শনিবার, ৮ নভেম্বর ২০২৫, ২৪ কার্তিক ১৪৩২

জঙ্গি দমনে দেশবাসীর সহযোগিতা চান আইজিপি

| প্রকাশিতঃ ১২ জুন ২০১৬ | ৪:৫৫ অপরাহ্ন

চট্টগ্রাম: জঙ্গি দমনে দেশবাসীর সহযোগিতা চেয়েছেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) একেএম শহীদুল হক। রোববার দুপুরে চট্টগ্রাম নগরীর দামপাড়া পুলিশ লাইন শুটিং ক্লাব মিলনায়তনে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়কালে তিনি এ কথা জানান।

আইজিপি বলেন, দেশে নিষিদ্ধ ঘোষিত ৬টি জঙ্গি সংগঠন আছে। এরমধ্যে জেএমবি ও আনসার আল ইসলাম নামে দুটি জঙ্গি সংগঠনের অপতৎপরতা বেশী দেখা যাচ্ছে। জঙ্গিবাদ মাথাচড়া দিলে মানুষ দেশে বসবাস করতে পারবে না। জঙ্গিবাদের উথান ঠেকাতে হবে। জঙ্গিবাদ নির্মুল করতে হবে। নয়তো দেশে মানুষ বসবাস করতে পারবে না। সন্ত্রাসী ও জঙ্গি সম্পর্কে যেকেনো ধরনের তথ্য পুলিশকে দিতে অনুরোধ করছি।

জঙ্গিবাদ দমনে পুলিশের পদক্ষেপের কথা জানিয়ে পুলিশ প্রধান বলেন, ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব, আলেমদের নিয়ে আমরা বৈঠক করেছি। তারা বলেছে, ইসলামে জঙ্গিবাদের কোন স্থান নেই। এক লাখ আলেমের সাক্ষর নিয়ে কিছুদিনের মধ্যে ঢাকায় জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে নিজেদের অবস্থানের কথা জানাবেন তারা। জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তুলতে হবে।

এসপিপত্মী মিতু হত্যা বিষয়ে আইজিপি বলেন, মিতু হত্যা তদন্তে অগ্রগতি আসেনি। আমরা চেষ্টা করছি। সাম্প্রতিক সময়ে এ ধরনের ৪১টি ঘটনা ঘটেছে। জড়িতদের আইনের আওতায় আসতে পুলিশ কাজ করছে। জঙ্গিবিরোধী সাঁড়াশি অভিযানে সাফল্য আসছে।

এদিকে এর আগে রোববার সকাল ১১টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত চট্টগ্রাম নগরীর দামপাড়া পুলিশ লাইন শুটিং ক্লাব মিলনায়তনে সুধী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আইজিপি বলেন, বাবুল আক্তারের স্ত্রী মিতু হত্যার ঘটনায় কে জড়িত তা এখনো নিশ্চিত না। কোন জঙ্গি সংগঠন বা পুলিশের কাছে ক্ষতিগ্রস্থ কেউ এ ঘটনায় জড়িত থাকতে পারে। তবে যেই জড়িত থাকুক, একজন নিরপরাধ, নিরীহ মহিলাকে হত্যা করা হল, এটা কাপুরুষোচিত কাজ।

পুলিশ প্রধান বলেন, পরিকল্পিতভাবে একের পর এক হত্যাকান্ড হচ্ছে। এক শ্রেণীর লোক বলছে, এ দেশে সংখ্যালঘুরা নিরাপদ না। এরপর দেখা গেল সংখ্যালঘু খুন হল। আসলাম চৌধুরী (বিএনপি নেতা) ইসরাইলের সাথে মিলেছেন, যে দেশটি মুসলমানদের হত্যা করছে। কিছুদিন ধরে হিন্দু পুরোহিত, খ্রিস্টান ধর্মালম্বীরা খুন হচ্ছে। বুদ্ধি খাটান, এটার লিংক কোথায় আছে দেখুন। অবস্থা এমন, ইহুদি খুন করলে ইহুদি পাশে থাকবে, হিন্দু খুন করলে হিন্দু পাশে থাকবে। জঙ্গিবাদের উত্থান হওয়া পাকিস্তান, সিরিয়ার কি অবস্থা দেখুন। রাজনীতি করতে হলে রাষ্ট্রের মানুষের সমর্থন লাগে। এখানে হত্যার রাজনীতি কেন হবে?

তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ের সব ঘটনায় দেশি বিদেশি ষড়যন্ত্র রয়েছে। পেট্রোলবোমা মেরে ক্ষমতায় যেতে যারা ব্যর্থ হয়েছে, তারাই এখন গুপ্তহত্যা করছে। এরমধ্যে দিয়ে তারা দেশকে অস্থিতিশীল করে পাকিস্তান, সিরিয়া বানাতে চেষ্টা করছে। কিন্তু তাদের সে ষড়যন্ত্র সফল হবে না।

তিনি বলেন, কেউ কোন অপরাধ করলে আল্লাহ শাস্তি দেবেন। কার ইবাদত কবুল হবে এটা আল্লাহই জানে। এখন সুন্নি-শিয়ারা ভিন্নভাবে ইবাদত করে। কারো ইবাদত করার পদ্ধতি পছন্দ না হলে তাকে মেরে ফেলতে হবে, তা তো হয় না। পুলিশ পরিবারের উপর হামলা হেেছ। এটা অশনি সংকেত। পুলিশের মনোবল কখনো দুর্বল হবে না। জনগণের সহযোগিতায় জঙ্গিবাদ দমন করা হবে।

জঙ্গিবিরোধী সাঁড়াশি অভিযানে বাণিজ্যের আশঙ্কা করে মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যানের দেয়া বক্তব্যের সমালোচনাও করেন আইজিপি। তিনি বলেন, আমাদের মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যানকে কিছু জিজ্ঞেস করলেই তথ্য না দিয়ে, না বুঝে হুট করে কথা বলে ফেলেন। আজকের পত্রিকায় উনার কমেন্ট দেখেন, পুলিশ নাকি গ্রেফতার বাণিজ্য করছে। পুলিশ গতকাল ৩ হাজার ১১৫ জনকে গ্রেফতার করেছে। এদের কতজন মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি, কতজন জঙ্গি, কতজন মাদক ব্যবসায়ী এই তথ্য উনি নেননি। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়া কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি।

নিরপরাধ কাউকে হয়রানি করা হবে না জানিয়ে আইজিপি বলেন, লিখিতভাবে একাধিকবার নির্দেশনা দিয়েছি, কোন নির্দোষ ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা যাবেনা। কোন নিরপরাধ মানুষকে হয়রানি করলে আমাকে তথ্য দেন, আমি আমার অফিসারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব। ভুলে কেউ নিরপরাধ কাউকে ধরলে, সে ভুল তার। ওই অফিসারের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেব।

গণমাধ্যমের সমালোচনা করে আইজিপি একেএম শহীদুল হক বলেন, ১০ জুন থকে আমরা দেশব্যাপী সাঁড়াশি অভিযান চালাচ্ছি। ভাল কাজ হচ্ছে। কিন্তু কিছু কিছু পত্রপত্রিকা এটাকে নেতিবাচকভাবে দেখছে। পুলিশ কাজ করলেও সমস্যা, না করলেও সমস্যা। পুলিশের কাজ কোনটাই তাদের ভাল লাগেনা। নীরবে কাজ করলে বলে পুলিশ কোন কাজই করেনা। পুলিশ ব্যর্থ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যর্থতা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোন জবাবদিহিতা নাই। পুলিশ যখন সরবে কাজ করে তখন বলে ঢাকঢোল পিটিয়ে কাজ করছে। তাহলে আমরা যাব কোথায় ?’

চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ কমিশনার মোঃ ইকবাল বাহারের সভাপতিত্বে সুধীসমাবেশে বক্তব্য রাখেন- চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার রুহুল আমিন, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন, সাবেক মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ বি এম মহিউদ্দীন চৌধুরী, চট্টগ্রাম রেঞ্জ পুলিশের উপমহাপরিদর্শক মোঃ শফিকুল ইসলাম, বিজিএমইএর প্রথম সহসভাপতি মইনুদ্দিন আহমেদ মিন্টু, চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সভাপতি কলিম সরওয়ার ও সিডিএ চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম প্রমুখ।