একুশে প্রতিবেদক : একুশে পত্রিকার সাংবাদিকদের কাজের মাধ্যমেই সংবাদমাধ্যমটির প্রতিষ্ঠাতা আজাদ তালুকদার বেঁচে থাকবেন বলে মন্তব্য করেছেন চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সাবেক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন।
রবিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বিকেলে একুশে পত্রিকার সদ্য প্রয়াত সম্পাদক আজাদ তালুকদারের আত্মার মাগফিরাত কামনায় কোরআন খতম, দোয়া ও মিলাদ মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। নগরীর জামালখানের সানমার স্প্রিং গার্ডেনস্থ একুশে পত্রিকা কার্যালয়ে একুশে পত্রিকার সাংবাদিক আবছার রাফির সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত উক্ত আয়োজনে সভাপতিত্ব করেন একুশে পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক নজরুল কবির দীপু।
আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, ‘আজাদ তালুকদারের সাথে আমার স্বার্থ সংশ্লিষ্ট সম্পর্ক ছিল না। আজাদ তালুকদার যখন ছাত্র ছিলেন, তখন থেকেই তার সাথে আমার ঘনিষ্ঠতা। মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত আমাদের মধ্যে সুসস্পর্ক ছিল। আমরা যে যেখানে যে অবস্থানে থাকি না কেন, সেই সম্পর্কটা অটুট ছিল। আমি যতদিন পর্যন্ত বেঁচে থাকবো, একুশে পত্রিকা পরিবারের সাথে আমার সম্পর্ক বজায় থাকবে।’
পৃথিবীর কোনো মানুষই সকল মানুষের মাঝে গ্রহণযোগ্যতা পায় না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এই কথা শুনতে খারাপ লাগতে পারে, বেমানান মনে হতে পারে, কিন্তু এটা নিষ্ঠুর বাস্তবতা। কারণ একজন মানুষের পক্ষে সবাইকে সন্তুষ্ট করা সম্ভব না। একজন মানুষের কাজের কারণে কোনো না কোনো মানুষের ক্ষতি হয়। এই অংশটুকু বাদ দিয়ে আজাদ তালুকদার একজন ভালো, ভদ্র, নিরহংকারী মানুষ ছিলেন। দেশপ্রেমিক একজন মানুষ ছিলেন। সৎ মানুষ ছিলেন আমার দৃষ্টিতে।’
প্রয়াত আজাদ তালুকদারকে সাহসী সাংবাদিক উল্লেখ করে আ জ ম নাছির বলেন, ‘আজাদ তালুকদার পেশাগতভাবে একজন সৎ, সাহসী সাংবাদিক ছিলেন। তার দৃষ্টিতে যা কিছু অসৎ, সেগুলো তুলে ধরার ক্ষেত্রে তিনি কোনো ধরনের কার্পণ্য, কুণ্ঠাবোধ করেননি। সাহসিকতার সাথে তিনি সাংবাদিকতা করে গেছেন। ঘনিষ্ঠদের বিপক্ষে লিখতেও পিছপা হননি। সংবাদ প্রকাশ করার কারণে তার উপর অনেক চাপ তৈরি করা হয়েছিল। তারপরও তিনি তার সত্য প্রকাশ থেকে তিল পরিমাণ সরে যাননি। তিনি একজন বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিক ছিলেন।’
‘আমি একুশে পত্রিকার উত্তরোত্তর সফলতা কামনা করি। আজাদ তালুকদারের আত্মার মাগফিরাত কামনা করি। পরিবারের সদস্যদের আল্লাহ ভালো রাখুক, এই দোয়া করি।’
স্মৃতিচারণ করে আ জ ম নাছির বলেন, ‘ক্যান্সারে আক্রান্ত হলেও মৃত্যুভয়ে তিনি বিচলিত হননি। আমাকে তিনি বলেছেন, আমি যদি আরও কিছুদিন বেঁচে থাকি, দেশের কল্যাণে আমি আরও বেশি কিছু দায়িত্ব পালন করতে পারবো।’
একুশে পত্রিকার সাংবাদিকদের উদ্দেশে আ জ ম নাছির বলেন, ‘আপনাদের কাজের মাধ্যমে আজাদ তালুকদার বেঁচে থাকবে। যে সাহসিকতার সাথে আজাদ তালুকদার একুশে পত্রিকা পরিচালনা করেছিলেন, আমি আশা করবো, আপনারাও একই দৃঢ় মানসিকতার পরিচয় দিয়ে একইভাবে একই লক্ষ্য, প্রত্যাশা নিয়ে একুশে পত্রিকাকে পরিচালনা করবেন। এটাই আমার প্রত্যাশা।’
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের (সিইউজে) সভাপতি তপন চক্রবর্তী বলেন, ‘আজাদ তালুকদার ভাই সাহসী সাংবাদিক ছিলেন। আজাদ ভাইয়ের অনুসন্ধিৎসু চোখ, নজর ছিল। সেই নজর থেকে অনেক খারাপ মানুষ রেহাই পায়নি। সততা, নিষ্ঠার সাথে তিনি সাংবাদিকতা করেছেন। আমরা তার আত্মার শান্তি কামনা করছি।’
চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের উদ্যোগে আগামী ১০ দিনের মধ্যে আজাদ তালুকদারের স্মরণে একটা শোকসভা করার ঘোষণা দেন তিনি।
সভাপতির বক্তব্যে একুশে পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক নজরুল কবির দীপু বলেন, ‘আমার বন্ধু আজাদ তালুকদার অন্যায় দেখলে ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিদেরও ছাড় দেয়নি। এ ধরনের সাংবাদিক খুব কমই আছে। আজাদ তালুকদারের মতো সাংবাদিক আমরা আর পাবো কিনা জানি না। আজাদের দেখানো পথ অনুসরণ করে আমরা বলিষ্ঠ সাংবাদিকতা করার চেষ্টা করবো।’
এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ম. শামসুল ইসলাম, বিএফইউজে-চট্টগ্রাম বিভাগের যুগ্ম মহাসচিব মহসীন কাজী, চট্টগ্রাম প্রতিদিনের সম্পাদক হোসাইন তৌফিক ইফতিখার, জুনিয়র চেম্বার ইন্টারন্যাশনালের (জেসিআই) সাবেক সভাপতি টিপু সুলতান সিকদার, চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার আবু মোহাম্মদ মহিউদ্দিন, নিফকো ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরসের স্বত্বাধিকারী এইচ এম জামাল উদ্দিন, আইটি ফেয়ারের কর্ণধার জাহাঙ্গীর আলম, রাঙ্গুনিয়ার পদুয়া ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি তারেক সোহেল, স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা দিদারুল ইসলাম পাইলট ও প্রয়াত আজাদ তালুকদারের একমাত্র সন্তান ইসফার আজাদ অর্ঘ্য।
একুশে পত্রিকার সাংবাদিক ও কর্মীদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন শরীফুল রুকন, আবদুল আলী, এম কে মনির, জিন্নাত আয়ুব, বেলাল উদ্দিন, মোয়াজ্জেম হোসেন কায়ছার, সেকান্দর আলম বাবর, মো. আলাউদ্দীন, মোহাম্মদ আলাউদ্দিন, দেবযানী দাশ ও খুকি নাথ। একুশে পত্রিকার সাবেক কর্মী সুমন চৌধুরী ও আকমাল হোসেন, যমুনা টিভির সাংবাদিক আল আমিন সিকদার এবং সুপ্রভাতের সাংবাদিক মোহাম্মদ নাজিম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
দোয়া মাহফিল শেষে কদম মোবারক মুসলিম এতিমখানার ১০০ ছাত্রের মাঝে রাতের খাবার বিতরণ করা হয়।