প্রেমিককে কাছে পেতে পথে পথে শরীর বেঁচার শ্বাসরুদ্ধকর জবানবন্দি (ভিডিওসহ)

চট্টগ্রাম : বিস্ময়কর অদ্ভুত এক প্রেম-উপাখ্যান। প্রেমিককে কাছে পেতে পথে পথে শরীর বিকিয়েছে এক নারী। শরীর বিকিয়ে গত আট বছরে প্রেমিক জাহেদের হাতে তুলে দিয়েছে লাখ লাখ টাকা।

এর মধ্যে জাহেদের বেশকিছু দেনা শোধ করেছে, ইয়াবা নিয়ে গ্রেফতার হওয়া জাহেদকে জেল থেকে মুক্ত করেছে। কিন্তু বরাবরই অধরা থেকে যায় জাহেদ। প্রেমের অভিনয় করলেও ওই নারীকে বিয়ে করে না সে। বিয়ের কথা উঠলে নানা ছুঁতোনাতায় সময়ক্ষেপন করে।

কোনো এক সময় জাহেদ রাজি হবে, তাকে বিয়ে করবে- সেই আশায় বছরের পর বছর শরীর বিকিয়ে এখন রীতিমতো অসুস্থ মেয়েটি। শরীরের স্পর্শকাতর জায়গায় তৈরি হয়েছে বড় এক ক্ষত। গাইনি চিকিৎসক বলেছেন, অন্তত তিনমাস যৌন সংশ্রব রাখা যাবে না।

এই অবস্থায় প্রেমিক জাহেদ মেয়েটির পাশে দাঁড়ানোর পরিবর্তে তাকে অস্বীকারই শুধু করছে না, মারধর করে তাড়িয়ে দিয়েছে। বেশি বাড়াবাড়ি করলে অন্য পুরুষের সঙ্গে যৌন মিলনের ভিডিও বাজারে ছেড়ে দেওয়ারও হুমকি দিচ্ছে সে।

একদিকে জাহেদের অস্বীকৃতি, অন্যদিকে জীবিকা নির্বাহের একমাত্র অবলম্বন ‘শরীর’ ভেঙে পড়ায় মেয়েটি এখন চরম বেকায়দায়। অনাহারে, অর্ধাহারে থাকা মেয়েটির সামনে যেন পৃথিবীর সমস্ত অন্ধকার। সতীর্থদের পরামর্শে জাহেদকে বিয়ে করার আবেদন নিয়ে আদালতে হাজির হওয়ারও প্রস্তুতি নিচ্ছে মেয়েটি।

দাউদকান্দির গৌরীপুরে বাড়ি হলেও ১৫ বছর বয়সে কর্মের খোঁজে চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ এলাকায় চলে আসে মেয়েটি। কিছুদিন একটা গার্মেন্টসে চাকরি করার পর পরিচয় হয় ডবলমুরিং এলাকার বেকার যুবক জাহেদের সাথে।

পরিচয় থেকে শুরু হয় প্রেম। প্রেমের অভিনয় করে মেয়েটিকে একপর্যায়ে পাগল করে তুলে জাহেদ। জাহেদের প্রতিও প্রচণ্ড দুর্বল হয়ে পড়ে সে।

জাহেদই যেন শেষ কথা। জাহেদের জন্য জীবনটাও দিয়ে দেবে এমন অবস্থা। এ অবস্থায় একদিন আগ্রাবাদ এলাকায় মেয়েটিকে এক ব্যাচেলর বন্ধুর বাসায় নিয়ে যায় জাহেদ। জাহেদ নিজে মেয়েটির সাথে শারীরিক সম্পর্কে জড়ানোর পর সেই রাতে বন্ধুর সাথেও শারীরিক সম্পর্কে জড়াতে বাধ্য করে।

মেয়েটি রাজি না হলে জাহেদ অনুনয় বিনয় করে বলে- ‘এ কেমন ভালোবাসা তোমার। তুমি নাকি আমার জন্য জীবনও দিয়ে দিতে পার! আর সামান্য এ অনুরোধটুকু রাখতে পারছো না। সে আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধু। তার সাথে থাকলে আমি খুশি হবো। আমার কথাটা রাখ, যাও।’

প্রেমিকের অনুরোধে ওই বন্ধুর সাথে দুইবার শারীরিক সম্পর্কে জড়ানোর পর সেই রাতে আবারও জাহেদের সাথে থাকতে হয়। সকালে একশ’ টাকা হাতে গুঁজে দিয়ে মেয়েটিকে বাসায় পাঠিয়ে দেয় জাহেদ।

এরপর তাকে বিয়ের প্রলোভনে সুকৌশলে ধীরে ধীরে দেহব্যবসায় ধাবিত করে জাহেদ। প্রথমে জাহেদ নিজেই খদ্দের ঠিক করতো। আর শরীর বিকিয়ে পাওয়া সমুদয় অর্থ জাহেদের হাতে তুলে দিতো মেয়েটি।

একুশে পত্রিকাকে মেয়েটি জানায়, জাহেদের অনুরোধে দিনে কখনো ১০/১২ জন পুরুষের সঙ্গেও মিলিত হয়েছে সে। ব্যথা হয়ে যেতো গোপন স্থান, সারা শরীর। রাতে ব্যথার ওষুধ খাইয়ে পরের দিনের জন্য আমাকে তৈরি করে ফেলতো জাহেদ। এভাবে চলতে চলতে এটাই আমার মূল পেশা হয়ে দাঁড়ায়। প্রথমে জাহেদ পার্টি জোগাড় করে আনলেও পরে আমি নিজেই ফোন করে, শহরের আগ্রাবাদ, জিইসি মোড়, বহদ্দারহাট এলাকায় রাস্তায় হেঁটে হেঁটে, গায়ে পড়ে পুরুষের সঙ্গে কথা বলে পার্টি জোগাড় করতাম। জাহেদের মাধ্যমে পরিচয় হয় মুক্তা, নাছিমাসহ এই জগতের অনেক মেয়ের সঙ্গে। সারাদিনের উপার্জনের টাকা রাতে এসে জাহেদের হাতে তুলে দিতাম। বিয়ে না হলেও আমি আর জাহেদ একঘরেই থাকতাম স্বামী-স্ত্রীর মতো। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত নিজের চেষ্টায় আয় করে ঘরে ফিরতাম। আমার আত্মীয়স্বজন, প্রতিবেশিরা জানে আমি গার্মেন্টসে চাকরি করি।’

একদিন বিষয়টা জানাজানি হয়ে গেলে প্রতিবেশিরা সেই বাসা থেকে আমাদের তাড়িয়ে দেয়। গত ছয়বছর আগে জাহেদের পরামর্শে কুমিল্লা, লাকসাম, নোয়াখালী গিয়ে কাজ শুরু করি। একদিন জাহেদ আমার হাতে ছোট্ট একটি মোবাইল ক্যামেরা তুলে দেয়। বলে কীভাবে কাজ কর তা ওরা বুঝতে না পারে মতো ভিডিও করে আমার জন্য নিয়ে আসবে। বলতো নিচের অংশ বিক্রি করবা, বুকের অংশ কখনো বিক্রি করবা না। এটা করলে আমার খারাপ লাগে, আমি কষ্ট পাই। কারণ আমি তোমাকে ভালোবাসি। তার কথা রাখতে আমি অনেক চেষ্টা করতাম। কিন্তু সবসময় সম্ভব হতো না। বুকের উপর চষে বেড়াত ওরা। ওরা বলে, টাকা দিয়ে করতে এসেছি বুক ঢেকে রাখার জন্য নয়।’- যোগ করে মেয়েটি।

মেয়েটি জানায়, ‘৮-১০ দিন কাজ করে জাহেদের কাছে ফিরে আসতাম। আবার কখনো এক সপ্তাহের জন্য বাপের বাড়ি গিয়ে বিশ্রাম করতাম। জাহেদের কাছে আসার সময় ইনকামের সমস্ত টাকা ও শারীরিক মেলামেশার দৃশ্য ভিডিও করে নিয়ে আসতাম। মেমোরি কার্ড খুলে নিয়ে নতুন কার্ড ভরে দিতো জাহেদ। কোনো কারণে ভিডিও রেকর্ড না হলে আমাকে মারধর করতো জাহেদ। বলতো লাশ হলেও ভিডিও করে আনতে হবে, কোনোভাবেই ক্যামেরা হাতছাড়া করা যাবে না। টাকা কম হলেও মারধর করতো। কখন, কোথায়, কতবার মিলিত হচ্ছি ফোনে সব খবর নিতো জাহেদ। আসার পর কড়ায়গণ্ডায় হিসাব নিতো। মাথাপিচু এক হাজার টাকা করে হিসাব করতো সে। হিসাবে গড়মিল হলে নির্যাতন করতো। একহাজার টাকায় দর করে কেউ ৫শ’ টাকাও দিয়ে যায়, আবার কেউ ৫শ’ টাকায় দরদাম করে ২শ’ টাকা হাতে ধরিয়ে দেয়। আমার কিছ্ইু করার থাকতো না। কিন্তু জাহেদ এসব বিশ্বাস করতে চাইত না। বলতো আমি টাকা সরিয়ে ফেলেছি।’

এ মেয়ের ভাষ্যমতে, ‘একবার কুমিল্লায় ছাত্রলীগের এক নেতার সঙ্গে গোপন কাজের ভিডিও করার সময় তার কাছে ধরা খেয়ে যাই। তারপর লোকটি আমাকে অনেক মেরেছে। কেড়ে নেয় গোপন ক্যামেরা। আমি তার পায়ে পড়ি, বলি আমাকে মারুন, প্রয়োজনে টাকা না দিন, তবুও আমার জিনিসটা দিয়ে দিন। কিন্তু লোকটি কোনোভাবেই দেয় না। বরং আমাকে পুলিশে দেয়ার হুমকি দেয়। রুমের একপাশে গিয়ে বিষয়টি জাহেদকে জানালে সে আমাকে উল্টো ধমক দেয়। বলে- আমি কিছু বুঝি না, প্রয়োজনে জীবন দিবি, তবুও ক্যামেরা হারাবি না। এরপর কী করবো বুঝে উঠতে পারি না। ভোররাতে লোকটি যখন গভীর ঘুমে, তখন রাতভর কাজের টাকা বাদ দিয়ে আস্তে করে মোবাইল ভিডিওটা নিয়ে পালিয়ে যাই।’

‘খারাপ কাজ করার সময় বিভিন্ন জায়গায় মারধরের শিকার হই। কখনো পুলিশ ধরে নিয়ে যায়। এসময় জাহেদকে ফোন দিলে সে উল্টো ঝাড়ি দিত। বলত কিছুই করার নেই, যেভাবে পার মুক্ত হয়ে আস। এরপর টাকা দিয়ে আমার লাইনের মেয়েদের সহযোগিতায় ছাড়া পেতাম।’ যুক্ত করে মেয়েটি।

৬ বছরের এক ছেলে সন্তান আছে মেয়েটির। কিন্তু এই ছেলেকে মানতে চায় না জাহেদ। জাহেদ বলে এটা তার সন্তান নয়। অবশ্য মেয়েটিও জানে না কোন পুরুষের মেলামেশায় এই সন্তান এসেছে। যার সন্তান হবে হোক, এটা তার পেট থেকেই এসেছে। কেবল এটুকুই বোঝে সে। ছেলেটি বর্তমানে ঢাকায় মেয়েটির বড়বোনের বাসায় থাকে। মাঝে মাঝে মাতৃত্বের টানে ঢাকায় ছুটে যায় মেয়েটি।

মেয়েটি আরও জানায়, ‘কয়েকবছর আগে আমার পরিচিত এক যুবককে মোবাইল ফোনে আমার অসুস্থতার কথা বলে চট্টগ্রাম নিয়ে আসে জাহেদ। তার সাথে আমার বিয়ে পরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। আগে থেকে বিয়ের কাগজপত্র প্রস্তুত রাখে। সেই কাগজে জোর করে আমার কাছ থেকে স্বাক্ষর আদায় করে। পরে আমি সেখান থেকে পালিয়ে বাঁচি। মূলত আমার সাথে অন্য ছেলের বিয়ের অজুহাত দেখিয়ে বাঁচার জন্য সে এ কাজ করেছে। এ নিয়ে জাহেদের সঙ্গে আমার অনেক ঝগড়া হয়। আমাকে প্রচণ্ড মারে সে। নির্যাতন সইতে না পেরে আমি তাকে বটি দিয়ে কোপাতে যাই। কিন্তু আমি পারিনি। তার জন্য অনেক মায়া হয়। তাকে চিমটি কেটে আমি নিজেই কষ্ট পাই। সে আমাকে এত নির্যাতন করেছে, দেহব্যবসায় নামিয়েছে, আমার সমস্ত টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। তবুও কিছু বলতে পারি না। অনেক ভালোবাসি তাকে। এই ভালোবাসার জন্য যেখানে যেতে হয় যাবো। তবুও তাকে পেতে চাই।’

জাহেদের কাছ থেকে স্ত্রীর মর্যাদা পাবে, অন্ধকার জগত থেকে ফিরে এসে অন্য নারীর মতো স্বাভাবিক জীবনযাপন করবে এটাই এখন মেয়েটির একমাত্র চাওয়া। আর এজন্য আদালতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মেয়েটি। যদি তা না হয় আজীবনের জন্য জাহেদকে জেলে পুড়বে মেয়েটি। তবুও জাহেদকে আর কারো হতে দেবে না সে।

এ নিয়ে জাহেদের মোবাইল ফোনে একাধিকবার চেষ্টা করেও তার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।