা সম্ভব হচ্ছে না। এভাবে খামার মালিক লস করতে থাকলে এক সময় ৪০ থেকে ৫০ লাখ মানুষ কর্মসংস্থান হারাবে। ইতিমধ্যেই এক লাখ পোল্ট্রি খামার বন্ধ হয়ে গেছে। এখান থেকে উত্তরণের ব্যবস্থা করা না গেলে অল্প সময়ের মধ্যেই প্রান্তিক খামার বন্ধ হয়ে যাবে। তখন একদিকে যেমন লক্ষ লক্ষ মানুষ বেকার হবেন অন্যদিকে প্রোটিন সাপ্তাইয়ে সংকট দেখা দেবে। করপোরেট বা ইন্ডাস্ট্রি আকারে গড়ে ওঠা পোল্ট্রি শিল্পের মালিকদের নিয়ন্ত্রণে চলে যাবে, সে ক্ষেত্রে তারা চড়া মূল্যে ডিম ও মাংস বিক্রি করতে থাকবে ফলে সাধারণ মানুষের পক্ষে প্রোটিন খাওয়া সম্ভব হবে না। পুষ্টিহীনতায় পড়বে দরিদ্র জনগোষ্ঠী।

এসময় প্রান্তিক পোল্ট্রি খামার টিকিয়ে রাখতে সাত দফা দাবি তুলে ধরে সংগঠনটি। দাবিগুলো হলো-

(১) অসাধু সিন্ডিকেট থেকে পোল্ট্রি সেক্টরকে রক্ষা করতে হবে।

(২) ডিম আমদানির পাঁয়তারা যারা করবেন তাদের অনুমতি দেওয়া যাবে না।

(৩) খাদ্যের ওপর সরকারি ভর্তুকিসহ অন্যান্য ফেসিলিটি বাড়িয়ে মূল্য কমাতে হবে।

(৪) পোল্ট্রি নীতিমালা প্রণয়নসহ পোল্ট্রি বোর্ড গঠনের মাধ্যমে উৎপাদন খরচের সাথে সমন্বয় করে ন্যায্যমূল্য নির্ধারণ করতে হবে।

(৫) সকল খামারিকে নিবন্ধনের আওতায় আনা। এ ক্ষেত্রে নিবন্ধন ফি কমিয়ে আনতে হবে।

(৬) সহজ শর্তে ব্যাংক লোনের ব্যবস্থা করা।

(৭) ক্ষতিগ্রস্ত খামার মালিকদের প্রণোদনার ব্যবস্থা করা যাতে তারা ঘুরে দাঁড়াতে পারেন।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন, সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খন্দকার, সাংগঠনিক সম্পাদক বদরুল আলম মজুমদার, সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ মোহাম্মদ আলী, সহসাধারণ হানিফা শেখ প্রমুখ।