ঢাকা: আগামীকাল ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক’ ধ্বনিতে আকাশ বাতাস মুখরিত করে মিনা যাত্রার মধ্য দিয়ে ৫ দিনব্যাপী হজের আনুষ্ঠানিকতা শুরু করবেন বিশ্বের ১৫০টিরও বেশি দেশ থেকে আসা হজপালনকারীরা।
আগামী ৯ জিলহজ বৃহস্পতিবার (৩১ আগস্ট) পবিত্র হজ (আরাফার ময়দানে অবস্থান) অনুষ্ঠিত হবে। এ হিসেবে আগামীকাল (৮ জিলহজ) বুধবার থেকে শুরু হচ্ছে হজের মূল আনুষ্ঠানিকতা। ঐদিন (৮ যিলহজ) সূর্যোদয়ের পর মক্কা থেকে প্রায় ৯ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত মিনার উদ্দেশ্যে যাত্রা করা সুন্নাত হলেও যানজট এড়াতে বিপুল সংখ্যক হজযাত্রীকে মুয়াল্লেমরা সউদী সরকারের অনুমোদনক্রমে আগের রাত থেকেই মিনায় স্থানান্তর শুরু করেন। অনেকে অবশ্য মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)’র সুন্নাত পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে পালনের জন্য আগের রাতে না গিয়ে ৮ জিলহজ সূর্যোদয়ের পর পায়ে হেঁটে মিনায় রওয়ানা করবেন। যারা আগের রাতেই মিনায় পৌঁছে যান তারা ৮ জিলহজ ফজরসহ সেখানে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করবেন।
সুন্নাত তরিকায় ৯ যিলহজ সূর্যোদয়ের পর আরাফাতের উদ্দেশ্যে রওয়ানা করার কথা থাকলেও যানজটের বিড়ম্বনা এড়াতে আগেরদিন (৮ জিলহজ) সন্ধ্যার পর থেকেই হজযাত্রীদের ১৪ কিলোমিটার দূরবর্তী (মিনা থেকে) আরাফাতের ময়দানে স্থানান্তর করেন মুয়াল্লেমগণ। এরপর ৯ জিলহজ (বৃহস্পতিবার) তাকবিরে তাশরিক পড়তে পড়তে হাজীরা আরাফার ময়দানে গিয়ে পৌঁছবেন। আরাফাতে অবস্থানই হজের অন্যতম ফরজ আমল।
সেখানে সূর্যাস্ত পর্যন্ত অবস্থান করতে হয়। আরাফাত ময়দানে অবস্থিত মসজিদে নামেরা থেকে দুপুরে হজের খুৎবা দেয়া হবে। এখানে খুৎবার পর এক আযানে দুই ইকামাতে যোহর ও আসর কসর (দুই রাকআত করে) আদায় করবেন হাজীরা। মুসলিম জাতির আদি পিতা আদম আলাইহিস সালাম ও মা হাওয়া আলাইহাস সালামের মহামিলনের স্মৃতি বিজড়িত আরাফাতের ময়দানে সূর্যাস্ত পর্যন্ত অবস্থান করে হাজীরা আল্লাহর যিকির ও তসবীহ তাহলিল আর দুই হাত তুলে মহান আল্লাহর কাছে জীবনের সব গুনাহর জন্য ক্ষমা চাইবেন। এছাড়াও দেশ, জাতি ও মুসলিম জাহানের শান্তি ও অগ্রগতির জন্য আল্লাহর দরবারে দোয়া করবেন।
এরপর সূর্যাস্ত হলে হাজীরা ৮ কিলোমিটার দূরের মুজদালিফার উদ্দেশ্যে আরাফাতের ময়দান ত্যাগ করবেন। মুজদালিফায় এসে একই আযানে মাগরিব এবং ইশা এক সাথে আদায় করে খোলা আকাশের নিচে অবস্থান করবেন এবং মুজাদালিফা থেকে জামারায় নিক্ষেপের জন্য পাথর সংগ্রহ করবেন। পরদিন বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতা পূরণের লক্ষ্যে শক্তি সঞ্চয়ের জন্য খোলা আকাশের নিচে ঘুমিয়ে রাত যাপন করবেন।
মুজদালিফায় রাত্রি যাপনের পর ১০ জিলহজ সকালে সূর্যোদয়ের পর জামারায় পাথর নিক্ষেপের জন্য রওয়ানা হবেন হাজীরা। সূর্য পশ্চিম দিকে হেলে যাবার পূর্বে জামারাতুল আকাবায় (বড় জামরায়) ৭টি পাথর নিক্ষেপ করবেন। জামরাতুল আকাবায় পাথর নিক্ষেপের পর হাজীরা পশু কুরবানি করবেন। তবে সউদি হজ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা মোতাবেক আযাহি সংস্থার মাধ্যমে কুরবানি করতে হয়। এ সংস্থা দীর্ঘদিন থেকে হাজীদের কুরবানির ব্যবস্থা করে আসছে। হাজীরা নির্ধারিত বুথে কুরবানির টাকা জমা দিয়ে টিকেট সংগ্রহের মাধ্যমে এই কুরবানি করেন। বুথ থেকে টিকেট সংগ্রহের সময় দেয়া কুরবানির সময় পার হবার পর হাজীগণ মাথা মুণ্ডন করে ইহরাম খুলে স্বাভাবিক কাপড় পরিধান করবেন। একে তাহাল্লুলে আসগর বলা হয়। তাহাল্লুলে আসগরের সময় স্ত্রীসঙ্গ ব্যতীত সবকিছু হালাল হয় আর তাহাল্লুলে আকবরের পর সবকিছু হালাল হয়।
তাহাল্লুলে আসগরের পর হাজীগণ পবিত্র কাবা শরীফে গিয়ে তাওয়াফে ইফাযা (ফরয তাওয়াফ) সম্পন্ন করবেন এবং সায়ী করবেন। এর মাধ্যমে তাহাল্লুলে আকবর হয়ে যাবেন। এরপর মিনায় ফিরে এসে ১১ ও ১২ জিলহজ সেখানে অবস্থান করে ছোট, মধ্যম ও বড় জামরায় পাথর নিক্ষেপ করে ১২ তারিখ সূর্যাস্তের পূর্বে মিনা ত্যাগ করে মক্কার বাসস্থানে ফিরে আসবেন। এরপর দেশে ফিরে আসার পূর্বক্ষণে কাবা শরীফে গিয়ে বিদায়ী তাওয়াফ করবেন।
আল্লাহ তা‘আলার সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ রাসূল মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ১৪শ’ বছরেরও আগে যেভাবে হজ পালন করেছেন ঠিক সেভাবেই প্রতি বছর পালন করে চলেছেন বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে আসা নানা ভাষাভাষি মুসলিমগণ। ধর্ম মন্ত্রণালয়ের হিসাব মতে বাংলাদেশ থেকে সর্বমোট ভিসা ইস্যু করা হয়েছে (ব্যবস্থাপনা ভিসাসহ) ১ লাখ ২৭ হাজার ৫৯৬ জনের।
