ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী : মুক্তির মহানায়ক স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য তনয়া মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনাকে হত্যার হুমকির ঘটনা দেশবাসীকে যারপরনাই উদ্বিগ্ন করেছে। আমাদের মতো সাধারণ জনগণকে বহুবার এরকম হত্যার হুমকি ও এ সম্পর্কিত বিভিন্ন থানায় জিডি রেকর্ড তেমন গুরুত্বপূর্ণ মনে হয় না। সমকালীন বাংলাদেশ ও সরকারকে ঘিরে নানামুখী চক্রান্ত-ষড়যন্ত্রের চলমান প্রক্রিয়ায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার হুমকি কোনোভাবেই খাটো করে দেখার বিষয় নয়। অদম্য অগ্রগতিতে যাঁর নেতৃত্বে বাংলাদেশ উন্নয়ন-অগ্রগতির রোল মডেল হিসেবে বিশ্ব সমাদৃত; অগ্রগণ্য, সফল ও সার্থক রাষ্ট্রনায়ক এ মহান নেতাকে হত্যার হুমকির পিছনে যেসব রহস্য কাজ করছে তার যথার্থ উন্মোচন অনিবার্য হয়ে পড়েছে।
প্রতিষ্ঠিত সত্য যে; সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ-দুর্বৃত্তায়ন ও দেশবিধ্বংসী কার্যক্রম থেকে দেশকে নিরাপদ এবং যথার্থ অর্থে সুযোগ্য নেতৃত্বে দেশকে এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে তাঁর কোনো বিকল্প নেই। বিভিন্ন সূত্রমতে, বিশিষ্ট ব্যক্তি-কূটনীতিক-রাজনীতিকসহ দেশি-বিদেশি নাগরিকের নূন্যতম কোনো নিরাপত্তাহীনতার সংকট না থাকা সত্ত্বেও অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টিতে সিদ্ধহস্ত অন্ধকারের পরাজিত শক্তির কূটকৌশল সর্বত্রই অনুভূত।
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কুচক্রী মহলের অপতৎপরতা শুধু দেশকে প্রাগ্রসর থেকে অনগ্রসরে রূপান্তর নয়; কথিত গণতান্ত্রিক-মানবাধিকার বিষয়ে অহেতুক দেশবাসীকে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টাও বটে। স্বার্থান্বেষী মহলের ভূ-রাজনীতির ভারসাম্যহীনতায় কোনঠাসা হওয়ার সম্ভাবনাকে পুঁজি করে বাংলাদেশকে অপদস্ত করার টার্গেটে পরিণত করেছে। রক্তক্ষয়ী মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়ও দেশের স্বাধীনতা অর্জনের বিরুদ্ধে এ ধরনের দেশি-বিদেশিদের পরাভূত করে ৩০ লক্ষ প্রাণ বিসর্জনের মাধ্যমে জাতির জনকের নেতৃত্বে বাঙালি তাদের লালসবুজ পতাকার মুক্ত মাতৃভূমি প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছে। মহান স্রষ্টার অপার কৃপায় সত্যের কাঠিন্যে বন্ধুপ্রতীম ভারত-সোভিয়েত ইউনিয়নের মতো দেশসমূহের সরকার-জনগণ ও বিশ্ব জনমতের অকুন্ঠ সমর্থন নিয়ে বাঙালি জয়ী হয়েছে।
সর্বক্ষেত্রে প্রায় ধ্বংসপ্রাপ্ত দেশ পুনর্গঠনের উদ্দেশ্যে পাকিস্তান কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পরমুহূর্ত থেকেই সর্বোচ্চ সততা-মেধা-প্রজ্ঞা-দেশপ্রেমে পরিপূর্ণ ঋদ্ধ বঙ্গবন্ধু সুদূরপ্রসারী মহাপরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নের বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। সকলের সাথে বন্ধুত্ব, কারো সাথে বৈরিতা নয় মনোভাবে বঙ্গবন্ধু অনবদ্য কূটনৈতিক সাফল্যে মাত্র ৯০ দিনের মাথায় বাংলাদেশ থেকে ভারতের সৈন্য প্রত্যাহারসহ ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে ১৯৭২ সালের ১৭ মার্চ ২৫ বছর মেয়াদী বন্ধুত্ব-শান্তি-সহযোগিতার চুক্তি, ১৯৭৪ সালে ছিটমহল ও সীমানা চুক্তি এবং ১৯৭৫ সালের এপ্রিল মাসে ফারক্কা বাঁধসংক্রান্ত অন্তর্বর্তীকালীন চুক্তি স্বাক্ষর ছিল বঙ্গবন্ধুর অসামান্য রাজনৈতিক দূরদর্শীতার পরিচায়ক।
যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশকে গড়ে তুলতে বঙ্গবন্ধু সোভিয়েত ইউনিয়ন, সুইডেন, জার্মানি, যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, পোল্যান্ড, যুক্তরাজ্য, কানাডা, ডেনমার্ক, অস্ট্রেলিয়া, ফ্রান্স, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার, বুলগেরিয়া, বেলজিয়াম, আলজেরিয়া, নেদারল্যান্ডসহ জাতিসংঘ, ইউনিসেফ, ডাব্লিউএফপি, আইডিএ, ইউএনএইচসিআর থেকে কোটি কোটি ডলারের বিভিন্ন ধরনের ঋণ-সাহায্য-অর্থনৈতিক সহযোগিতা আদায়ে সার্থক হয়েছিলেন। ১৯৭৩ সালের সেপ্টেম্বরে আলজিয়ার্সে জোটনিরপেক্ষ শীর্ষ সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু আরব বিশ্বের কাছে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি তুলে ধরার অসাধারণ কৌশল অবলম্বনের সুবাদে সৌদি বাদশা ফয়সাল, লিবিয়ার গাদ্দাফিসহ অনেক দেশের সরকার-রাষ্ট্রপ্রধান বাংলাদেশের প্রতি তাদের নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করে। আরব-ইসরায়েল যুদ্ধে আবরদের পক্ষ অবলম্বন এবং চিকিৎসক দল ও চা পাঠানোর ফলে মিসর বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধুতে পরিণত হয়। এছাড়াও বঙ্গবন্ধু কাতার, কুয়েত, সংযুক্ত আরব আমিরাত প্রভৃতি দেশ সফর করে অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমে ঐসব দেশে বাংলাদেশের শ্রম রফতানি শুরু হয়। কিন্তু দেশ যখন একটি উন্নয়নের অত্যুজ্জ্বল পর্যায়ে এসে পৌছেছে; দেশকে পিছিয়ে দেওয়ার গভীর ষড়যন্ত্রে ইতিহাসের সর্বনিকৃষ্ট বর্বর-নৃশংসতম হত্যাযজ্ঞে প্রায় সপরিবারে বঙ্গবন্ধু শাহাদাৎ বরণ করেন। তার পরবর্তী ইতিহাস আপামর জনগণের স্মৃতিতে এখনো ঘৃণ্য অধ্যায় হিসেবেই নির্মিত।
উম্মাদ-অসভ্য সেনা-স্বৈরশাসনের যাঁতাকলে নিষ্পেষিত দেশকে মুক্ত করার মহান ব্রত নিয়ে ৬ বছরের নির্বাসন থেকে ১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে ফেরে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা রাজনীতিকে শুধু কলুষমুক্ত নয়; আর্থ-সামাজিক উন্নয়নকে প্রাধান্য দিয়ে সুশৃঙ্খল পন্থায় বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা বিনির্মাণে নিজেকে নিবেদন করেন। বাংলার মানুষের হারিয়ে যাওয়া অধিকার আদায়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বহুবার সামরিক-স্বৈরশাসকদের রোষানলে পড়েছেন। ১৯৮৩ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি দলীয় ৩১ নেতা-কর্মীসহ গ্রেফতার হন। ১৯৮৮ সালের ২৪ জানুয়ারি চট্টগ্রামে তাঁর নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত মিছিলে তাঁকে হত্যার উদ্দেশ্যে পুলিশ ও বিডিআর নির্বিচারে গুলি চালায়। নেতাকর্মীদের মানবঢাল তৈরিতে তিনি জীবন রক্ষা করতে সক্ষম হলেও নিহত হয় ১১ জন সাধারণ নেতা-কর্মী-সমর্থক। ১৯৯০ সালের ঐতিহাসিক গণআন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়ে স্বৈরচারী সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করেছিলেন। দেশের প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামে তিনি একেবারে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তাঁর সুদক্ষ নেতৃত্বে দীর্ঘ ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে জাতীয় নির্বাচনে জয়ী হয়ে আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়।
নির্লোভ-নির্মোহ ও সততার জন্য বিশ্বখ্যাত রাষ্ট্রনায়ক রূপে নিজেকে শুধু বিশ্ব ইতিহাসে অনুপম অধ্যায়ে অধিষ্ঠিত করেননি; বিশ্বপরিমণ্ডলে দেশ ও জাতিকে করেছেন সুমহান মর্যাদায় সমাসীন। বাংলাদেশ রাষ্ট্রের ৫০ বৎসরের অগ্রযাত্রায় বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত কর্মযজ্ঞকে যথাযথ গুরুত্ব দিয়ে প্রায় সকল ক্ষেত্রে উন্নয়ন পরিক্রমা তথা আশু-স্বল্প-দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে সহস্রাব্দ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন, ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষমাত্রা কার্যকরণ রোড়ম্যাপে অগ্রসরমান শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, লিঙ্গ সমতা, দরিদ্রতার হার হ্রাস, গড় আয়ু বৃদ্ধি, শ্রমঘন রপ্তানিমুখী শিল্পায়ন, বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা, কর্মসংস্থান ও রাজস্ব উন্নয়ন, পোশাক ও ঔষধ শিল্পকে রপ্তানিমুখীকরণ ইত্যাদি আজ দেশের আকাশচুম্বী সমৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে যুগান্তকারী অভিধায় সমুজ্জ্বল। অন্যদিকে ভৌত অবকাঠামো, যাতায়াত ব্যবস্থা ইত্যাদিকে অধিকতর গুরুত্ব দিয়ে বিদ্যুৎ, গ্যাস, জ্বালানী ইত্যাদির সরবরাহ নিশ্চিতকরণ, নিজস্ব অর্থায়ানে স্বপ্নের পদ্মাসেতু, পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, গভীরসমুদ্র বন্দর, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেল নির্মাণ, সারাদেশের একযোগে ১০০টি সেতুর উদ্বোধন, পরিকল্পিত নগরায়ন ও জলাবদ্ধতা নিরসন, সুপেয়-ব্যবহারযোগ্য পানি ও সুয়ারেজ প্রকল্পের মত বিভিন্ন মেঘা প্রকল্পের অব্যাহত বাস্তবায়নসহ বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণের সফলতা-সক্ষমতা অর্জনে বাংলাদেশ আজ বিশ্ব পরিমন্ডলে আধুনিক-গতিশীল অর্থনীতির অনুপম পথিকৃৎ।
গণমানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিতকল্পে দেশজুড়ে ১৮ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে সরকার ফ্রি-চিকিৎসাসেবা এবং ওষধ সরবরাহসহ শিশু ও মায়েদের জন্য বিশেষ সেবা প্রদান প্রতিষ্ঠা করেছে। অতিসম্প্রতি জাতিসংঘ ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ হিসেবে কমিউনিটি ক্লিনিককে বিশ্ব স্বাস্থ্য সেবার মডেল রূপে স্বীকৃতি দিয়েছে। দেশের প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় একটি করে হাসপাতাল এবং এসব হাসপাতালের বেড সংখ্যা বৃদ্ধি, হাসপাতালগুলোর আধুনিক সরঞ্জামাদির সরবরাহ এবং এগুলো ব্যবহারে দক্ষ টেকনিশিয়ান নিয়োগ দেওয়ার পাশাপাশি দেশ-বিদেশের চিকিৎসকদের কাছ থেকে চিকিৎসা-পরামর্শ নেওয়ার সুবিধার্থে প্রতিটি উপজেলা হাসপাতালে ওয়েব-ক্যামেরা সংযোজিত হয়েছে। বৃহৎ উন্নয়ন কর্মসূচির সাথে পাল্লাদিয়ে পরিচালিত হচ্ছে সমাজে পিছিয়ে পড়া দুস্থ-অসহায়-ছিন্নমূল মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণে নানামুখী কর্মযজ্ঞ। ২০২০ সালে বঙ্গবন্ধুর শততম জন্মবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে সরকার গৃহহীনদের ঘর করে দেওয়ার প্রেক্ষিতে আশ্রয়ণ-১ প্রকল্প গ্রহণ করে। পরবর্তীতে সরকারের আরো অধিকতর সুন্দর ডিজাইনের মাধ্যমে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্প বাস্তবায়ন চলমান রয়েছে। এছাড়াও যে কোনো পোশাক শিল্পের নারী শ্রমিকদের জন্য তৈরি করা হয়েছে আলাদা হোস্টেল। বৃদ্ধ-বিধবা-প্রতিবন্ধী-অতিদরিদ্র-অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের সামাজিক সুরক্ষা বলয়ের আওতায় অর্থ সহযোগিতা দিচ্ছে সরকার। তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ, বেদে, ভাসমান মানুষসহ সুবিধাবঞ্চিত গোষ্ঠীর কমপক্ষে সাড়ে ৪ কোটি মানুষকে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে এই সামাজিক নিরপত্তা সেবার আওতায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
এতসব অভূতপূর্ব অর্জনে প্রতিহিংসাপরায়ন অপশক্তির গাত্রদাহ ও অজানা রহস্যাবৃত নানামুখী রোষানলে জননেত্রী আজ মৃত্যুর হুমকির সম্মুখীন। কোন কোন দেশ-সরকার প্রধান-অপ্রকৃতস্থ বিকৃতপ্রায় মনস্তাত্ত্বিক ঘৃণ্য অভিপ্রায়ে দেশরত্ন শেখ হাসিনাকে বহুবার হত্যার কদর্য উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভেনিউতে দলীয় সমাবেশে জননেত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে একের পর এক গ্রেনেড হামলা চালানোও ছিল নীলনকশা বাস্তবায়নের প্রতিফলন। বিভিন্ন পরিসংখ্যান মতে, আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মোট ১৯ বার হত্যার অপচেষ্টা করা হয়েছিল। তাঁকে হত্যা চেষ্টার ঘটনাগুলোর মধ্যে- নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন হুজি-বি কর্তৃক ২০০০ সালের ২০ জুলাই কোটালীপাড়ায় সমাবেশস্থল ও হেলিপ্যাড়ের নিকটে দুটি শক্তিশালী বোমা এবং ২০০১ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর সিলেটে নির্বাচনী জনসভায় বোমা পুঁতে রাখা, ২০০১ সালের ৩০ মে খুলনায় রূপসা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে হত্যার পরিকল্পনা, ১৯৮৯ সালের ১১ আগস্ট ফ্রিডম পার্টির সশস্ত্র সন্ত্রাসী কর্তৃক ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাসভবনে গুলিবর্ষণ-গ্রেনেড হামলা, ১৯৯১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর চতুর্থ জাতীয় সংসদের উপনির্বাচনের সময় ধানমন্ডির গ্রীন রোডে ভোট কেন্দ্র পরিদর্শনের সময় গুলি ছোড়া, ১৯৯৪ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর ট্রেনমার্চ করার সময় পাবনার ঈশ্বরদী রেলস্টেশনে ট্রেনের বগি লক্ষ্য করে গুলি বর্ষণ, ১৯৯৫ সালের ৭ মার্চ শেখ রাসেল স্কয়ারে সমাবেশে চালানো সশস্ত্র হামলা ও ১৯৯৬ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু এভেনিউতে আওয়ামী লীগের সমাবেশে শেখ হাসিনাকে লক্ষ্য করে গুলি ও বোমা ছোড়া ইত্যাদি উল্লেখ্যযোগ্য।
ধারাবাহিকতায় জননেত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার অপচেষ্টা এখনো পরিলক্ষিত। বোকার স্বর্গে বসবাসকারী এসব হিংস্র পশুদের বোধদয়ে এটুকু জাগ্রত হচ্ছে না যে; ১৯৭৫ সাল এবং ২০২৩ সাল এক নয়। দেশের মানুষ জ্ঞান-বিজ্ঞান-প্রযুক্তি-চিন্তা-চেতনায় অনেক বেশি সমৃদ্ধ এবং প্রায় বিষয়ে তাদের মূল্যায়ন অত্যন্ত ইতিবাচক। দেশবিরোধী রাষ্ট্রদ্রোহী ব্যক্তি-দল-গোষ্ঠীর সকল কুকীর্তি দেশবাসীর গোচরীভূত এবং মিথ্যাচার-কদাচার-প্রতারণা দিয়ে তাদের আদর্শিক বিচ্যুতি কোনভাবেই সম্ভব নয়। মহান মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শিক চেতনা জনগণের অন্তরে এতবেশি গভীরে প্রোথিত; তা ভূলুন্ঠিত করার সকল অসৎ উদ্দেশ্য অবশ্যই বুমেরাং হয়ে অপকর্মে লিপ্তদের অন্ধকারের গহ্বরে নিক্ষিপ্ত করবেই। মহান নেতা বঙ্গবন্ধু কন্যা শুধু বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী নয়; পৃথিবী নামক এই গ্রহের প্রতিটি দেশ-অঞ্চলে ধর্ম-বর্ণ-দল-মত নির্বিশেষে বিশ্ববাসীর অন্তরে শান্তি-সাম্য-গণতন্ত্র-মানবাধিকার-অসাম্প্রদায়িকতা-গণমানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার অগ্রদূত হিসেবে ইতিমধ্যেই বিশেষ অবস্থান তৈরি করেছেন। নিছক হত্যার হুমকি কোনোভাবে তাঁকে টলানো বা ভীতসন্ত্রস্ত করবে; পৃথিবীর প্রত্যন্ত অঞ্চলে একেবারেই কম সচেতন কোনো ব্যক্তিকে এই ব্যাপারে বিশ্বাস-বিভ্রান্ত করা পর্বতসম কঠিন থেকে কঠিনতর হবে – নিঃসন্দেহে এটুকু দাবি করা মোটেও অমূলক নয়।
লেখক: শিক্ষাবিদ, সাবেক উপাচার্য চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।