ঢাকা : সরকারের নেয়া পদক্ষেপের ফলে শিগগিরই মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আসবে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। জাতীয় সংসদ অধিবেশনে প্রশ্নোত্তর পর্বে তিনি আরো জানান, লেনদেনের ভারসাম্য পরিস্থিতির উন্নয়ন ও বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার স্থিতিশীল হবে।
সোমবার সরকার দলীয় সংসদ সদস্য মমতাজ বেগমের প্রশ্নের লিখিত জবাবে অর্থমন্ত্রী আরো জানান, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, লেনদেন ভারসাম্য পরিস্থিতির উন্নয়ন ও বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার স্থিতিশীল রাখতে সরকার বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে এবং তা বাস্তবায়ন করছে।
এ সময় মন্ত্রী সরকারের বেশকিছু পদক্ষেপের কথা সংসদে তুলে ধরেন। এর মধ্যে মার্কিন ডলারসহ অন্যান্য বৈদেশিক মুদ্রার সঙ্গে টাকার বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করা, রিজার্ভ পুনর্গঠনের জন্য সঠিক মূল্যে পণ্য আমদানি নিশ্চিত করা, বাণিজ্যিক ব্যাংকে বৈদেশিক মুদ্রা ধারণের সীমা হ্রাস করা হচ্ছে।
মন্ত্রী জানান, এ ছাড়া ৫ হাজারের ডলারের বেশি প্রবাস আয়ের উৎস প্রদর্শনের বাধ্যবাধকতা বাতিল করা হয়েছে। পাইপ লাইনে থাকা বৈদেশিক অর্থায়ন ছাড়করণ ত্বরান্বিত করা হচ্ছে।
সরকার দলীয় সংসদ সদস্য মোজাফফর হোসেনের প্রশ্নের জবাবে মুস্তফা কামাল জানান, রুগ্ন শিল্পের সমস্যা সমাধানের জন্য ২০০৯ সালে একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন টাস্কফোর্স গঠিত হয়। তাদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ২০১০ ও ২০১২ সালে ২৭৯টি রুগ্ন গার্মেন্টস এবং ২০১১ ও ২০১৫ সালে ১০০টি রুগ্ন টেক্সটাইল শিল্পের ঋণ বিলুপ্তের সার্কুলার জারি করা হয়েছে।
একই দলের সংসদ সদস্য কাজিম উদ্দিন আহম্মেদের প্রশ্নের অর্থমন্ত্রী জানান, চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে কৃষি ও পল্লী ঋণ নীতিমালা ও কর্মসূচিতে কৃষি ও পল্লী ঋণ খাতে ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ঋণ আকারে বিতরণের জন্য ৩৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ নির্ধারণ করা হয়েছে।
আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমানের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী জানান, বর্তমানে আমদানি শুল্কের প্রায় ৭৬০ কোটি ৩০ লাখ টাকা বকেয়া রয়েছে। বিভিন্ন ধরণের আইনি জটিলতার কারণে ক্ষেত্রে বিশেষে আমদানি শুল্ক অনাদায়ী হয়ে থাকে। পণ্য চালান খালাসের পরে নিয়মিত নিবারণী তৎপরতার অংশ হিসেবে খালাসোত্তর নিরীক্ষা (পোস্ট ক্লিয়ারেন্স অডিট) কার্যক্রম সম্পাদন করা হয়। এর মাধ্যমে অনেক ক্ষেত্রে অনাদায়ী বকেয়ার উদ্ভব হয়। শুল্কায়ন সম্পন্ন হলেও সাময়িক অর্থ সংকটের কারণে অনেক সময় পণ্য চালান খালাস না নেয়ায় আমদানি শুল্ক অনাদায়ী থেকে যায়। এ ছাড়া সরকারী প্রতিষ্ঠান কর্তৃক আমদানির ক্ষেত্রে অধিকাংশ সময়ে বিলম্বে পরিশোধের ভিত্তিতে পণ্য চালান খালাস নেয়া হয়ে থাকে। পরবর্তীতে পণ্যচালান সংশ্লিষ্ট শুল্ক করাদি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পরিশোধ না করলে সেক্ষেত্রে উক্ত চালানের আমদানি শুল্ক অনাদায়ী থেকে যায়।
বিরোধী দলীয় সংসদ সদস্য মো. মসিউর রহমান রাঙ্গাঁর প্রশ্নের জবাবে মুস্তফা কামাল জানান, সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার কমানোর ফলে ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগের মুনাফার হার অধিক সংরক্ষণ করায় ক্ষুৃদ্র বিনিয়োগকারীদের সংখ্যা হ্রাস পায়নি। বর্তমানে বাজারে প্রচলিত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের স্থায়ী আমানতের ঘোষিত মুনাফার চেয়ে জাতীয় সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার আকর্ষণীয় রয়েছে। তাই সঞ্চয়পত্রের বিনিয়োগকারীদের সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর কোন পরিকল্পনা আপাতত নেই।
সরকারি দলের সদস্য সৈয়দা রুবিনা আক্তারের প্রশ্নের উত্তরে অর্থমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকারের তৃতীয় মেয়াদের এই পর্যন্ত কৃষকের কোনো কৃষি ঋণ মওকুফ করা হয়নি। ব্যাংক আমানকারীদের থেকে সংগৃহিত অর্থ কৃষকদের মাঝে কৃষি ঋণ হিসেবে বিতরণ করে থাকে। সংগৃহিত অর্থ আমানতকারীদের সুদসহ ফেরত দিতে হয়। ফলে ব্যাংকের পক্ষে কৃষি ঋণ মওকুফ করা সম্ভব হয় না। তবে ভবিষ্যতে রাষ্ট্র মালিকানাধীন বাণিজ্যিক বা বিশেষায়িত ব্যাংকের মাধ্যমে বিতরণকৃত কৃষি ঋণ মওকুফের ক্ষেত্রে বিশেষ কোনো নির্দেশনাপ্রাপ্ত হলে তা বাস্তবায়ন করা হবে।