চট্টগ্রাম : চট্টগ্রাম পুলিশের তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী মো. নুরনবী ম্যাক্সন ভারতে মারা গেছেন বলে খবর পাওয়া গেছে।
আজ বুধবার ভোররাতে ম্যাক্সনের মৃত্যুর বিষয়টি জানতে পারে তার পরিবার।
এর আগে গত ৭ ফেব্রুয়ারি ভারতীয় গণমাধ্যমের খবরে জানা যায়, ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের উত্তর চব্বিশ পরগণার বারানগর থানার ডানলপ এলাকা থেকে দেশটির পুলিশ ম্যাক্সনকে গ্রেপ্তার করে। ম্যাক্সন ডানলপের নর্দার্ন পার্কে তমাল চৌধুরী নাম নিয়ে অর্পিতা পাল নামক এক নারীর সঙ্গে বসবাস করছিলেন। পরে তিনি জামিনে বেরিয়ে আসেন।
ম্যাক্সনের স্ত্রী ফারজানা আকতার একুশে পত্রিকাকে আলেন, ‘গতকাল মঙ্গলবার ম্যাক্সন আমাকে ফোন করে বলেন অর্পিতা টাকার জন্য ঝামেলা করছে। টাকার জন্য প্রেশার দিচ্ছে। অর্পিতাকে দেয়ার জন্য এর আগে অনেক টাকা আমরা পাঠিয়েছিলাম, জায়গা পর্যন্ত বিক্রি করেছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘ম্যাক্সনকে তখন বলেছি, অর্পিতার কাছ থেকে সরে গেলে তো হয়। তখন বলে, সরলে এখানে আমাকে আশ্রয় দেবে কে? এখানে সবাই আমার অচেনা। এরপর রাতে ফোন করে বলে তারা তো আমাকে মেরে ফেলবে মনে হয়। অর্পিতার সাথে ম্যাক্সনের ভাই কথা বলে গতকাল রাতে। তখন সে বলে টাকা পাঠাতে। কিছুক্ষণ পর অর্পিতা কল করে জানায় টাকা না থাকায় হতাশা থেকে ম্যাক্সন আত্মহত্যা করেছে। কিন্তু আমাদেরকে ছবি পাঠায় না। অন্যদিকে ম্যাক্সনের মোবাইলে বারবার ফোন করলেও রিসিভ হয় না।’
‘সর্বশেষ আজকে ভোররাত ৩টার দিকে ম্যাক্সনের মোবাইলে ফোন করলে হাসপাতালের একজন ডাক্তার ফোন রিসিভ করেন। তিনি জানান, অর্পিতা নামক একজন নারী ম্যাক্সনকে হাসপাতালে ফেলে পালিয়ে গেছে। ওই নারীর ঠিকানা ভুয়া। হাসপাতালটির অবস্থান ছাব্বিশ পরগণা এলাকায় বললেন। ওই ডাক্তারই আমাদের কাছে ম্যাক্সনের ছবি পাঠান এবং বলেন ম্যাক্সনকে খুন করা হয়েছে, এটি আত্মহত্যা নয়।’
টাকার জন্য ম্যাক্সনকে অর্পিতা ও তার সহযোগীরা খুন করেছে বলেও অভিযোগ করেন ফারজানা আকতার।
ম্যাক্সন চট্টগ্রাম নগরের বায়েজিদ বোস্তামি থানার জাহানপুর এলাকার আব্দুল লতিফের ছেলে।
২০১৭ সালের ৩১ আগস্ট জামিনে বের হয়ে কাতার চলে যান ম্যাক্সন। কাতারে বসে অনুসারীদের মাধ্যমে চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদাবাজি করতেন তিনি।
পুলিশ সূত্র জানায়, ২০১১ সালের ৬ জুলাই ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে নুরনবী ওরফে ম্যাক্সন ও চট্টগ্রামের বায়েজিদ এলাকা থেকে সারোয়ার ও গিট্টু মানিককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় একে-৪৭ রাইফেল ও গুলি। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত শিবির ‘ক্যাডার’ সাজ্জাদ হোসেন খানের ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে একসময় পরিচিত ছিলেন ম্যাক্সন। পরে তাদের সম্পর্কের অবনতি হলে কারাগারে থাকা শিবিরের আরেক সন্ত্রাসী নাছিরের অনুসারী হয়ে ওঠেন তারা।
২০১৩ সালে কারাগারে থাকা অবস্থায় সাজ্জাদের সঙ্গে ম্যাক্সনের দ্বন্দ্ব প্রকট হয়ে উঠলে নাছিরকে চট্টগ্রাম থেকে কাশিমপুর কারাগারে এবং ম্যাক্সনকে চট্টগ্রাম কারাগারের আলাদা ওয়ার্ডে রাখা হয়। প্রায় ছয় বছর কারাগারে থাকার সময়ও ম্যাক্সন তাদের অনুসারীদের দিয়ে বায়েজিদ এলাকায় চাঁদাবাজির নিয়ন্ত্রণ করতেন বলে অভিযোগ আছে।
২০১৭ সালে জামিনে কারাগার থেকে ছাড়া পেয়ে কাতারে চলে যান ম্যাক্সন। এরপর সেখান থেকে চলে যান ভারতের পশ্চিমবঙ্গে।