শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৫, ৫ বৈশাখ ১৪৩২

বিভীষণদের অপতৎপরতা গোচরীভূত নয় কি?

| প্রকাশিতঃ ২৫ জুন ২০২৩ | ১০:৩০ অপরাহ্ন


ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী : সাম্প্রতিককালে দেশে নানা দল-মতের ছদ্মাবরণে ব্যক্তিস্বার্থ সিদ্ধিতে ব্যতিব্যস্ত কিছু সুশীল সমাজ-পেশাজীবী-বুদ্ধিজীবী নামধারীর অশুভ অপতৎপরতা সকলের দৃষ্টিগোচরে এসেছে। অনেক সময় রাষ্ট্রযন্ত্রকে প্রভাবিত করার ক্ষেত্রে কোন কোন ব্যক্তি দল ও সংগঠনের পক্ষ অবলম্বনে অযাচিত আলোচনা-সমালোচনা-সংবাদ সম্মেলন করতেও কুন্ঠাবোধ করছেন না। গুটিকয়েক সন্ত্রাসী-জঙ্গী-অন্ধকারের পরাজিত শক্তির দোসরদের দেশবিধ্বংসী অপকৌশল ইতিমধ্যেই দেশ এবং দেশের বাইরে দৃশ্যমান।

জনশ্রুতিমতে, কুৎসিত বুদ্ধিমত্তার অর্বাচীন-অপাংক্তেয় অপপ্রয়োগে প্রতারণা-জালিয়াতি-শঠতায় পারঙ্গম দুশ্চরিত্রের কতিপয় কথিত-কদর্য বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব দেশবাসীকে নানাভাবে বিভ্রান্ত করে চলছে। এছাড়াও মহান মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শিক চেতনাকে ভূলুন্ঠিত করে দল ও সরকারে ঘাপটি মেরে অবস্থান নেওয়া ব্যক্তিদের বেপরোয়া পদচারণা অতিশয় অসহনীয় পর্যায়ে পৌছেছে। চলমান সময়ের প্রেক্ষাপটে এদের অনেকেরই চরিত্র-খোলস পাল্টানোর অপকৌশল অবলম্বন অধিকতর অনুভূত।

এটি অনস্বীকার্য যে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও নতুন করে করোনা অতিমারির প্রভাব নানামুখী বিশ্ব ব্যবস্থাকে পর্যুদস্ত করে চলছে। প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। ধারাবাহিকতায় দেশেও পণ্যমূল্যের অস্বাভাবিক উর্ধ্বগতি ও ডলার-জ্বালানি সংকটের সাথে যুক্ত হয়েছে দাবদাহ-লোডশেডিং-পানি সরবরাহের মতো সীমাহীন জনদুর্ভোগ। চিহ্নিত মুনাফাখোর কারবারীদের সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণে পর্যাপ্ত পদক্ষেপ গ্রহণে ব্যর্থতা উল্লেখ্য সমস্যাগুলো জনগণের যারপরনাই আর্তনাদের কারণ হয়েছে। অধিকন্তু আসন্ন ধর্মীয় কুরবানি উৎসবকে কেন্দ্র করে প্রয়োজনীয় পণ্যবাজারে চরম কারসাজি তৈরি হয়েছে।

কতিপয় অসাধু রাজনীতিক-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংস্থা-প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের যোগসাজশে সংকট অধিকতর ঘনীভূত হচ্ছে বলে প্রবল গুঞ্জন রয়েছে। এছাড়াও বিষয়সমূহের বস্তু-সত্যনিষ্ঠ যাচাই বাছাই ব্যতিরেকে অপসাংবাদিকতায় বিশ্বাসী কিছু চিহ্নিত সাংবাদিক-কথিত বিশিষ্ট ব্যক্তিদের আনাগোনা-ঘনঘন বিদেশী দূতাবাসের সাথে যোগাযোগ-সহযোগী রাষ্ট্র ও দাতা সংস্থাসমূহকে পত্র প্রদানের মাধ্যমে দেশবিরোধী জঘন্য অপপ্রচার দেশবাসীর হৃদয়ে সন্দেহ-সংশয় তৈরির অপচেষ্টা চলমান রয়েছে। সুশাসন-মানবাধিকার-নির্বাচন-গণমাধ্যমের স্বাধীনতা-ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ নানা ইস্যু নিয়ে সুশীলদের অবাঞ্ছিত-অযাচিত আলোচনা-সমালোচনা সম্পর্কে দেশবাসী সম্পূর্ণ সচেতন। যেকোন সাম্প্রদায়িক-অগণতান্ত্রিক অপকর্ম রুখে দিতে দেশপ্রেমিক প্রতিরক্ষা-আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও দেশের অপামর জনগণ দৃঢ়চিত্তে কঠিন ঐক্যবদ্ধতায় আবদ্ধ।

দুর্ভাগ্যজনকভাবে জনগণ বিস্ময়ের সাথে লক্ষ্য করছে বিগত কয়েক মাসব্যাপী তথাকথিত আন্দোলন সংগ্রামের নামে অযৌক্তিক অরাজকতা সৃষ্টির লক্ষ্যে শুধুমাত্র বিরোধীতার মোড়কে বিরোধীতা করার জন্য নানা ধরনের অনভিপ্রেত বক্তব্য-কর্মকান্ড দেশবাসিকে সহ্য করতে হচ্ছে। এসব প্রতিরোধের ঘোষণায় নানা পদক্ষেপ গ্রহণও জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। সকলেরই জানা বিশ্বপরিমন্ডলে দেশ অদম্য অগ্রগতিতে এগিয়ে উন্নয়ন পদযাত্রায় সর্বত্রই সমাদৃত। উন্নয়নশীল বিশ্বের উন্নয়ন পরিক্রমায় ইতিবাচক কর্মযজ্ঞকে রুদ্ধ করার চক্রান্ত-ষড়যন্ত্রের কূটকৌশলে দল-মত-নির্বিশেষে বিভীষণদের ভূমিকারও নিবিড় পর্যবেক্ষণ-বিশ্লেষণ জরুরি।

অধিকাংশ ক্ষেত্রে অযৌক্তিক-কাল্পনিক-বাস্তববিবর্জিত অপরাজনীতির দূরভিসন্ধিমূলক কার্যকলাপ অবশ্যই সরকারের বিরুদ্ধে নয়; বৃহত্তর জনগণের বিরুদ্ধেই যুদ্ধ ঘোষণার শামিল। প্রতিষ্ঠিত ধারণা; জনজীবনকে বিপর্যস্ত করে জীবন-জীবিকার সাবলীল প্রবাহে অতিরঞ্জিত মিথাচারের দুর্বল প্রাচীর নির্মাণ অচিরেই বিধ্বস্ত হতে বাধ্য। আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠার বিপরীতে অপরাজনীতির ঘৃণ্য অভিপ্রায় জনগণকে শুধু কৌতুহলী নয় শঙ্কিতও করছে বটে।

স্বাধীন নির্বাচন কমিশনের অধীনে যথাসময়ে পবিত্র সংবিধান সম্মত বিধান অনুসারে অবাধ-সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ নির্বাচনে ইতিবাচক প্রতিযোগিতা-দলীয় প্রার্থীদের জয়যুক্ত করে সরকার গঠনের প্রচেষ্টাই কাঙ্খিত পরিক্রমা। প্রায় দেড়বছর আগে থেকেই কর্মসূচি-পাল্টাকর্মসূচির মোড়কে রাজনীতির পরিবেশকে অশান্ত করে অরাজক পরিবেশ জনদুর্ভোগকেই দৃশ্যমান করছে। জনশ্রুতিমতে, ঘরের শত্রু বিভীষণ-শস্যের মধ্যে ভূত বা নানা হীন প্রক্রিয়ায় পাকিস্তানি হায়েনা-সেনা-স্বৈরশাসকদের দোসররা বিভিন্ন দলে ও বিভিন্ন সময়ে সরকারে অনুপ্রবেশ করে সুযোগের সদ্ব্যবহারে পারঙ্গম ব্যক্তিরা এখনও একই কায়দা অনুসরণ করছে। অত্যন্ত সুকৌশলে এসব সুচতুর ব্যক্তিদের অর্থ-ক্ষমতা লিপ্সুতার অপরিমেয় লোভ কিছুতেই ভরপুর হওয়ার নয়। উচ্চশিক্ষা থেকে শুরু করে প্রায় সকল প্রতিষ্ঠানে স্বল্প সংখ্যক এসব চরিত্রহীন বিশ্বাসঘাতকদের পদ-পদায়ন-পদক দখলে বেপরোয়া মনোভাব প্রদর্শনে ক্ষমতাধর অমুক-তমুক তাদের খুঁটির জোর বলে প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে।

ফলশ্রুতিতে ক্ষোভ-যন্ত্রণা-অভিমানে জর্জরিত হৃদয়ে নানা অজুহাতে ফাঁসিয়ে দেওয়ার অনাকাঙ্খিত অদৃশ্য ভয়ে দুঃসময়ের পরীক্ষিত সৎ-যোগ্য-দক্ষ ও আদর্শিক চেতনা সমৃদ্ধ ব্যক্তিদের হতবাক হওয়া ছাড়া অন্য কোনো বিকল্প পথ উন্মুক্ত নেই। বড় অসহায়ের সাথে তাদের কাতরতা শুধু দীর্ঘায়িত হচ্ছে না; দেশ বিধ্বংসকারীদের বিরুদ্ধেও তাদের কন্ঠ ক্ষীণ হয়ে আসছে। আত্মীয়-স্বজন-বন্ধু-অর্থপ্রীতির অনৈতিক বন্ধন বংশপরম্পরায় অর্থপাচার-ঋণখেলাপ-ভূমিদস্যুতা-মাদক ও মদ ব্যবসা-পরাজীবী বুদ্ধিজীবী পরিচয়ে সকল সময়ে সকল সরকারের সুবিধাভোগী গোষ্ঠীদের বেপরোয়া কর্মযজ্ঞ কিছুতে থামছে না। পুরো পরিবার পরিজনসহ আকন্ঠ দুর্নীতিতে নিমজ্জিত কথিত গুটিকয়েক রাজনীতিক অসাম্প্রদায়িকতার অচ্ছাদনে অন্তরে নিকৃষ্ট সাম্প্রদায়িকতা লালনকারী-প্রচণ্ড মানবতাবিরোধীদের মানবতাবাদী লেবাসে ঘৃণ্যতম কার্যকলাপ প্রায়শঃ অদমনীয়। দ্রুততম সময়ের মধ্যে চিহ্নিত এসব দুঃচরিত্র-দুর্বৃত্তদের পদচ্যুতি-বিতাড়ন কার্যকর করার ব্যর্থতায় দেশকে কঠিন মূল্য দিতে হতে পারে বলে সুধীজনের বদ্ধমূল ধারণা। বিচার বিভাগীয় চৌকস তদন্তের মাধ্যমে সামষ্টিক চরিত্র-শক্তির উৎস উন্মোচন করে এদের বিষদাঁত ভেঙ্গে দেওয়া না হলে, সরকারের বিরুদ্ধে চক্রান্তের বেড়াজাল অধিকতর বিস্তারিত হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে।

ইতিহাস পর্যালোচনায় দেখা যায়, ১৭৫৭ সালে পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার পলাশীর আম্রকাননে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ও নবাব সিরাজউদৌলার মধ্যে সংঘটিত ঐতিহাসিক পলাশীর যুদ্ধে প্রধান সেনাপতি মীর জাফরের বিশ্বাসঘাতকতায় বিশাল সেনাবহর নিয়েও নবার সিরাজউদৌলা পরাজয় বরণ করেন। মীর জাফরের অধীনের সৈন্যবাহিনী যুদ্ধে অংশগ্রহণ না করা ও তার বাংলা-বিরোধী পদক্ষেপের ফলে বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজউদৌলা সিংহাসনচ্যুত ও নিহত হয়েছিলেন। ইংরেজদের সাথে মীর জাফরের এই মর্মে চুক্তি ছিল যে, যুদ্ধে ইংরেজরা জয়ী হলে মীর জাফর হবে বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার নবাব। বিনিময়ে মীর জাফর ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে পাঁচ লক্ষ পাউন্ড ও কলকতায় বসবাসকারী ইউরোপীয়দের আড়াই লক্ষ পাউন্ড প্রদান করবে। বর্তমানে ভারতীয় উপমহাদেশে মীর জাফর নামটি বিশ্বাসঘাতকতার প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। মুর্শিদাবাদের তার বাড়িটি ‘নিমক হারাম দেউরি’ (বিশ্বাসঘাতকের ঘর) নামে পরিচিত। মীর জাফর এতটাই বিশ্বাসঘাতক ছিল যে এখনও কেউ অবিশ্বাসী হলে তাকে মীর জাফরের সাথে তুলনা করা হয়।

নবাব সিরাজউদৌলার বিরুদ্ধে অন্যান্য ষড়যন্ত্রকারীদের মধ্যে অন্যতম ছিল নবাব আলীবর্দী খানের বড় মেয়ে নবাবজাদী মেহের উন নিসা ওরফে ঘসেটি বেগম। নবাব আলীবর্দী খানের মৃত্যুর পর তার চেষ্টা ছিল দ্বিতীয় বোন শাহ বেগমের পুত্র শওকত জঙ্গকে সিংহাসনে বসানোর। কিন্তু সিরাজউদৌলা বাংলার ক্ষমতার মসনদে বসলে ঘসেটি বেগম সেনাপতি মীর জাফর, ব্যবসায়ী জগৎ শেঠ ও উমিচাঁদের সঙ্গে গোপন আঁতাতে পলাশীর যুদ্ধে সিরাজউদৌলাকে পরাজিত করে। নবাব সিরাজউদৌলার অন্য দুই সেনাপতি ইয়ার লতিফ ও রায় দুর্লভও মীর জাফরের সাথে সক্রিয়ভাবে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত এবং তাদের বাহিনী মীর জাফরের বাহিনীর ন্যায় পুত্তলির মতো দাঁড়িয়ে ছিল।

প্রাসঙ্গিকতায় বলা যায়, স্বাধীনতার অব্যবহিত পর জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর আকাশচুম্বী সাফল্যগাঁথায় অপ্রতিরোধ্য অগ্রগতিতে বাংলাদেশ যখন নতুন অভিযাত্রায় পদার্পণ করেছিল; প্রতিহিংসা ও প্রতিশোধপরায়ণতার হিংস্র কৌশলে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রে সংঘটিত সভ্যসমাজের ইতিহাসে সর্বনিকৃষ্ট, নৃশংস ও বর্বরতম হত্যাযজ্ঞে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গমাতা, শিশু শেখ রাসেলসহ প্রায় সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়। ঐদিনই বঙ্গবন্ধুর রক্তের দাগ না শুকানোর আগেই বাংলাদেশের মানুষের কাছে বিশ্বাসঘাতক হিসেবে পরিচিত খন্দকার মোশতাক আহমেদ নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করে।

খন্দকার মোশতাক বঙ্গবন্ধু হত্যাকারীদের জাতির সূর্যসন্তান বলে আখ্যা দেয়। বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের দেড় মাস অতিক্রমকালে খন্দকার মোশতাক ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব এমএইচ রহমান স্বাক্ষরিত ‘দি বাংলাদেশ গেজেট, পাবলিশড বাই অথরিটি’ শিরোনামে ১৯৭৫ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর ‘দায়মুক্তি (ইনডেমনিটি) অধ্যাদেশ’ জারি করা হয়। অধ্যাদেশটির প্রথম খন্ডে উল্লেখ করা হয়, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ভোরে বলবৎ আইনের পরিপন্থী যাই কিছু ঘটুক না কেন, এ ব্যাপারে সুপ্রিম কোর্টসহ কোন আদালতে মামলা, অভিযোগ দায়ের বা কোন আইনী প্রক্রিয়ায় যাওয়া যাবে না। আর দ্বিতীয় খন্ডে বলা হয়, রাষ্ট্রপতি উল্লেখিত ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত বলে যাদের প্রত্যয়ন করবেন তাদের দায়মুক্তি দেয়া হলো। খন্দকার মোশতাক ‘জয় বাংলা’ স্লোগান পরিবর্তন করে এর স্থলে ‘বাংলাদেশ জিন্দাবাদ’ স্লোগান চালু করে। ‘বাংলাদেশ বেতার’ এর নাম পরিবর্তন করে রেডিও পাকিস্তানের আদলে ‘রেডিও বাংলাদেশ’ নাম দেয়। তার শাসনামলেই (৩ নভেম্বর) জাতীয় চার নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমেদ, ক্যাপ্টেন মনসুর আলী ও এ.এইচ.এম কামরুজ্জামানকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে হত্যা করা হয়।

মীর জাফর, ঘসেটি বেগম ও খন্দকার মোশতাক গংদের বশংবদরা এখনো কোন না কোনভাবে বিভিন্ন দলে অত্যন্ত সক্রিয় রয়েছে বলে প্রবল জনশ্রুতি রয়েছে। রাষ্ট্র পরিচালনায় শতভাগ দক্ষ-যোগ্য-মেধাবী দেশপ্রেমিক বিশ্বস্ত সহযোগীদের সাথে বঙ্গবন্ধুর দুরত্ব সৃষ্টিতে ঘৃণ্য মোশতাকের মতোই ব্যক্তিদের সুক্ষè ছলচাতুরী-অভিনয়শৈলী এখনও কার্যকর বলে আপামর জনগণের দৃঢ় বিশ্বাস।

জনশ্রুতি মতে, অনতিবিলম্বে মুখোশধারী এদের অপসারণ-ক্ষমতাচ্যুতি বাস্তবায়নে সময়ক্ষেপণ সামগ্রিক রাজনৈতিক সংস্কৃতিকে পরিশুদ্ধ না করে ধ্বংসের তলানীতে পৌঁছে দেবে। অতি সঙ্গোপনে এদের প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ সমর্থন-সহযোগিতার নিকৃষ্ট অপতৎপরতা অপার সম্ভবনার অবারিত উন্নয়ন প্রবাহে কঠিন অন্তরায় ও প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি নিদারুণ বিস্তৃত এবং তা পর্যায়ক্রমে কঠিনতর রূপ পরিগ্রহ করতে যাচ্ছে। এটি প্রতিষ্ঠিত সত্য মহান মুক্তিযুদ্ধে হাতেগোনা রাজাকার-আলবদর-আলশামস নামধারী পাকিস্তানি হায়েনাদের সহযোগী ব্যতিত সমগ্র বাঙালি জাতিই দেশের অভ্যন্তরে-বাইরে নানাভাবে মহান মুক্তিযুদ্ধের পবিত্র কর্মযজ্ঞে লিপ্ত ছিল।

এটিও প্রচলিত ধারণা যে, যারা ভারতে আশ্রয় গ্রহণ করেছিল অনেকেই মহান মুক্তিযুদ্ধে সুযোগ থাকা সত্ত্বেও অংশগ্রহণ না করে আত্মীয়-পরিজনের সাথে বিলাসি জীবনযাপন করেছে। এদের অনেকেই বিভিন্ন প্রকাশনী সংস্থা-পত্রপত্রিকা-বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত ছিল এবং নানাভাবে মুক্তিযোদ্ধার সনদ প্রাপ্তিতেও কারসাজি করেছে বলে প্রবল গুঞ্জন রয়েছে। বর্তমান সরকার প্রদত্ত নানা সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করেও সরকারের বিরুদ্ধে কূট প্রচারণা-চক্রান্তে এদের অনুপ্রেরণা-ভূমিকাও প্রবল এবং কিছুতেই এরা পিছপা হচ্ছে না বলেই প্রতিভাত। এদের জনস্বার্থ-দেশবিরোধী অপকর্ম সংহার করা না হলে দেশধ্বংসের অপপ্রয়াস উপর্যুপরি সচলতা পাবে যা কোনোভাবেই প্রত্যাশিত নয়।

লেখক: শিক্ষাবিদ, সাবেক উপাচার্য, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।