চট্টগ্রাম : পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, সাজানো-গোছানো এক কার্যালয়৷ মূল ফটক দিয়ে প্রবেশ করতেই চোখে পড়ে টিনের ছাউনির একটি গোলঘর। তার সামনের উঠোনে খোলা আকাশের নিচে টেবিল-চেয়ার নিয়ে বসে আছেন সীতাকুণ্ডের সহকারী কমিশনার-ভূমি (এসিল্যাণ্ড) আলাউদ্দিন। সেবাপ্রার্থীরা প্রথমেই তার কাছে চলে যাচ্ছেন। এরপর হচ্ছে নামজারি কিংবা মিছ মামলার শুনানি। সমস্যা শুনে বিচার-বিশ্লেষণপূর্বক তাৎক্ষণিক সমাধান দিচ্ছেন এসিল্যাণ্ড। অথবা সোজা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীর কাছে পাঠিয়ে দিচ্ছেন।
এটি সীতাকুণ্ড উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) কার্যালয়ের সোমবারের (২০ নভেম্বর) চিত্র। গণশুনানির সময় আরও উপস্থিত ছিলেন ভূমি কার্যালয়ের অফিস সহকারী সবদের হোসেন, কানুনগো সুব্রত দেওয়ান, সার্ভেয়ার মো. নেজাম উদ্দীন, মো. কামরুল ইসলাম, মো. সজীব হোসেন প্রমুখ।
ভূমিসেবা সহজ করতে, দালালদের দৌরাত্ম্য কমাতে সীতাকুণ্ডের এসিল্যাণ্ড আলাউদ্দিন এমন উদ্যোগ নিয়েছেন। যা প্রতি সপ্তাহের সোম ও বুধবারে নিয়মিত করা হচ্ছে। আর এতে হয়রানি থেকে রেহাই পাচ্ছেন উপজেলার ভূমি সেবাপ্রার্থীরা। সেইসাথে কমছে ভূমি অফিসে দালালদের দৌরাত্ম, বাড়ছে ভূমি অফিসের প্রতি মানুষের আস্থা।
সাধারণত ভূমি অফিসগুলোতে দেখা যায় কর্মচারীরদের ভ্রুক্ষেপহীন আচরণ ও সেবাপ্রার্থীদের প্রতি অবহেলা। কোনও কোনও সময় একটি নামজারি করতেই দিনের পর দিন হয়রানির শিকার হতে হয়। কিন্তু এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম সীতাকুণ্ড উপজেলা ভূমি অফিস। যোগদানের পর থেকে নানা উদ্যোগে ভূমি সেবার চিত্রকে পাল্টে দিচ্ছেন এসিল্যাণ্ড আলাউদ্দিন। সেইসাথে অফিস কক্ষ ছেড়ে খোলা আকাশের নিচে গণশুনানি করে যাচ্ছেন।
গত ২ সেপ্টেম্বর আলাউদ্দিন সীতাকুণ্ডের সহকারী কমিশনার ভূমি হিসেবে যোগদান করেন। যোগদানের পর তিনি সীতাকুণ্ডের সকল সরকারি ১ নম্বর খাস খতিয়ানভুক্ত, অর্পিত, পরিত্যক্ত, সিকস্তি, সায়রাত মহাল সংস্থার জমিগুলোকে চিহ্নিত করতে স্মার্ট ল্যাণ্ড চালু করেছেন। যেই ডাটাবেইসে সকল মৌজার সরকারি সম্পত্তি, এনিমি সম্পত্তি দেখা যাবে। এমনকি কোন সরকারি সম্পত্তির দখলদার কে তাও চিহ্নিত করা যাবে। এর মধ্য দিয়ে দখলদারদের তালিকাও হয়ে যাবে। ওঠে আসবে নদী, নালা, খাল ও সরকারি রাস্তার জায়গা দখলকারীদের চিত্রও।
এছাড়াও ভূমি অফিসে ডিজিটাল রেকর্ডরুম চালু, স্মার্ট ভূমি ম্যাপ, বিএস, আরএস মৌজা ম্যাপ ডিজিটাইজ করার উদ্যোগ নিয়েছেন তিনি। যা হলে ফাইল গায়েবের ঘটনা শূণ্যের কৌটায় নেমে আসবে। একইসাথে স্মার্ট ভূমি ম্যাপের মাধ্যমে অফিসে বসেই জমির অবস্থান, অবস্থা, পরিমাণসহ গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানা যাবে।
এসিল্যাণ্ড আলাউদ্দিন সকল তহসিলে অস্থায়ী জনবল নিয়োগের মাধ্যমে উপজেলার ভূমি সেবা আধুনিকায়ন করার যে সরকারি উদ্যোগ সেটিকে এগিয়ে নিচ্ছেন বেশ জোরেশোরেই। তিনি এর আগে চট্টগ্রামের বোয়ালখালীর সহকারী কমিশনার ভূমি ছিলেন। ২০২২ সালের ৭ আগস্ট তিনি সেখানে যোগদান করেন। সেখানেও ডিজিটাল রেকর্ডরুমসহ নানা জনবান্ধব উদ্যোগের মাধ্যমে প্রশংসিত হয়েছেন তিনি।
সীতাকুণ্ডের সহকারী কমিশনার (ভূমি) আলাউদ্দিন বলেন, হয়রানিমুক্ত সেবা দিতে ভূমি সেবাকে সহজ করাই আমার লক্ষ্য। বর্তমানে ২৮ দিনে ভূমির নামজারি করে দেওয়া হচ্ছে। একটি নির্দিষ্ট সময়ে প্রস্তাব, সার্ভে ইত্যাদি করার জন্য সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে। যেকোনো সমস্যায় সেবাপ্রার্থীরা যেন আমার সাথে সরাসরি যোগাযোগ করেন।