- অধ্যাপক ড. সৈয়দ আব্দুল হামিদ
শরীফুল রুকন : শুধু একটি কাজ— সব ধরনের ওষুধের দাম সরকার নির্ধারণ করে দিলেই কোম্পানির পক্ষ থেকে ডাক্তারদের ‘উপহার’ দেওয়া বন্ধ হয়ে যাবে। এমন জোরালো মন্তব্য করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. সৈয়দ আব্দুল হামিদ।
সরকার ১১৭টি অত্যাবশ্যকীয় ওষুধের দাম নিয়ন্ত্রণ করে থাকে জানিয়ে এই শিক্ষক বলেন, ‘এই ১১৭টি ওষুধের দাম নির্ধারণ করার জন্য সরকারের নির্দিষ্ট ফর্মুলা আছে। আমাদের পরামর্শ হলো, বাজারে যত ওষুধ আছে, সবগুলোর দাম সরকার নির্ধারণ করে দিক। সেক্ষেত্রে প্রয়োজনে ফর্মুলাটা সংশোধন করা হোক। আমরা ওষুধ কোম্পানির ক্ষতি করতে চাই না। কারণ ওষুধ কোম্পানি আমাদের একটা শক্তির জায়গা। তাদের কারণে আমাদেরকে ওষুধ তেমন আমদানি করতে হয় না। কিন্তু ওষুধ কোম্পানিগুলো এখন নিজেরা ইচ্ছেমতো মূল্য নির্ধারণ করার সুযোগ পাচ্ছে। তাই বেশি পরিমাণে ওষুধ বিক্রি করার জন্য তারা ঘুষ দিচ্ছে। সরকার দাম নির্ধারণ করে দিলে সেখান থেকে ঘুষ দেওয়ার সুযোগ কমে যাবে। কারণ সেখান থেকে ঘুষ দিতে গেলে, তাদের লাভের অংশ কমে যাবে।’
তিনি বলেন, ‘কোনো কোম্পানি ডাক্তারকে যদি প্রস্তাব করে যে, মাসে পাঁচ লাখ টাকা দেব, বছরে এত লাখ টাকা দেব, শুধু এই ওষুধটা লিখবেন। তিনি তো স্বাভাবিকভাবেই রাজি হয়ে যাবেন। প্রস্তাবটা যেন না আসতে পারে, সেই উৎসমূলটা বন্ধ করে দিতে হবে।’
‘এখানে ওষুধ প্রস্তুতকারকদের মার্কআপ যদি আরও বাড়িয়ে দেওয়া লাগে, তাহলে সেটা যৌক্তিক করা যেতে পারে, যেন ওষুধ কোম্পানিগুলো ক্ষতির শিকার না হয়। তাহলে ওষুধের দাম রাতারাতি বাড়তে পারবে না। বাড়লে সেটা যৌক্তিকভাবে বাড়বে। সরকার যৌক্তিকভাবে বাড়াবে। সরকার তখন দেখবে, কাঁচামালের দাম বেড়ে গেছে কি না, বাড়লে কতটুকু’— বলেন এই শিক্ষক।
ড. সৈয়দ আব্দুল হামিদ আরও বলেন, ‘ওষুধ কোম্পানিগুলো নানা ফাঁকফোকরের সুযোগ নিয়ে থাকে। সরকারি ফর্মুলা ব্যবহার করে দাম নির্ধারণ করার ক্ষেত্রেও তারা এটা করে। সেটা হলো আমদানির অনুমতি নেওয়ার সময় কাঁচামালের দাম বেশি দেখায় তারা, কিন্তু নিয়ে আসে কম দামেরটা। এ কারণে ঔষধ প্রশাসনকে শক্তিশালী করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘ঔষধ প্রশাসন এখন যে ফর্মে আছে, সেই ফর্মে চলা উচিত না। ঔষধ প্রশাসনের মহাপরিচালক পদে প্রেষণে নিয়োগ দেওয়া হয়। ঔষধ প্রশাসনকে একটা শক্তিশালী কমিশনে পরিণত করা দরকার, যেখানে নিজস্ব প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত জনবলের ভিত্তিতে এটা পরিচালিত হবে। কেউ ডেপুটেশনে আসলেন, দুই বছর, এক বছর থাকলেন— এভাবে ঔষধ প্রশাসনের মতো প্রতিষ্ঠান চলবে না। দীর্ঘদিন ধরে একটা বিষয় নিয়ে কাজ করলে দক্ষতা গড়ে ওঠে। ঔষধ প্রশাসন বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান। এটাকে নিজস্ব লোকবল দিয়ে পরিচালনা করতে হবে।’
মূল প্রতিবেদন : উপহারের টাকা উসুল রোগীর ‘গলা কেটে’

